Ajker Patrika

১১৪ কিমি সিঙ্গেল লাইন ভোগাবে রাজশাহীবাসীকে

  • ১৮ মার্চ নতুন সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে।
  • সিঙ্গেল লাইনের কারণে ১০ থেকে ১২টি স্টেশনে পাসিংয়ের কারণে থামতে হয়।
  • আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল লাইনে উন্নীত করতে প্রকল্পই নেওয়া হয়নি।
রিমন রহমান, রাজশাহী 
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ১৬
নবনির্মিত যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল। নতুন সেতুতে প্রতিটি ট্রেন পারাপারে ৩০-৩৫ মিনিট সময় বাঁচবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নবনির্মিত যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল। নতুন সেতুতে প্রতিটি ট্রেন পারাপারে ৩০-৩৫ মিনিট সময় বাঁচবে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যমুনায় আলাদা রেলসেতু চালু হয়েছে। এখন আর যমুনা সেতুতে উঠে ট্রেনকে ধীরগতিতে চলতে হবে না। নতুন রেলসেতুতে গতি নিয়েই ছুটবে ট্রেন। যাতায়াতে এই গতি এলেও উত্তরাঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে থাকল ১১৪ কিলোমিটার রেলপথ। এই রেলপথ এখনো সিঙ্গেল লাইন।

এই রেলপথ ডাবল লাইন না করা পর্যন্ত পাসিংয়ের জন্য স্টেশনে ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তা ছাড়া রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেলপথ ব্রডগেজ হওয়ায় চট্টগ্রামের মিটারগেজ ট্রেন ঢুকতে পারবে না। এই ১১৪ কিলোমিটার রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হলে এ সমস্যা দূর হবে। দীর্ঘদিন ধরে রেলপথটি ডাবল লাইন করার দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী থেকে যমুনা রেলসেতু পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার।

এর মধ্যে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন। আর ঈশ্বরদী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এবং রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন। এই ১১৪ কিলোমিটারে ট্রেন পাসিংয়ের জন্য দাঁড়াবে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ হবে। এ রুটে চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রী জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকা যাতায়াতে ১০ থেকে ১২টি স্টেশনে পাসিংয়ের কারণে থামতে হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় যায় প্রতিটি স্টেশনে। এই রেলপথ ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময়টা লাগবেই।

এ ছাড়া যমুনায় পুরোনো সেতুতে ওঠার আগে ট্রেন থামতে হতো। বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেন পাসিং না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটিকে অপেক্ষা করতে হতো। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট কেটে যেত। নতুন সেতুর কারণে এই অপেক্ষা থাকবে না।

এদিকে জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে রেলওয়ের একটি প্রকল্প আছে, তবে কাজ চলছে না। আর আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রেললাইনটিকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে এ পর্যন্ত কোনো প্রকল্পই নেওয়া হয়নি।

সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘যমুনায় আলাদা রেলসেতু হলো। এর আগে রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন না করে রাজশাহীর মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হলো। যত দিন রাজশাহী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত পুরো রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত না হবে, তত দিন সেতুর সুফল মিলবে না।’

যমুনা নদীর ওপর যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয় ১৯৯৮ সালে। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় ট্রেনযাত্রীদের। এই সমস্যার সমাধানে সেতুটির ৩০০ মিটার অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতু।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যমুনার ওপর নির্মিত নতুন রেলসেতু বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতুর ওপরের দুটি লাইনের মধ্যে উত্তরের লাইন দিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল। বুধবার সকালে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সেতু অতিক্রম করে। পরে ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বুড়িমারী এক্সপ্রেস নতুন এই রেলসেতু অতিক্রম করে। নতুন রেলসেতু খুলে দেওয়ায় যমুনা বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ মার্চ নতুন রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হতে পারে। সেদিন থেকে দুটি লাইনেই চলবে ট্রেন।

নতুন সেতু ঘিরে উত্তরের মানুষের স্বপ্ন বেড়েছে অনেক গুণ। পণ্য পরিবহন হবে, এই অঞ্চলে বাড়বে শিল্পের বিনিয়োগ, একই সঙ্গে রাজশাহী থেকে কনটেইনার ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। পাশাপাশি কক্সবাজার পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

রাজশাহীর রহমান জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘জুট মিলের (পাটকল) যে পণ্যগুলো আমরা রপ্তানি করি, সেগুলো রাজশাহী থেকে একেবারে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। স্টেশন থেকে আবার পরে বন্দরে নিয়ে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ ডাবল হয়ে যাবে। সে জন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলসেতু আমাদের জন্য খুব একটা লাভের হবে না যত দিন না ডাবল লাইন হচ্ছে। ডাবল লাইন হলে মিটারগেজ ট্রেন চলতে পারবে। তখন রাজশাহীর সঙ্গে সরাসরি চট্টগ্রাম বা অন্য সব অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন রেলসেতুর ফলে সেতুর ওপর আর ট্রেনকে ধীরগতিতে চলতে হবে না। সময় অনেকখানি সাশ্রয় হবে। তা ছাড়া সেতুটি ডাবল লাইনে করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুটি ট্রেন পারাপার হতে পারবে। ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন হয়ে গেলে সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন করতে সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫

কোম্পানি দেউলিয়া, দেড় কোটি মানুষের ডিএনএ ডেটার এখন কী হবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত