২৫ মার্চ ইতিহাসের এক বর্বরোচিত গণহত্যার ক্ষণ। সরকারি আদেশে গণহত্যা কালরাত্রির এ দিবস স্মরণে প্রতীকী ব্ল্যাক-আউট কর্মসূচি ছাড়াও নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ২৫ মার্চ রাত্রিতে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা যাবে না। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ফের আলোকসজ্জা করা যাবে। 
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো সরকারি এই সিদ্ধান্ত না মেনে রাজশাহীর তানোর পৌরসভা কার্যালয় ২৫ মার্চ রাতে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা। 
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৫ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকেই উপজেলা সদরের তানোর পৌরসভা কার্যালয় আলোকসজ্জা দেখতে পাওয়া যায়। এ সময়ে পৌর কার্যালয়ে মেয়রসহ কয়েকজন কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাপুরুষের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়, যা কালরাত হিসেবে পরিচিত। 

 ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ওই দিন থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সরকার সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিনে কোনো আলোকসজ্জা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরও তানোর পৌরসভা কার্যালয়ে আলোকসজ্জা, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে তানোর পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র ইমরুল হককে ২৫ মার্চ রাত ১১টায় কল করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পৌর কাউন্সিলর বলেন, ‘আলোকসজ্জার দায়িত্ব থাকা লোকজন ভুলক্রমে করেছে।’ 
 তবে ২৫ মার্চ রাত্রির মত র্স্পশকাতর বিষয়ে কোন ভুল করার সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে আলোকসজ্জা না করতে মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত খোঁজ-খবর নিয়ে পৌরভবনের আলোকসজ্জা বন্ধ করা হবে।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, ‘পৌর ভবনে আজকের (২৫ মার্চ) রাতে আলোকসজ্জা হয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে। দায়িত্বহীন এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’