প্রধান কর্মকর্তার ‘গাফিলতিতে’ বালিয়াডাঙ্গী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ মাস বেতন বন্ধ

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ২২
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ৫২

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৭০ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। যোগদান করা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন প্রধান কর্মকর্তা পূর্বের কর্মস্থল থেকে বেতনের প্রত্যয়নপত্র না নিয়ে আসায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বেতন-ভাতা না পাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো অফিসে আসছেন না। এতে ভেঙে পড়েছে সেবাদান কার্যক্রম। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অভিযোগ, গত মাসে যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাকিলা আক্তার অবহেলা করে পূর্বের কর্মস্থল থেকে বেতন-ভাতার প্রত্যয়নপত্র (এলপিসি) নিয়ে আসেননি। এতে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবে শাকিলা আক্তারের দাবি, শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র অনলাইনে আসলেও হার্ডকপি আসেনি। বেতন-ভাতা প্রদানে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে তাঁর কোনো হাত নেই।  

এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজায় বেতন-বোনাস না পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ১৩ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী চিকিৎসক ও কর্মচারীর পরিবারের দুর্গাপূজার আনন্দ ম্লান হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সনাতন ধর্মের কয়েকজন কর্মচারী জানান, উচ্চপদে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের টাকা-পয়সার অভাব নেই। এদিকে-ওদিক করে তাঁরা চলতে পারেন। কিন্তু কর্মচারীদের দিনশেষে বেতন-বোনাসের টাকা দিয়ে চলতে হয়। এবার পূজায় বাচ্চাদের আবদার মিটাতে না পেরে খুবই কষ্ট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমাসের বদলির পর গত ১ সেপ্টেম্বর ডা. শাকিলা আক্তারকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি বরগুনার তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ওই আদেশে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও তিনি কর্মস্থলে যোগ দেন ১৩ সেপ্টেম্বর। 

হাসপাতালের কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে জরুরি বিভাগ, আন্ত ও বহির্বিভাগে অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত বসছেন না চিকিৎসকেরা, ঘুরে যেতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের লেদু রাম স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে বেলা ২টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ‘অফিসারের দরজাখান বন্ধ, এইতানে বাকি ডাক্তারদের কুনো খবর নাই। দিরা ঘণ্টা বসে থাকে বাড়িত যাচু, কাইল ঠাকুরগাঁও যাবা হবে, এ ছাড়া আর কুনো রাস্তা নাই।’ 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১১ জন চিকিৎসক, ৩৪ জন নার্স ও ১২৫ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা বন্ধের কারণে অনেক কর্মচারীর পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে হিসাবরক্ষণ অফিসে চলতি মাসের বিল জমাদানের কথা থাকলেও এলপিসির কারণে সেটি জমা হয়নি। তাই অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাবরক্ষক ওয়ালিউল্লাহ লিটু বলেন, ‘শেষ বেতনের প্রত্যয়নের (এলপিসি) অনলাইন কপি আসলেও হার্ডকপি হাতে আসেনি। ফলে পূজার আগে বিলটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া উপায় নেই।’ 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার গতকাল রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অফিসে নিয়মিত না আসার অভিযোগ মিথ্যা। তা ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রধান কর্মকর্তার বদলি হলে বেতন-ভাতা নিয়ে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, আমাদের বেলাও তাই হয়েছে। ১৭০ জনের বিল-বেতন বন্ধ, বিষয়টি খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। তা ছাড়া অনলাইন এলপিসি দিয়ে হিসাবরক্ষণ বিল ছাড় দিচ্ছে না।’

তবে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা। 

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ফাজলামি শুরু করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। আমি অনেকবার বলেছি, এখন আবারও বলতেছি। কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রাখার অধিকার কারও নেই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত