১২ এপ্রিল বিড়ালদহ গণহত্যা দিবস

প্রতিনিধি, রাজশাহী
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২১, ২১: ১৫

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ-মাইপাড়া এলাকায় ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্থানীয়দের তথ্যমতে, সেদিন প্রায় ২৮০-৩০০ জনকে হত্যা করা হয়। অনেকের লাশ অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরীফ কাজী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করি। পাক হানাদার বাহিনীর লোজকন ১২ এপ্রিল দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় মাইপাড়া ও (পূর্বে সেখানে লোহার ব্রীজ ছিল) কালুসার পুকুরপাড় এলাকা হত্যাযজ্ঞ চালায়।   

পাক বাহিনী দলে দলে সাজোঁয়া যান সেল নিয়ে বিড়ালদহ এলাকায় আসতে শুরু করে। বৃষ্টির মত গুলি আর মটারশেলের আওয়াজে স্তব্দ হয়ে যায় চারপাশ। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আমরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে পালিয়ে আত্মরক্ষা করি। অনেকেই পালিয়ে পদ্মার ধারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও পাক বাহিনীরা হত্যা চালায়। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ। পাক বাহিনীরা কোথাও কোথাও লাশের স্তুপ করে অগ্নিসংযোগ করেছে। ওই রাতে কিছু পাক সেনারা রাজশাহীর দিকে চলে যায়।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বাদশা বলেন, আমাদের জন্য ১২ এপ্রিল একটি মর্মান্তিক দিন ছিল। বিড়ালদহের চারিদিক থেকে পাক বাহিনীরা ঘিরে ফেলে। গুলি ও সেলের আঘাতের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা ওইদিন পিছু হঠতে বাধ্য হোন। আর পাক বাহিনীরা পুরো এলাকা জুড়ে গণহত্যা আর অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। তাদের হাত থেকে পশু-পাখিও রেহায় পায়নি সেদিন। বাতাসে চারদিক শুধু পোড়া লাশের গন্ধে ছড়িয়ে যায়। ঘটনার দুদিন পর বেঁচে যাওয়া লোকজন এলাকায় আসতে শুরু করে। তারা নিজেদের পরিচিত শহীদদের শনাক্ত করে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করেন। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে ১১৮ জনের নাম তালিকা থাকলেও ওইদিন কমপক্ষে ২৮০ থেকে ৩০০ জন শহীদ হয়েছিলেন।

বিড়ালদহ এলাকার আবু হানিফ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গেলো। কিন্তু বিড়ালদহ-বিহারীপাড়া এলাকার গণকবরটি আজও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ওই হত্যাযজ্ঞে সাবেক সাংসদের দাদাও শহীদ হোন। তিনি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। অথচ তিনি ওই গণকবরটি সংরক্ষিত করেননি। উল্টা তিনি গত ছয় বছর আগে বিড়ালদহ মাজারের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেল ভরাট করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন।

বানেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজি সুলতান বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বিড়ালদহ গণহত্যায় শহীদদের নামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বিহারীপাড়া এলাকায় গণকবরটি সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। ১২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওইদিন ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ পাক বাহিনীর হাত থেকে রেহায় পায়নি। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মানুষের বাড়িঘর গরু-ছাগল। ধ্বংসযজ্ঞ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল শত শত মানুষের লাশ। কয়েকদিন পর্যন্ত ওই শহীদদের লাশগুলো শিয়াল-কুকুরে খেয়েছে। আবার কোথাও কোথাও লাশের স্তুপে পাক বাহিনীরা ডিজেল-পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত