স্বামী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তরুণী

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯: ০২
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯: ৩৫

স্বামী-স্ত্রী রাতে একই ঘরে শুয়েছিলেন। স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। স্ত্রী টেরই পেলেন না! এলাকাবাসী ও স্বজনদের মনে এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এ ঘটনায় ছেলেকে হত্যার দায়ে পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্বশুর। গতকাল শনিবার রাতেই স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

আজ রোববার সকালে আদালতের মাধ্যমে স্ত্রীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের বড় মাঝিপাড়া গ্রামে। 

স্বামীর নাম মোস্তাকিম হোসেন (২০)। তিনি জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের বড় মাঝিপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছোট ছেলে। এ ঘটনায় আসামি হলেন মোস্তাকিম হোসেনের স্ত্রী রিয়া পারভীন (১৮)। তিনি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের মানপুর গ্রামের বাবু সরদারের মেয়ে। 

মামলার বিবরণ, পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ঈদুল আজহার দুই দিন আগে মোস্তাকিম হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রিয়া পারভীনের। বিয়ের পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রিয়াকে নিয়ে আসা হয় স্বামীর বাড়ি মাঝিপাড়া গ্রামে। ওখানে দুই দিন থাকেন রিয়া। এরই মধ্যে মোস্তাকিম জানতে পারেন, অন্য এক ছেলের সঙ্গে রিয়ার প্রেমের সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিবাদ আর মনোমালিন্য হয়। দুই দিন পর, রিয়াকে তাঁর বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রিয়া আর স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেননি। বাবার বাড়িতে থাকেন। এভাবেই কেটে যায় প্রায় দুই মাস। এরই মধ্যে ওই দুই পরিবারের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কলহ নিয়ে আপস-মীমাংসা হয়। 

গত শুক্রবার দুই পরিবারের সম্মতিতে রিয়াকে পুনরায় ফিরে আনা হয় স্বামী মোস্তাকিমের বাড়িতে। ওই দিন রাতের খাবার খেয়ে স্বামী-স্ত্রী ঘুমাতে যাওয়ার আগে আবার তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। কারণ স্ত্রী রিয়া মোবাইল ফোনে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের সদস্যরা দুজনকে বুঝিয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে রিয়া শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানান মোস্তাকিম আত্মহত্যা করেছেন। ঘরে তাঁর মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়।

নিহত মোস্তাকিম হোসেনের স্বজনদের আহাজারিএ ঘটনায় গতকাল রাতে মোস্তাকিমের বাবা আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায়  রিয়াকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ রিয়াকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। 

স্বজনদের দাবি, মোস্তাকিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী এক ঘরে ছিলেন। সেখানেই স্বামী গলায় ফাঁস নিলেন, আর স্ত্রী টেরই পেলেন না। চিৎকার-চেঁচামেচি করলেন না। বিষয়টি অবিশ্বাস্য। এ ছাড়া রিয়ার অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। স্বামীর বাড়িতে গিয়েও মোবাইল ফোনে রিয়া তাঁর সেই প্রেমিকের সঙ্গেই কথা বলেছেন, যোগাযোগ রেখেছেন। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তসহ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। 

মোস্তাকিমের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে আমার পুত্রবধূ জড়িত। এ জন্য আমি বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি। আশা করি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার পাব।’ 

জয়পুরহাট সদর থানার ডিউটি অফিসার এসআই জাহিদ রোববার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোস্তাকিমকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে শনিবার রাতে পুত্রবধূ রিয়াকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন। এরপর পুলিশ রিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ (রোববার) সকালে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত