Ajker Patrika

হঠাৎ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, ফ্রিজে নষ্ট হওয়ার ভয়ে কোরবানির দেড় মণ মাংস রান্না করলেন রমজান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ১৯: ৫০
হঠাৎ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, ফ্রিজে নষ্ট হওয়ার ভয়ে কোরবানির দেড় মণ মাংস রান্না করলেন রমজান

রমজান আলীর বাড়িতে ফ্রিজভর্তি কোরবানির মাংস। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ এলই না। রমজান আলী খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, এলাকায় যে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ আর আসবেই না। তাই দুপুরের পর থেকে বাড়ির নারীরা ফ্রিজ থেকে প্রায় দেড় মণ মাংস বের করে রান্না শুরু করেন। 

রমজান আলীর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর কানাপাড়া গ্রামে। পদ্মা নদীর ডান তীরে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়ন সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছিল প্রায় ৯ বছর আগে। সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) কারিগরি সহযোগিতায় চর আষাড়িয়াদহে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা আভা। প্ল্যান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্ট। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল এই গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘প্রথম দিকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দু-এক থেকে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোনো রকমে ফ্রিজটা চলত। কাল থেকে একেবারেই বন্ধ। ফ্রিজের ভেতর প্রায় ৬০ কেজি মাংস ছিল। এগুলো বের করে রান্না করা হচ্ছে। খাওয়া যাবে কি না জানি না।’ 

আভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ দিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহসহ পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসান হচ্ছিল বলে আভার দাবি। 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এই প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রণোদনাও দেয়। আর কারিগরি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এই সংস্থাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, প্ল্যান্টটি চালালে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা করে লাভ করতে পারবে আভা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। 

এই প্ল্যান্টে মোট ৫৯৪টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা আছে। এগুলোর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়েছিল ১৪৮ দশমিক ৫০ কিলোওয়াট। প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে বর্তমানে মাত্র ৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। এই বিদ্যুতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মিটারে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে গতকাল এই গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমানের গ্রামেই এই গ্রিডটি স্থাপন করা হয়।গতকাল দুপুরে এই ইউপি সদস্যকে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে সিদ্দিকুর রহমান নিজেই ফোন করে বলেন, ‘বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই বলে প্রতিবেশীর নিজস্ব সৌরবিদ্যুতে মোবাইল চার্জ দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ঈদের পর এভাবে বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ফ্রিজের কোরবানির মাংস বের করে রান্না করতে হচ্ছে। চরের বেশির ভাগ মোবাইল চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজ-টিভিগুলোর এখন কী হবে কেউ জানে না। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মিটার নিতে হয়েছে। সেটাও এখন লস।’ 

জানা গেছে, আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু থেকেই কর্মরত ছিলেন মিল্লাত হোসেন। এ ছাড়া আরও দুজন কর্মচারী সেখানে থাকতেন। গতকাল মিল্লাত হোসেন এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে আসেন। যোগাযোগ করা হলে মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘চাহিদা ১২০ কিলোওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। সে কারণে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।’ 

আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টআভার মহাব্যবস্থাপক শালেউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘চাকরি ছাড়তে হলে অন্তত এক মাস আগে জানাতে হবে। তাহলে কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুন লোক দেবে এবং কার্যক্রম চালু রাখবে। কিন্তু মিল্লাত চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েই প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘চাহিদামতো বিদ্যুৎ দিতে না পারার কারণে লোকজন মন্দ কথা বলতেন। তাই হয়তো মিল্লাত চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’ 

শালেউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই প্ল্যান্টটি আসলে চালানো সম্ভব না। ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়েও প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল। অথচ কার্যক্রম শুরুর আগে ইডকল যাদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিল, তারা বলেছিল মাসে ১৫ লাখ টাকা লাভ হবে। লাভ তো দূরের কথা, পরিবেশবান্ধব এই প্ল্যান্টে সৌরবিদ্যুৎ ছাড়াও ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালিয়েও চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। বিষয়টি স্রেডা এবং ইডকলও জানে।’ 

তিনি বলেন, ‘সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দুই বছর আগে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সঙ্গে আভার চুক্তি হয়েছে। কথা ছিল, সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে নেসকো পদ্মার ওপারের চরে বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। তারপর তারাই চরবাসীকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেবে। আর সৌর প্ল্যান্টে যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেটা আভা নেসকোর কাছে বিক্রি করবে। কথা ছিল, এই চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে নেসকো তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নেসকো কার্যক্রম শুরু করেনি।’ 

গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কালকেই আমি শুনেছি যে আভা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এতে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত যেন এই প্ল্যান্ট চালু করা হয় তার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাও যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়। তা না হলে চরের জীবন-জীবিকা আবার থমকে যাবে।’ 

নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগ যুগ চলবেও না। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলে নেসকো বিনা মূল্যেই আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। আভার সঙ্গে এ রকম কোন চুক্তিও ছিল না। আভা সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আমাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর দেখি কী করা যায়!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুই ধান ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ও কৃষকের তিনটি গরু চুরি

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
দুই ধান ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ও কৃষকের তিনটি গরু চুরি

নওগাঁর রাণীনগরে পৃথক তিনটি চুরির ঘটনায় দুই ধান ব্যবসায়ীর ১০ লাখের বেশি টাকা এবং এক কৃষকের গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

উপজেলার একডালা গ্রামের মসলিম উদ্দীনের ছেলে এবং আবাদপুকুর হাট এলাকার হক ট্রেডার্সের মালিক মোজাম্মেল হকের ছোট ভাই খাইরুল ইসলাম জানান, সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবার আবাদপুকুর হাট বসে। রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে হাটসংলগ্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধান কেনাবেচা করছিলেন তাঁরা। এ সময় ধান বিক্রেতাদের ভিড়ের সুযোগ নিয়ে চোরেরা অফিসের ক্যাশ ড্রয়ার ভেঙে নগদ ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

অন্যদিকে উপজেলার বড়িয়াপাড়া গ্রামের ভোলা সরদারের ছেলে এবং বড়িয়াপাড়া ট্রেডার্সের মালিক ধান ব্যবসায়ী ফরিদ সরদার জানান, রোববার ভোরে মোটরসাইকেলে করে আবাদপুকুর বাজারে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান তিনি। ধান কেনার টাকাভর্তি একটি ব্যাগ মোটরসাইকেলে রেখে ঘরের তালা খুলতে যান। তবে তালার ভেতরে কে বা কারা কিছু ঢুকিয়ে রাখায় তালা খুলছিল না। পরে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙে মোটরসাইকেলের কাছে ফিরে দেখেন, ব্যাগসহ ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা চুরি হয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল রাতে উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক মারুফ হোসেনের গোয়ালঘরের তালা কেটে তিনটি গরু চুরি করা হয়েছে। মারুফ হোসেন ওই গ্রামের আজিজার রহমান ফুলবরের ছেলে। তিনি জানান, গতকাল রাতে গোয়ালঘরে চারটি গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে উঠে দেখেন, চারটির মধ্যে তিনটি গরু নেই। চুরি হওয়া গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা।

এ বিষয়ে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, চুরির ঘটনাগুলোর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাবিতে ৬ ডিনের চেম্বারে তালা, দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হয়েছেন বলে জানালেন জিএস আম্মার

রাবি প্রতিনিধি  
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৫
রাবিতে আওয়ামীপন্থী ডিনদের চেম্বারে তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীদের একাংশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাবিতে আওয়ামীপন্থী ডিনদের চেম্বারে তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীদের একাংশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের চেম্বারে তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ভবনে এই ডিনদের চেম্বারে তালা দেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সময়সীমা অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর ডিনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ ও উপাচার্য ড. সালেহ হাসান নকীবের সিদ্ধান্তে তাঁদের মেয়ার বাড়ানো হয়। তবে তাঁদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) জিএস সালাউদ্দিন আম্মার।

আম্মার বলেন, ‘জুলাইয়ের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষকদের ডকুমেন্টসসহ আমরা তালিকা করেছি। আওয়ামীপন্থী যে ডিনরা আছেন, সেই ডিনদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তাঁদের সবাইকে কল দেওয়া হয়, তবে তাঁদের কেউই ক্যাম্পাসে নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছুটি ও ক্লাস ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ এবং হত্যা মামলার আসামি হয়েও শিক্ষক হিসেবে বহাল থাকা আমরা মেনে নিতে পারি না। রাজনৈতিক পরিচয় নয়, ন্যায়বিচারই আমাদের দাবি। আমরা অন্যদের সাথে মিলিয়ে চূড়ান্ত এই তালিকা প্রকাশ করব এবং সেই অনুযায়ী তাদের পদত্যাগে বাধ্য করাব।’

পরে আম্মার ফেসবুক পোস্টে বলেন, আওয়ামীপন্থী ৬ জন ডিনের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা দায়িত্বে থাকবেন না বলে ভিসিকে জানিয়েছেন। সাবেক ভিসি, প্রো-ভিসি ক্লাস নেওয়ার খবর পেয়ে তিনি গিয়েছিলেন, তাঁরাও একপ্রকার পলাতক। জুলাইয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করা শিক্ষকদের তালিকা করছেন বলেও জানান আম্মার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি আকিল বিন তালেব বলেন, ‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শহীদ হাদি ভাই আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন, আমাদের সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসরেরা আজও ক্যাম্পাসে নিরাপদ, অথচ আমাদের বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া মানুষেরা রাস্তায় গুলি খেয়ে জীবন দিচ্ছে। তাই আমরা চাই, কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর যেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে না পারে। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রাবি প্রশাসন আসলেও বিপ্লবের স্পিরিট তারা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

আকিল বিন তালেব আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ব্যানার ধরা ফ্যাসিস্টের দোসরদের তারা এখনো বিচার করতে পারেনি। আমরা প্রশাসনকে সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে পারেনি, তাই আমরা অভ্যুত্থানের শক্তিরা আজ এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে বাধ্য হচ্ছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিনদের মেয়াদ শেষ হলেও সমাবর্তন, সামনে ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা কারণে তাঁদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সামনে পরীক্ষা রেখে একজন তাঁদের অব্যাহতি দেওয়াটা অনেক জটিলতা তৈরি করবে। তবে উপাচার্য স্যার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।’

এর আগে গতকাল শনিবার রাতে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: মামলা হয়নি, নাশকতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ মেলেনি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের ঘরে আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি পুলিশ। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি।

আগুনে পুড়ে সাত বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু এবং পরিবারের তিন সদস্য দগ্ধ হলেও ঘটনাটি নাশকতা কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।

গতকাল শনিবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঘর পোড়ার যে তথ্য ছড়িয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো ‘মব’ বা সংগঠিত দুর্বৃত্তের সংযোগের আলামতও পুলিশ পায়নি।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছি। তবে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার কোনো আলামত আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন দাবি করেছেন, ‘ঘরের দুই দরজাই বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। আগুনের তীব্রতায় আমি টিনের বেড়া ফাঁকা করে স্ত্রী ও বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বের হতে পারলেও ছোট মেয়ে আয়েশাকে বাঁচাতে পারিনি। ধোঁয়ায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।’

গত শুক্রবার গভীর রাতে চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায় এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সাত বছরের আয়েশা আক্তার পুড়ে মারা যায়। দগ্ধ বেলাল হোসেন সদর হাসপাতালে এবং তাঁর দুই মেয়ে বীথি আক্তার (১৭) ও স্মৃতি আক্তার (১৪) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। বাইরে থেকে দরজায় তালা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে কোনো তথ্য বা প্রমাণ থাকলে তা সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিএসএফ সদস্যকে আটক করল বিজিবি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে সীমানা বেড়ার ১০০ গজ বাংলাদেশের ভেতর থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে ওই বিএসএফ সদস্যকে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা বিজিবি ক্যাম্পে হেফাজতে রাখা হয়। এ ঘটনায় বিজিবি পতাকা বৈঠকের জন্য বিএসএফকে আহ্বান জানিয়েছে।

বিজিবি ও স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ডিএএমপি প্রধান পিলার ১ নম্বরের উপপিলার ৭ নম্বর-সংলগ্ন দহগ্রাম ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকা। অপর পাশে রয়েছে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের কচুলিবাড়ী থানার কারেঙ্গাতলি এলাকা। রোববার ভোরে ভারতের ১৭৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পের টহল দলের সদস্য বেদ প্রকাশ ভারতীয় শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ১০০ গজ ভেতরে ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাঁকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। এ সময় বিএসএফ সদস্যের ব্যবহৃত একটি অস্ত্র (শটগান), দুটি গুলি, একটি ওয়্যারলেস সেট ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

আঙ্গোরপোতা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েব সুবেদার রফিকুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে বিএসএফ সদস্য কনস্টেবল বেদ প্রকাশ বলেছে কুয়াশায় গরু পাচারকারীদের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে ভুল করে বাংলাদেশে ঢুকেছে। আটককৃত বিএসএফ সদস্যের অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্য সরঞ্জামাদিসহ আঙ্গোরপোতা ক্যাম্পে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করার কথা রয়েছে। বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে ওই বিএসএফ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করেছে এবং তাঁকে ফেরতের অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি ১৯৭৫ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই বিএসএফ সদস্যের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

ভালুকায় কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের রাশিফল: ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলুন, বড় অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত