Ajker Patrika

টিআর দিয়ে কমিশন বাণিজ্য বাদশার

রিমন রহমান, রাজশাহী
টিআর দিয়ে কমিশন বাণিজ্য বাদশার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গাড়ি-বাড়ি-সম্পদ ফেলে গা ঢাকা দিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। তাঁকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বাদশার বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। এমপি থাকার সময় কমিশন না পেলে তিনি গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় কোনো প্রকল্পই দিতেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ব্যক্তিগত সহকারী কামরুল হাসান সুমনের মাধ্যমে তিনি কমিশন আদায় করে নিতেন। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের ঠিকাদারদের কাছ থেকেও কমিশন নেওয়ার অভিযোগ আছে।

ফজলে হোসেন বাদশা ২০০৮ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে রাজশাহী সদরের এমপি হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকার প্রার্থী হন। ২০১৪ সালে এমপি হন বিনা ভোটে। এরপর ২০১৮ সালে এমপি হলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে নৌকা ধার করেও পার পাননি তিনি। হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি হওয়ার পর থেকে ফজলে হোসেন বাদশা ঘুরেফিরে কিছু ভুঁইফোড় সংস্থাকে তাঁর টিআর বরাদ্দ দিতেন। বিনিময়ে সেসব সংস্থার কাছ থেকে কমিশন নিতেন। আর কমিশন দিয়ে প্রকল্প নেওয়া সংস্থাগুলো বাস্তবে কোনো কাজই করেনি। ফজলে হোসেন বাদশা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদেরও ভুয়া প্রকল্প দিয়ে খুশি রাখেন। ফলে তাঁরাও সরেজমিনে প্রকল্প পরিদর্শন করেননি।

বিষয়টি নিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরেই অনুসন্ধান করে আজকের পত্রিকা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে টিআরের আওতায় ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে তৎকালীন এমপি বাদশার দেওয়া প্রকল্পগুলোর তালিকা নিয়ে যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, ওই তিন অর্থবছরে মোট ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকার প্রকল্প দিয়েছেন বাদশা। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া ১২৬টি নামসর্বস্ব মহিলা সংস্থা এসব প্রকল্প পায়। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় সংস্থাগুলোকে। সংস্থাগুলো তিন বছরে সর্বনিম্ন একবার থেকে ছয়বার পর্যন্ত টাকা পেয়েছে। এক অর্থবছরে একাধিকবার বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও অনেক সংস্থাকেই একাধিক বরাদ্দ দেন বাদশা।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, রঙের মেলা মহিলা সংস্থা নামের একটি নামসর্বস্ব সংস্থা তিন অর্থবছরে ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। প্রতি অর্থবছরেই সংস্থাটিকে দুবার করে অর্থ বরাদ্দ দেন বাদশা। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম দফায় ৪৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়। একই অর্থবছরের দ্বিতীয় দফায় একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদের বরাদ্দ বাদ দিয়ে সংস্থাটিকে ৮৮ হাজার টাকা দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেন বাদশা।

এ ছাড়া তিন অর্থবছরে পাঁচবার করে অর্থ বরাদ্দ পায় দুস্থ মহিলা সমাজকল্যাণ সমিতি, পথশিশুদের শিক্ষা নিকেতন, ইচ্ছামতি, উৎসব, গোধুলি, জোনাকী, মেঘালয়, সন্ধ্যাতারা ও সবুজ মহিলা কল্যাণ সমিতি। চারবার করে অর্থ পেয়েছে দুস্থ ও বেকার মহিলা কল্যাণ সমিতি, আলোকিত নারী, করতোয়া, গন্ধরাজ, ডালিয়া, মধুমতি, শতদল ও সোনামনি মহিলা কল্যাণ সংস্থা এবং ষষ্ঠীতলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা। নিয়ম ভেঙে ষষ্ঠীতলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থাটিকে দুই অর্থবছরেই চার দফায় ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এমপি বাদশার দেওয়া তালিকায় এই সংস্থার নাম বাদ পড়েছিল। পরে রাজশাহী পুলিশ লাইনসের শহীদ মিনার সংস্কারে দেওয়া এক লাখ টাকার আগের প্রকল্প বাতিল করে সেই টাকা এই সংস্থাকে দিতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন বাদশা।

প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়া এক নারী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে জানান, ফজলে হোসেন বাদশা যে প্রকল্প তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিতেন, সেখানে স্থান পেতে হলে গুনতে হতো টাকা। বাদশার ব্যক্তিগত সহকারী কামরুল হাসান সুমন এই টাকা নিতেন।

রাজশাহীর অপর একটি সংস্থার সভানেত্রী বলেন, ‘যা টাকা পেতাম, তার অর্ধেকই চলে যেত। যাঁরা বরাদ্দ দিতেন, তাঁদেরই অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হতো। সেটাও আগাম।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি অর্থবছরে প্রতিটি বরাদ্দের তালিকাতেই বোয়ালিয়া থানা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোনো না কোনো কাজ দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি তালিকাতেই দেখা গেছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) নাম। অবসরে যাওয়া রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক সংগঠনের জেলার সভাপতি। তিন অর্থবছরে সাত দফায় আইডিইবি ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৬ টাকা, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় পাঁচ দফায় ৪ লাখ ৪০ হাজার এবং বোয়ালিয়া থানা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করতেন তৎকালীন এমপি বাদশার নামে।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, বাদশার স্ত্রী তসলিমা খাতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়গুলো দেখাশোনা করতেন। তিনিই নিতেন টাকা। এ ছাড়া বাদশা দলীয় নেতা-কর্মীদের ওএমএসের ডিলার নিয়োগ দিয়ে কমিশন বাগিয়ে নিয়েছেন।

বাদশার ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, সে সময় তাঁর সব মিলিয়ে ১ কোটি ১২ লাখ ৭ হাজার ৬৪০ টাকার সম্পদ ছিল। বাদশার স্ত্রীর নামে ছিল ৫ কাঠা জমি। পরের নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর সম্পদ ও অর্থ অনেকটাই বেড়ে যায়। নগদ অর্থ দাঁড়ায় ১০ লাখ ২০ হাজার ৫৯১ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক এবং নগদ অর্থ মিলে দাঁড়ায় ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫১৫ টাকা। ২০১৮ সালে বাদশার নগদ ও ব্যাংক মিলে অর্থ দাঁড়ায় ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৬ টাকা। দুটি গাড়ির দাম দেখানো হয় ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে এসে বাদশার সম্পদের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এবার হলফনামায় দেখা যায়, তাঁর মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৫ টাকা। নগদ টাকা ছিল ২৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। এর বাইরে একটি ৭০ লাখ টাকার জিপ দেখা যায়।

কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত