মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছেন গরিব বিধবা মায়ের ৩ যমজ সন্তান

ইমদাদুল হক ইমরান, ধুনট (বগুড়া) 
Thumbnail image

মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান তিন যমজ ভাই। ২০০৯ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান তাঁরা। এরপর তিন যমজ ছেলেসহ ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে মা আর্জিনা খাতুনের জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। সংসার চালাতে একাই ঘানি টানতে শুরু করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেই তিন যমজ ভাই পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

তিন যমজ ভাইয়ের মধ্যে মাফিউল হাসান গত বছর ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং এ বছর সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেল ও রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। তিন যমজ ভাই মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ায় এলাকায় আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে।

যমজ তিন ভাই ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ী গ্রামের প্রয়াত স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এর আগে, ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি গোলাম মোস্তফা ও আর্জিনা খাতুন দম্পতির একসঙ্গে তিন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এছাড়া দম্পতির আরও এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।

তিন যমজ ছেলের মা আর্জিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওদের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমার কঠিন জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। সন্তানদের লেখাপড়া করাতে গিয়ে কী পরিমাণ কষ্ট করতে হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। বাবার বাড়ির জমি, স্বামীর জমি বিক্রি করে ওদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। ডাক্তার বানানোর জন্য অবশিষ্ট যে জমি আছে তাও বিক্রি করে দেব।’

আর্জিনা বেগম আরও বলেন, ‘আজ যখন ওদের দেখতে বাড়িতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসছে তখন গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। আমার কষ্ট সার্থক মনে হচ্ছে। ওরা যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে সবার কাছে সেই দোয়া চাই।’

ধুনট সরকারি নইম উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তারা মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এক সঙ্গে তিন ভাই স্কুলে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়েছে। তারা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় শিক্ষকরাও খুশি। এটা স্কুলের জন্য গৌরবের বিষয়। প্রত্যাশা করছি তারা যেন সাফল্যের সঙ্গে মেডিকেল শিক্ষাজীবন শেষ করে।’

তিন ভাই যমজ মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান আজকের পত্রিকাকে জানান, শিশুকালে বাবাকে হারানোর পর গ্রামের বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকে পড়েছেন। তিনজনই ধুনট সরকারি নইম উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

সাফিউল হাসান বলেন, ‘মা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপাড়ার খরচ জুগিয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই আমাদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

রাফিউল হাসান বলেন, ‘আমাদের তিনজনের মনে চিকিৎসক হওয়ার সুপ্ত বাসনা ছিল। আমাদের প্রাথমিক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মানুষের সেবা করার জন্য আমরা যেন চিকিৎসক হতে পারি সে জন্য সবার কাছে এ দোয়া চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত