Ajker Patrika

সবজির দেশে গোলাপের সুবাস

শাহীন রহমান, পাবনা 
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫৬
সবজির দেশে গোলাপের সুবাস

সবজিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা পাবনা। তবে সেখানে গোলাপের সুবাস ছড়িয়েছেন তিন ভাই। বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুলের চাষ করে মাত্র দুই বছরে ব্যাপক সফলতাও পেয়েছেন। ছয় বিঘা জমিতে খরচ বাদে প্রতি মাসে তাঁদের লাভ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। ফলে বেড়েছে সবজির দেশে ফুল চাষের সম্ভাবনা। 

গোলাপের সুবাস ছড়ানো তিন ভাই হলেন পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের ভজেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত খন্দকার এ কে আব্দুল্লাহ (বাদশা) ও মৃত রোকেয়া বেগম দম্পতির ছেলে খন্দকার জাফর উল্লাহ (টকুন), খন্দকার শরীফুল আলম রানা ও খন্দকার আশরাফুল বারী শাহীন। 

তাঁরা ছয় ভাই ও পাঁচ বোন। ভাইদের মধ্যে সবার বড় খন্দকার জাফর উল্লাহ, মেজ খন্দকার শরীফুল আলম রানা ও ছোট খন্দকার আশরাফুল বারী শাহীন। 

আলাপকালে জানা গেছে, খন্দকার শরীফুল আলম রানা ১৯৯১ সাল থেকে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তিনিই প্রথম ফুল চাষের কথা ভাবেন। যেহেতু জমি যৌথ মালিকানার সম্পত্তি, তাই তিন ভাই মিলে গোলাপ ফুল চাষের সিদ্ধান্ত নেন। 

তাঁদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে বাড়ির পাশে বিশাল জমি ঘিরে বাঁশবাগান ছিল। সেখান থেকে ছয় বিঘা জমির বাঁশবাগান তুলে দিয়ে ফুল চাষের জন্য প্রস্তুত করেন। প্রথমে গাজীপুরের মাওনা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের নার্সারি থেকে ১০ হাজার গোলাপের চারা কেনেন তাঁরা। এর তিন মাস পর ভারত থেকে ১৫ হাজার এবং তার ছয় মাস পর ভারত থেকে আরও ১১ হাজার গোলাপের চারা সংগ্রহ করেন। এই মোট ৩৬ হাজার গোলাপের চারা দিয়ে ২০২১ সালের ১ আগস্ট তিন ভাইয়ের যৌথ গোলাপ ফুল বাগানের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। 

তাঁদের বাগানে চায়না হাইব্রিড জুমুলিয়া, বিউটি, ভারগো ও বমবম—এই চার জাতের গোলাপের চাষ হচ্ছে। আবার এসব গোলাপ ফুলও হয় বাহারি রঙের। সাদা, হলুদ, কমলা, লাল, শেডপিংক, ডিপ পিংক, সিঁদুর এই সাত রঙের গোলাপ পাওয়া যাচ্ছে এই বাগানে। প্রথমে দুজন কর্মচারী দিয়ে তাঁদের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে গোলাপ বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয় জনের। আর তাঁদের পেছনে মাসিক বেতন বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। 

এ বিষয়ে বড় ভাই খন্দকার জাফর উল্লাহ (টকুন) বলেন, ‘বাগান থেকে বাঁশ বিক্রি করে বছরে আসত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফুল চাষে বিঘাপ্রতি ৬ লাখ টাকা করে ৬ বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। আর এখন সেখানে প্রতি মাসে লাভ হচ্ছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। লোকসান নেই। আয় ভালোই হচ্ছে। বলা যায় ফুল চাষ লাভজনক।’ 

 নিজেদের গোলাপ বাগান থেকে ফুল সংগ্রহের পর সেগুলো বাছাই করছেন তিন ভাই। মঙ্গলবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার ভাজেন্দ্রপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা।  মেজো ভাই খন্দকার শরীফুল আলম রানা বলেন, ‘আমি নার্সারির ব্যবসা করি অনেক বছর ধরে। ঢাকায় আমার ব্যবসা আছে। ভাবলাম গ্রামে ব্যতিক্রম কিছু করা যায় কি না। যেহেতু আমি গাছ ও ফুলপ্রেমিক মানুষ, ভাবলাম ফুলের চাষ করা যায়। সেই ভাবনা থেকে আমার আর দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করি। পাবনায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুলের চাষ আমরাই প্রথম শুরু করলাম।’ 

শরীফুল রানা বলেন, ‘তবে পাবনায় ফুলের বাজারজাতকরণের একটা সমস্যা আছে। আমরা বর্তমানে পাবনা শহর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর উপজেলা এবং ঢাকা শহরে ফুল বিক্রি করছি। আশা করছি ফুলের আবাদ বাড়বে এবং বাজারজাতকরণের সমস্যা কেটে যাবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩ লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি করেছিলাম। এবারের ফেব্রুয়ারিতেও ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।’ 

ছোট ভাই খন্দকার আশরাফুল বারী শাহীন বলেন, ‘গোলাপ ফুল বা যেকোনো ফুল চাষ খরচের তুলনায় লাভজনক। বিশেষ করে অন্য ফসল বা সবজি আবাদের চেয়ে লাভ অনেক বেশি। রোগবালাই না থাকলেও একটু পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। তবে ঠিকমতো যত্ন নিলে পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আমাদের পাশে আছে।’ 

এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনী বলেন, ‘দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে দেশের বাইরে থেকেও আমাদের ফুল আমদানি করতে হয়। ফুল চাষ যেহেতু লাভজনক, সে কারণে পাবনায় ফুলের চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। এতে এখানকার উৎপাদিত ফুল দিয়ে জেলার চাহিদা মেটানো যাবে, পাশাপাশি অন্যান্য জেলায়ও ফুল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’ 

তিন ভাইয়ের গোলাপবাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করছেন তাঁদের বাগানের কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার ভাজেন্দ্রপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা। কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনী আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি বিভাগ তিন ভাইয়ের গোলাপ চাষে সব সময় পাশে থেকে পরামর্শ ও নানা রকম সহযোগিতা করে আসছে। তাঁদের দেখে জেলার অন্যান্য কৃষকও ফুল চাষে আগ্রহী হবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’ 

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পাবনা জেলা সবজিপ্রধান এলাকা হিসেবে সারা দেশে পরিচিত। শুধু তাই নয়, শাকসবজিতে উদ্বৃত্ত জেলা পাবনা। জেলার চাহিদার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি শাকসবজি উৎপাদিত হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘জেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ হয়। এখান থেকে উৎপাদন হয় ৪ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সবজি, যা দিয়ে পাবনা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত