মালয়েশিয়ায় নিহতের লাশ দেশে আনার দাবি স্বজনদের, কিছু করার নেই বললেন ইউএনও

পাবনা ও চাটমোহর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ২৭
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৪৩

মালয়েশিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত তিন বাংলাদেশির একজন পাবনার চাটমোহর উপজেলার আহেদ আলীর (৪৩) লাশ দেশে আনার আকুতি জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা। তবে এ বিষয়ে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তিনি নিহতের স্বজনদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের সাঁইপাই গ্রামের মৃত ওসমান মণ্ডল ও আবেদা খাতুন দম্পতির ছেলে আহেদ আলী। চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে পঞ্চম আহেদ। ধার করে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বছর দেড়েক আগে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানকার পেনাং রাজ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।

স্বপ্ন ছিল অভাবী সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরানোর। দুই ছেলেকে মানুষ করার। এ জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ফ্রি ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান আহেদ আলী। গত ২৮ নভেম্বর কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আহেদ আলীসহ তিন বাংলাদেশি শ্রমিকের।

মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে দিশেহারা আহেদ আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন রত্না। দুই শিশুসন্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তায় তাঁর কান্না যেন থামছেই না। তাঁর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। কীভাবে শোধ হবে ঋণের টাকা? কীভাবেই বা চলবে সংসার?

আহেদ আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন রত্না বলেন, ‘মৃত্যুর আগের দিন সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়। সবার খোঁজখবর নিল। তখন আমি বলেছিলাম, কাজে ব্যস্ত আছি। পরে আবার কথা কবোনে। সে বলল, আমিও তো ব্যস্ত থাকপোনে। কথা হবিনি কিনা।’ সত্যি আর কথা হলো না। স্বামীর লাশটা শেষবারের মতো দেখপের চাই।’

আহেদ আলীর দুই ছেলে রাসেল (১২) ফৈলজানা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি এবং ছোট ছেলে রাহিম হোসাইন (৮) সাঁইপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।

আহেদ আলী। ছবি: সংগৃহীতস্ত্রী হালিমা খাতুন রত্না বলেন, ‘এখনো ২ লাখ টাকা ঋণ রইছে। সেই টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব? আর ছাওয়াল দুইডেক মানুষ করব কীভাবে? আমার তো সব শ্যাষ হয়া গেল! এখন আমরা কী করব? দুই ছাওয়ালেক লিয়ে কোনে যায়া দাঁড়াব?’

আহেদের ভগ্নিপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘যেদিন আহেদ ভাই মারা যান, সেদিনই আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোনটা অন্য প্রান্ত থেকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু একটা শব্দে ফোন কল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফোন কল বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বাড়ি-ঘর মেরামতসহ বিভিন্ন পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।’

আহেদ আলীর সত্তরোর্ধ্ব মা আবেদা খাতুন (৭০) ভালো করে হাঁটতে পারেন না। ছেলের শোকে কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর দুই চোখ শুকিয়ে গেছে। শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন আর ছেলেকে ডাকছেন। ছেলের লাশ শেষবারের মতো দেখার আকুতি জানান তিনি।

একই গ্রামের বাসিন্দা খবির উদ্দিন একসঙ্গে থাকতেন মালয়েশিয়ায়। কিছুদিন আগে অসুস্থতার জন্য বাড়ি চলে এসেছেন তিনি। খবির উদ্দিন বলেন, ‘ওর জন্য কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমরা একসঙ্গে থাকতাম। কত স্মৃতি, কত কথা, বলে শেষ করতে পারব না। ছেলেটা খুব ভালো ছিল।’

প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীন জয় বলেন, ‘দরিদ্র আহেদ আলীর লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে দুই শিশুসন্তানসহ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু করণীয় নেই। নিহতের স্বজনদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত