Ajker Patrika

ট্রাকচালকের পায়ে গুলি, সিরাজগঞ্জের ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
Thumbnail image
মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম ও মো. এনামুল হক। ছবি: সংগৃহীত

ট্রাকচালককে পায়ে গুলি করার অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার সাবেক ওসিসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার নামে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সলঙ্গা আমলি আদালতের পেশকার আল-আমিন মামলা করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মামলাটি এফআইআর (রুজু) করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার সকালে বিষয়টি জানতে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে মামলার প্রধান আসামি উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মুহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাকচালক যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ট্রাকচালক আন্তজেলা ডাকাত দলের সর্দার। তাঁর বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’

জানা গেছে, ভুক্তভোগী ট্রাকচালক রোকন মোল্লা (৩৬) পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার নেছড়াপাড়া গ্রামের রহমত মোল্লার ছেলে রোকন মোল্লার ছেলে। ৫ জানুয়ারি তিনি বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা আমলি আদালতে মামলাটি করেন। আদালত মামলার শুনানি শেষে মেডিকেল সনদ দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের পরিচালককে নির্দেশ দেন। পরে ২৭ জানুয়ারি আদালতে মেডিকেল সনদ দাখিল করলে বিচারক কে এম শাহরিয়ার মামলাটি নথিভুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মডেল থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি মো. এনামুল হক, সলঙ্গা থানার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা শেখ তাজ উদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর আব্দুস ছালাম, সলঙ্গা থানার সাব ইন্সপেক্টর মুনছুর রহমান ও সলঙ্গা থানার এএসআই (উপপরিদর্শক) মো. কুদ্দুস।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ মে বাদী ট্রাকের মালামাল পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ি পাবনায় ফিরছিলেন। ট্রাকটি নিয়ে তিনি ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার কাওয়াক মোড়ে যখন পৌঁছান, তখন বৃষ্টির কারণে মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকায় উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদের ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে তাঁর গাড়ির ধাক্কা লাগে। এ সময় ওসি তাঁর কোমরে থাকা রিভলবার বের করে গুলি করার জন্য ট্রাকচালকের দিকে তাক করেন। ট্রাকচালক ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালান। ওসিও ফোর্স নিয়ে তাঁর পেছনে ধাওয়া করেন।

এ পর্যায়ে ট্রাকচালক সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় উল্লাপাড়া থানার ওসির নির্দেশে সলঙ্গা থানার ওসি ও ফোর্স ট্রাকচালককে ধাওয়া করে। পরে সলঙ্গা থানার হরিণ চড়া এলাকায় ট্রাকচালককে আটক করে। এরপর রাস্তার পাশে পুকুরের পানিতে তাঁকে ডুবানো হয়। পুকুর থেকে ট্রাকচালককে তুলে নিয়ে এলে সলঙ্গা থানার ওসি উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসিকে বলেন, স্যার শুট করেন। তখন উল্লাপাড়া থানার ওসি তাঁর রিভলবার দিয়ে ট্রাকচালকের ডান পায়ে গুলি করেন। তিনি চিৎকার করলে সলঙ্গা থানার সাব ইন্সপেক্টর মুনছুর রহমান গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলেন। পরে সলঙ্গা থানায় নিয়ে ট্রাকচালককে মারপিট ও নির্যাতন করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ট্রাকচালকের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও ট্রাকচালকের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে তাঁর গুলিবিদ্ধ পা কেটে ফেলা হয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশের নির্যাতনের সময় ট্রাকচালক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় পুলিশ নিজেদের রক্ষায় অস্ত্র, ডাকাতি ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তিনটি মামলা করেন। ওই তিন মামলায় ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে ৫ মাস ১২ দিন পর উল্লাপাড়া মডেল থানার একটি মামলায় ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কারাবাসের পর গত ১৯ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। যে কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে।

ট্রাকচালক রোকন মোল্লা বলেন, ‘উল্লাপাড়া থানার ওসির নির্দেশে আমার পায়ে গুলি করা হয়। এ কারণে আমার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে মুখ বেঁধে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশের তিনটি মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। ডিসেম্বর মাসে কারাগার থেকে আমি মুক্তি পেয়ে মামলা করেছি। আমার ওপর নির্যাতনের বিচার চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত