ধূমকেতু দেখানোর আমন্ত্রণ করে কয়েকজনকে দেখাল শুধু চাঁদ, তুমুল হট্টগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ৪১

রাজশাহীতে ধূমকেতু দেখানোর আমন্ত্রণ জানিয়ে হাজারো তরুণ-তরুণীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের বিরুদ্ধে। কিন্তু ধূমকেতু দেখাতে না পেরে চাঁদ দেখানো শুরু করেন আয়োজকেরা। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে আগত অতিথিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, প্রায় ৭১ বছর পর পর ১২ পি/পন্স-ব্রুকস নামের এই ধূমকেতুটি দেখা যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ধূমকেতুটির নাম দিয়েছেন ‘শিংওয়ালা ধূমকেতু’ বা ‘ডেভিল কমেট’। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান, আজ রোববার সূর্যাস্তের সময় থেকে ঘণ্টাখানেক ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে আকাশে অবস্থান করবে।

রাজশাহীতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিরল এই ধূমকেতু দেখার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ধূমকেতু দেখাবে বলে কয়েক দিন ধরে প্রচারও চালায়।

প্রচারে বলা হয়, সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের টি-বাঁধে ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। আগ্রহী সবার জন্য ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি উন্মুক্ত থাকবে। ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বৃহস্পতি গ্রহ এবং চাঁদ দেখার আয়োজনও থাকবে।

এমন আমন্ত্রণ পেয়ে হাজার তিনেক তরুণ-তরুণী আজ বিকেল থেকেই পদ্মার পাড়ে ভিড় জমান। মুহূর্তেই টি-বাঁধ এলাকায় উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। হঠাৎ করে নাম নিবন্ধন শুরু করে আয়োজকেরা। কিন্তু মাত্র ১০০ তরুণ ও ১০০ তরুণীকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও নিবন্ধন ছাড়া টেলিস্কোপে চোখ রাখা যাবে না—   সে কথা আগে থেকে বলা হয়নি। এত কিছুর পরও আয়োজকেরা টেলিস্কোপ দিয়ে ধূমকেতু দেখাতে পারেননি।

পরে কারণ ব্যাখ্যায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আকাশে মেঘ থাকার কারণে ধূমকেতু দেখা যাচ্ছে না। যদিও রাজশাহীর আকাশ অনেকটাই মেঘমুক্ত। টানা তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টির দেখা নেই। আয়োজকেরা ধূমকেতু দেখাতে না পেরে শেষে শুধু চাঁদ দেখানো শুরু করেন। একেকজন দর্শনার্থীকে চাঁদ দেখতে দুই–তিন সেকেন্ড টেলিস্কোপে চোখ রাখতে দেওয়া হয়। বৃহস্পতি গ্রহ দেখানোর কথা বলা হলেও দেখানো হয়নি।

তুমুল ভিড়ের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মশহুরুল আমিনকে দর্শনার্থীদের অনেককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে দেখা যায়। আয়োজকেরা বলেছিলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প চলবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট আগেই টেলিস্কোপ গুটিয়ে নেওয়া হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ধূমকেতু দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।

শুধু এই ধূমকেতু দেখার জন্য রাজশাহী এসেছিলেন ঢাকার আদাবরের ফারুক হোসেন। টেলিস্কোপ গুটিয়ে নিতে দেখে তিনি আয়োজকদের বলেন, তাঁর বাড়ি ঢাকায়। তিনি একটি আইটি সেন্টারে চাকরি করেন। ধূমকেতু দেখানোর আয়োজনের কথা জেনে ছুটি নিয়ে রাজশাহী এসেছেন। কিন্তু ধূমকেতু, চাঁদ কিংবা বৃহস্পতি কিছুই দেখতে পেলেন না! এ নিয়ে ফারুক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের সভাপতি আহসান কবির লিটন ওই যুবকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া খেয়াল করেন। তিনি এগিয়ে এসে তাঁকে শান্ত করেন। ফারুককে বলেন, ‘আপনি ঢাকা থেকে এসেছেন! চলেন আপনাকে চা খাওয়াই।’ তবে ফারুককে তিনি চা পান করাননি। টেলিস্কোপে চোখ রাখারও সুযোগ করে দেননি।

দূর–দুরান্ত থেকে আসা উৎসাহী তরুণ–তরুণীরা আয়োজকদের ব্যর্থতায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকারাজশাহীর নওদাপাড়া থেকে ধূমকেতু দেখতে এসেছিলেন ইয়াজ উদ্দিন নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘টেলিস্কোপে চোখ রাখতে এখানে এসে নাম নিবন্ধন করতে হবে এটা আয়োজকেরা আগে জানাননি। মাত্র ২০০ জনকে সুযোগ দেওয়া হবে সেটিও বলা হয়নি। এখানে কয়েক হাজার দর্শনার্থী এসেছে। আমার মতো বেশির ভাগই ফিরে গেল।’

রাজশাহীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোমা হাসান ধূমকেতুর বদলে চাঁদ দেখে বলেন, ‘এসেছিলাম পোলাও খেতে। সাদা ভাত খেয়ে ফেরত যাচ্ছি! এরা বলেছিল, ধূমকেতু দেখাবে, কিন্তু দেখাল চাঁদ। বৃহস্পতিটাও দেখাল না। টেলিস্কোপে যে চাঁদ দেখলাম তার চেয়ে ভালো আমার মোবাইলেই দেখা যায়।’

পদ্মাপাড়ে ধূমকেতু দেখানোর জন্য কয়েক হাজার তরুণ–তরুণীকে জড়ো করলেও এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশকে আগে থেকে কিছু জানায়নি আয়োজকেরা। ফলে তুমুল ভিড় দেখে ছুটে আসেন একদল পুলিশ সদস্য। তাঁরা জানান, এ ধরনের আয়োজন করতে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন। আয়োজকেরা অনুমতি তো দূরের কথা; পুলিশকে অবহিত পর্যন্ত করেননি। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন আয়োজকদের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।

আয়োজনে এ ধরনের বিশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের সভাপতি আহসান কবির লিটন বলেন, ‘আসলে আমি নাটকের মানুষ। নাটকের আয়োজন করলে মানুষ দেখতে আসে না। এখানে একসঙ্গে এত মানুষ চলে আসবে সেটা বুঝতে পারিনি। তা না হলে আগে থেকেই বলে দেওয়া হতো যে, মাত্র ২০০ জনকেই সুযোগ দেওয়া সম্ভব।’

এরপরেও তরুণ–তরুণীদের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ দেখে খুশি আহসান কবির লিটন। তিনি বলেন, ‘এই আগ্রহটা আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে যখন আয়োজন করব, তখন সবকিছুই বিবেচনা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত