ফেসবুকে জীবনের নিরাপত্তার দাবি আ.লীগ নেতার, পরদিন ঝাড়ুমিছিল

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৭: ০২
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১৭: ৫৭

বগুড়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজা রহমান বুলা ফেসবুক লাইভে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন। এর পরদিনই তাঁর বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। ওই মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইফতেখার হাসান যিশু এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দল থেকে বুলাকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল শনিবার বিকেলে ঝাড়ুমিছিল ও মানববন্ধনে এলাকার নারী-পুরুষ অংশ নেন। তাঁদের অভিযোগ, সুজা রহমান বুলাকে দিনে মানুষ চেনে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। আর রাতের বেলা তিনি আবির্ভূত হন ছিনতাইকারী হিসেবে। তাঁর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বুলা বগুড়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার পাশাপাশি বুলা হাড্ডিপট্টি আন্তজেলা বাস টার্মিনালে মোটর শ্রমিক বিশ্রামাগার কমিটিরও সভাপতি। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজসংলগ্ন কামারগাড়ি এলাকায় তাঁর বন্ধন স্টুডিও অ্যান্ড কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আজিজুল হক কলেজের বিভিন্ন সড়কে তিনি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে তাঁর অফিসে বসে মনিটরিং করেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে বসে থাকেন বুলা। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে তাঁর সহযোগীদের দিয়ে রিকশাযাত্রী কিংবা মোটরসাইকেল আরোহীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন মাদক দিয়ে ছবি তুলে পুলিশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় সর্বস্ব। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশ বহিরাগত হওয়ায় কেউ থানা-পুলিশে অভিযোগ করার সাহস পান না। এভাবে দিনের পর দিন বুলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ লোকজন কয়েক দিন আগে তাঁর প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এলাকাবাসী তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে ‘আত্মগোপনে’ চলে যান সুজা রহমান বুলা।

‘আত্মগোপনে’ থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের শিকার বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইফতেখার হাসান ওরফে যিশু হাজির ভয়ে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মতিন সরকার ও যিশু হাজির লোকজন তাঁর দোকান ভাঙচুর করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

নিজের জীবনের নিরাপত্তা দাবি করে তিনি বলেন, এর আগে তাঁর ভাই সোহাগকে মতিন সরকারের নির্দেশে খুন করা হয়েছে। একইভাবে তাঁকেও খুন করার চক্রান্ত চলছে।

বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইফতেখার হাসান যিশু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বুলা ছিনতাই ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাঁর কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ নেতারা বিব্রত। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার প্রক্রিয়া চলছে। এলাকাবাসী বুলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর আস্তানা ভাঙচুর করে ঝাড়ুমিছিল ও মানববন্ধন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বুলা এলাকায় মানুষের দোকান দখল, মারধর ও চাঁদাবাজি করছিলেন। মাদকাসক্ত হওয়ায় তাঁর মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তিনি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদৎ হোসেন শাহীন ও তাঁর ছেলেকে মারধর করেন। বুলার চিকিৎসা করাতে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের বলা হয়েছে। পরিবার থেকে চিকিৎসার জন্য বুলার ওপরে চাপ সৃষ্টি করার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বুলার বিরুদ্ধে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁর প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেননি। কয়েক দিন আগে শাহিন নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা বুলার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিল। তবে তদন্তকালে অভিযোগকারী থানায় এসে বিবাদটি নিজেরা আপস করে নেওয়ার কথা বলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত