হাত-পা বেঁধে বস্তায় ঢুকে পানিতে ভেসে থাকেন মোসাদ্দেক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১৮: ৪৪

হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা। পুরো শরীর ঢোকানো বস্তার ভেতরে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভাসতে পারেন রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বাচ্চু। শুধু তা-ই নয়, হাত-পা না নাড়িয়ে পানির ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে থাকতে পারেন তিনি। হাত-পা বেঁধে দিলেও কাটতে পারেন সাঁতার। ৭১ বছর বয়সী মোসাদ্দেক রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া মহল্লার বাসিন্দা।

মোসাদ্দেকের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামে। ছোটবেলায় ওই গ্রামেই পদ্মার একটি নালায় সাঁতার শেখেন তিনি। ১৯৮১ সালের দিকে মোসাদ্দেক যখন যুবক, তখন হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটা এবং বস্তায় ঢুকে ভেসে থাকার কৌশল রপ্ত করেন। চাকরির সুবাদে রাজশাহী চলে আসার পর আর সেভাবে সাঁতার কাটা হতো না। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর কয়েক মাস ধরে আবার তাঁর সাঁতারের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। সাঁতারের পাশাপাশি ছেলেবেলায় ফুটবল, ক্রিকেট ও হ্যান্ডবল ভালো খেলতেন মোসাদ্দেক।

সম্প্রতি মোসাদ্দেক হোসেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদের কাছে গিয়ে তাঁর সাঁতারের দক্ষতার কথা জানান। তখন জেলা প্রশাসক তাঁর সাঁতার দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহী জেলা সুইমিং পুলে মোসাদ্দেক হোসেন জেলা প্রশাসককে সাঁতার কেটে দেখান। জেলা প্রশাসক মোসাদ্দেকের পানিতে ভেসে থাকা এবং হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটা দেখেন। তবে তিনি নিরাপত্তার কথা ভেবে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ঢুকে ভেসে থাকা দেখতে চাননি। যদিও মোসাদ্দেকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলছিলেন, ‘ভয় নেই।’

বস্তায় ভেসে থাকা মোসাদ্দেকজেলা প্রশাসক চলে যাওয়ার পর মোসাদ্দেক হোসেন বস্তায় ঢুকেও পানিতে ভেসে থাকা দেখান। ওই সময় পানিতে নামানোর আগে মোসাদ্দেকের হাত-পা নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর তাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় প্লাস্টিকের বস্তায়। মাথার ওপর বস্তার মুখও বেঁধে দেওয়া হয়। শ্বাস নেওয়ার জন্য মুখের সামনের অংশের বস্তাটুকু কেটে দেওয়া হয়। তারপর কয়েকজন মিলে বস্তাসহ মোসাদ্দেককে পুলের পানিতে ভাসিয়ে দেয়। নিরাপত্তার জন্য সুইমিং পুলের কয়েকজন সাঁতারু তাঁকে ঘিরে রাখেন। তবে কারও সহায়তা প্রয়োজন হয়নি মোসাদ্দেকের। তিনি ভেসে থাকেন পানিতে। প্রায় ৩০ মিনিট পর উপস্থিত দর্শকেরা মোসাদ্দেককে তুলে আনতে বলেন। তখন কয়েকজন মিলে তাঁকে পানি থেকে তুলে আনেন। মোসাদ্দেকের দাবি, এভাবে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভেসে থাকতে পারবেন।

মোসাদ্দেক বলেন, ‘যুবক বয়সে গ্রামে নিজেদের মধ্যে সাঁতারের প্রতিযোগিতা হতো। তখনই আমি হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতাম। আমার সঙ্গে যারা হাত-পা না বেঁধে সাঁতার কাটত, তারাও আমার সঙ্গে পারত না।’ তিনি বলেন, ‘একটু ব্যতিক্রম না হলে আমার সাঁতার মানুষকে আকর্ষণ করবে না। কেউ সাঁতার দেখবেও না। তাই একটু আকর্ষণীয় করতে গিয়েই আমি এভাবে সাঁতার শিখেছি। প্রথমবার বস্তায় ঢুকেছিলাম ১৯৮১ সালের ২৯ মে।’

হাত-পা না নাড়িয়ে পানিতে ভেসে আছেন তিনিমোসাদ্দেকের এই সাঁতার দেখতে এসেছিলেন গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয়। সম্প্রতি একদিন দুজন স্টেডিয়ামে বসে গল্প করছিলাম। তখন তিনি বলেন, মাঠ থেকে তিনি বল মেরে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের বাল্ব ভেঙে দিতে পারবেন। সারা দিন হ্যান্ডবল খেললেও বল পড়বে না। হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে পারেন। বস্তায় ঢুকেও ভেসে থাকতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাঁর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। তারপর পরীক্ষা করতে গত ১৬ মে পদ্মা নদীতে নিয়ে যাই। সেখানে স্ত্রী মমতাজ বেগমের উপস্থিতিতে হাত-পা বেঁধে নদীর উজানে সাঁতার কাটেন মোসাদ্দেক। হাত-পা বেঁধে বস্তায় ঢুকিয়ে দেওয়া হলেও তিনি ভেসে থাকেন।’

মোসাদ্দেকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের আগে তিনি এভাবে সাঁতার কাটতেন। সকাল ৭টায় পানিতে নেমে সন্ধ্যা ৭টায় উঠেছেন। বিয়ের পর আর সাঁতার কাটতেন না। কিছুদিন ধরে তিনি আবার সাঁতার কাটা শুরু করেছেন। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তায় ঢুকে তিনি পানিতে ভেসে থাকলেও ভয় লাগে না। কারণ তিনি এটা পারেন।’

সাঁতারে নামার আগে মোসাদ্দেককে বস্তায় ভরা হয়জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এদিন নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁর উপস্থিতিতে মোসাদ্দেককে বস্তায় ঢুকে পানিতে ভাসতে দেননি। তবে তাঁর পানিতে ভেসে থাকা এবং হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটা উপভোগ করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এই বয়সে মোসাদ্দেক যা দেখালেন তা প্রশংসনীয়। আমরা মনে করি, সাধারণ সাঁতারুদের চেয়ে তিনি অসাধারণ। ৭১ বছর বয়সেও যদি তিনি এভাবে সাঁতার কাটতে পারেন, তাহলে যুবক বয়সে আরও ভালো পারতেন নিশ্চয়ই। এখন তাঁর বয়স হয়েছে, তিনি যেন ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করেই সাঁতার কাটেন। আমরা যারা দেখব, তাঁকে উৎসব দেব। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থাটাও বিবেচনায় রাখব।’

মোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে সফিউল্লাহ সুলতান রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। মেয়ে মুসলিমা খাতুন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা। মোসাদ্দেক হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের প্রধান সহকারী ছিলেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে অবসর নিয়েছেন। মোসাদ্দেকের সাঁতারের দক্ষতা একদিন গিনেস বুকে জায়গা করে নেবে, এটি তাঁর আশা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত