বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের দল গঠনকে গুজব বললেন আসিফ মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ৪৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে নিতান্তই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে যে রিউমার বা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই শুনতে চাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। এটা আমরা আগেও স্পষ্টভাবে বলেছি, এখনই কোনো রাজনৈতিক দল খোলার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যাঁরা আছেন, কারওরই ক্ষমতার অভিলাষ নেই। সবারই পেশাগত জীবন আছে, সবাই সেখানে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দায়িত্বটা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিয়েছে, সেটি যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যে সংস্কারের কথা আমরা বলছি, সেটা ছিল এক দফারই অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, কিন্তু এক দফার যে মূল অংশ, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ—সেই ব্যবস্থার বিলোপের জন্য যে সংস্কারগুলো অত্যাবশ্যকীয় সেগুলো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের জন্য কিংবা ক্ষমতার পালাবদলের জন্য অভ্যুত্থানের জন্য আসেনি। যদি আসত সেটা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আসত বলে আমি মনে করি। এই অভ্যুত্থান হয়েছে স্পষ্টভাবেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের জন্য।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি বিদ্যমান ব্যবস্থা সংস্কার না করে দিয়ে যেতে পারি, আমরা মনে করি যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, যেকোনো রাজনৈতিক সরকার এই অটোক্রেডিক একটা সিস্টেমের মধ্যে সে নিজেও অটোক্রেডিক হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। সে কারণে আমরা মনে করি, এই সংস্কারটা অত্যাবশ্যকীয়। দেশের জনগণ যেভাবে দেশকে গড়তে চাইবে, দেশ পুনর্গঠনের যে প্রস্তাব দেশের মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসবে, সেটার বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব হবে।’

এই সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে বসা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আছেন, তিনি এবং মাননীয় উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের নেতৃত্বে আমাদের একটি টিম করা হয়েছে। তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রেগুলার বেসিসে বসছেন। অফিশিয়াল বসার বাইরেও আন-অফিশিয়ালি যোগাযোগ রাখছেন যাতে আমাদের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। দেশ পুনর্গঠনের এই যাত্রায় রাজনৈতিক দলসহ সকল স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’

গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতা প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত শনিবার আমরা বিজিএমইএতে তিনজন উপদেষ্টাসহ আমাদের পুরো টিম একটা আলোচনায় ছিলাম। রবি থেকে আজ মঙ্গলবার, এই সময়টাতে কিন্তু গত সপ্তাহের তুলনায় যে আনরেস্ট ছিল সেটা ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিছু জায়গায়, খুব স্পেশিফিক দুই-তিনটা কারখানায় এখন আন-রেস্টের মতো সিচুয়েশন আছে। সেটাও আমরা মনে করি দ্রুতই প্রশমন হবে।’

ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমরা যে কমিটি করে দিয়েছি, পর্যবেক্ষণ সেল করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকেরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। আস্থা রেখেছেন বলে তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। সেল খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেবে। আমাদের সেই কমিটি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায়, আশুলিয়ায় শ্রমিক আন-রেস্টের জায়গায় ভিজিট করছে এবং সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছে।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়কেরা মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়া নিয়েও প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমি এবং মাননীয় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকারে এসেছি। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব সেটা পালন করছি। যাঁরা এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা মনে করছেন দেশ পুনর্গঠনের যে লড়াইটা সামনে আছে, সেই লড়াইয়ে দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন করতে হলে তো জনগণের কথা শুনতে হবে। সে কারণে তাঁরা সব জায়গায় টিম করে যাচ্ছেন এবং মানুষের কথা শোনার চেষ্টা করছেন। সেখানে কিছু পরিস্থিতির কথা শুনতে পাচ্ছি।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে এটা পুরোনো কালচার। যেকোনো ভালো উদ্যোগকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু মানুষ তো থাকেই। সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক ভুয়া, অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন। যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা আমরা বলি, তারপরই অনেকে চাঁদাবাজির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এগুলোর অবসান ঘটবে। আমাদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল, তা থাকবে এবং এর মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।’

এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম খান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত