মহাস্থানগড় খননে মিলেছে দেড় হাজার বছর আগের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১৮: ৪৮
Thumbnail image

বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রথম পর্যায়েই সন্ধান মিলেছে প্রাচীন আমলের সিল ও পোড়া মাটির মাথা। প্রাচীন লিপিযুক্ত ওই সিলের লেখা আবিষ্কার করা গেলে বোঝা যাবে এটা কী কাজে ব্যবহৃত হতো এবং কোন আমলের। তবে এ দুটি প্রত্ন নিদর্শন প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মহাস্থানগড়ের পরশুরাম প্যালেসের উত্তরে অবস্থিত বৈরাগীর ভিটায় গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয় এই খননকাজ, যা চলবে আরও মাসখানেক।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত সেখানে দুটি বৌদ্ধ স্তূপ (সমাধিসৌধ), প্রাচীন লিপিখচিত সিল, পোড়া মাটির নারী অবয়বের মাথা, অলংকৃত ইট, ভগ্ন মৃৎপাত্রসহ বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান পাওয়া গেছে। 

মহাস্থান গড়ের বৈরাগীর ভিটায় খনন কাজ চলছে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক কে এন দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৯২৮-২৯ সালে প্রথম এই বৈরাগীর ভিটায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করা হয়। পরে ইতিহাসের লুকানো রহস্য দর্শকদের সামনে উপস্থাপনের জন্য ২০১৬ থেকে পুনরায় খনন শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। গেল তিন বছর করোনা মহামারির কারণে খনন বন্ধ থাকলেও এবার পুনরায় এই ভিটায় খনন শুরু হয়েছে। 

বর্তমানে বৈরাগীর ভিটার যে স্থানে খনন করা হচ্ছে, তার সঙ্গেই ঠিক দক্ষিণাংশে একটি মন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল আগের খননে। তাই এবার বৌদ্ধমন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান চালাচ্ছেন খননে নিয়োজিতরা। অপর মন্দির কমপ্লেক্স পাওয়া গেলে সেখানে পাশাপাশি দুটি বৌদ্ধমন্দিরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

মহাস্থান গড়ের বৈরাগীর ভিটায় খনন কাজ চলছে। স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ১৬ জন শ্রমিক এই খননকাজে নিয়োজিত আছেন। চলমান এই খননকাজে দলনেতা হিসেবে রয়েছেন মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা। ফিল্ড পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা। এ ছাড়া এই খননকাজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান নকশা অঙ্কনকারী আফজাল হোসেন মণ্ডল, আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ, সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া, রংপুরের তাজহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাসনাত বিন ইসলাম ও আলোকচিত্র মুদ্রাকর দিদারুল আমল অংশ নিয়েছেন। 

আজ শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খননকাজে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী খুবই মূল্যবান। যে সিলটি পাওয়া গেছে তার পাঠোদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে সিলের ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে সিলটির সময়কাল এবং তাতে লিপিবদ্ধ বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যাবে।’ তিনি জানান, বিগত সময়ের খননে একটি বৌদ্ধমন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায়। তার ঠিক উত্তর পাশেই আরও একটি প্রাচীরের নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে, যা পাল আমলের বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাচীরটি সম্ভবত আর একটি বৌদ্ধমন্দির কমপ্লেক্সের। খননের পর জায়গাটি পুরোপুরি উন্মোচিত হলে হয়তো পাশাপাশি দুটি মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত