সমকামিতার ফাঁদ: নিখোঁজের ৬ মাস পর নাটোর থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

নুরুল আমিন হাসান, নাটোর থেকে
Thumbnail image

গত বছরের ১১ নভেম্বর নিখোঁজ হন রুবেল উদ্দিন। ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর নাটোর সদর থানায় অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মামলা করেন রুবেলের বাবা। নিখোঁজের ৬ মাস ৯ দিন পর অবশেষে আজ শনিবার রাতে রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নাটোর জেলার সদর উপজেলার ছাতনি ইউনিয়নের রুয়েরবাগ এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের পারিবারিক কবরস্থানের পাশ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কবরস্থানের পাশে রুবেলের মরদেহ মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়েছিল। 

নিহত রুবেল উদ্দিন নাটোর সদর উপজেলার আমহাটি গ্রামের মো. রুপিজ উদ্দিনের ছেলে। 

মরদেহ উদ্ধারের সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটিএম মাইনুল ইসলাম (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম (অপস অ্যান্ড ক্রাইম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি (সদর সার্কেল) ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আব্দুল মতিন ও থানা–পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

ডিবির ওসি মো. আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের ১১ নভেম্বর নিখোঁজ হন রুবেল উদ্দিন। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর নাটোর সদর থানায় অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ছিলেন রুবেলের বাবা। 

এদিকে দক্ষিণখানের আশকোনার মেডিকেল রোড থেকে আমির হোসেন ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। পরে আমির হোসেনের মোবাইল নম্বর থেকে তাঁর বোনের নম্বরে অপহরণকারীরা ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই বিল্লাল প্রথমে একটি জিডি এবং পরে গত ১৩ এপ্রিল দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করেন। 

ওই মামলায় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া মাইজদী এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার সমকামিতার ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূল দুই হোতা তারেক আহমেদ ওরফে তারেক হাসান (৩৫) ও মো. হৃদয় আলীকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও ঢাকার আশপাশ থেকে আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০) নামের আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তারেক ও হৃদয়ের দেওয়া তথ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের দারোগার চালা এলাকার একটি পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংক থেকে গত বুধবার সন্ধ্যায় আমিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

পরে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে মূল হোতা তারেক ও হৃদয়ের চার দিন ও বাকি তিনজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। 

গ্রেপ্তার তারেক আহমেদ ওরফে তারেক হাসান ও মো. হৃদয় আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা জিজ্ঞাসাবাদে মূল হোতা তারেক আহমেদ ওরফে তারেক হাসান ও মো. হৃদয় আলী জানায়, গত বছরের ১১ নভেম্বর সমকামিতার কথা বলে রুবেলকে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে আসে। পরে গভীর রাতে তাঁকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তারপর গভীর রাতে রুবেলের মরদেহ বাড়ির পাশের একটি গর্তে পুতে রাখা হয়। 

এ বিষয়ে নাটোর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করা একটি অপহরণ মামলা ডিবি তদন্ত করছিল। পরে ডিএমপির দক্ষিণখান থানা-পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিম রুবেলের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে বাকি আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

ডিএমপির দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দক্ষিণখানের আশকোনার মেডিকেল রোড থেকে ভিকটিম আমির হোসেন ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মুক্তিপণ দাবি করলে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তদন্তকালে মূল হোতা তারেক আহমেদ ও হৃদয়সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারেক ও হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গাজীপুর থেকে প্রথমে আমিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আজ শনিবার রাতে নাটোর থেকে নিহত রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত