লোডশেডিং ও ডিজেলের দামে বন্ধ হচ্ছে তাঁত

শরীফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০: ২৪
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৮: ৩৫

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সিরাজগঞ্জের তাঁত কারখানাগুলোতে কাপড় উৎপাদনে ধস নেমেছে। চাহিদা-মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় অধিকাংশ তাঁত কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারখানার মালিকেরা ডিজেল-চালিত জেনারেটরের সাহায্যে পাওয়ার লুম ও তাঁত কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ায় কারখানা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

তাঁত মালিকেরা জানিয়েছেন, জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, বেলকুচি, এনায়েতপুর, রায়গঞ্জ, চৌহালী ও কাজীপুরে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। সুতায় রং দেওয়া, শুকানো, সুতা তৈরি ও কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রতি তাঁতে ৩-৪ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। এতে মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এ শিল্পে জড়িত। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হয়; বিশেষ করে উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুর, পাঁচিল বাজারে সপ্তাহে দুই দিন কাপড়ের হাট বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা আসেন এসব হাটে। এমনকি এই কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হয়।

তবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় অধিকাংশ তাঁত কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে আগে যেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, বর্তমানে ৩ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদন কম হচ্ছে। আবার যতটুকু উৎপাদিত হচ্ছে, তা-ও হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে তাঁত কারখানা বন্ধ রাখছেন। 
বেলকুচির চন্দনগাতী গ্রামের শাড়ি কারখানার শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি আগে দিনে তিন-চারটি শাড়ি তৈরি করতেন। এখন সারা দিনে দুটি শাড়ি তৈরি করা যায় না।

বেলকুচির চন্দনগাতী গ্রামের মেসার্স রায় প্রডাক্টসের ব্যবস্থাপক রিপন সাহা বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালু রাখা হতো। কিন্তু তেলের দাম বাড়ায় জেনারেটরও চালানো যাচ্ছে না। তিন-চার ঘণ্টা জেনারেটর চালু রাখলে পাঁচ-সাত লিটার তেল প্রয়োজন হচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।

বেলকুচির চন্দনগাতী গ্রামের তাঁত-শ্রমিক পলাশ সরকার বলেন, আগে একজন শ্রমিক সপ্তাহে তিন-চার হাজার টাকা মজুরি পেত। এখন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে দিনে ও রাতে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের বাঐতারা গ্রামের মেসার্স বিসমিল্লাহ সুতার দোকানের মালিক বিদ্যুৎ সরকার। তিনি বলেন, ‘একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে সুতার মূল্যবৃদ্ধি। এতে তাঁতিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ৫০ কাউন্টের ১ বস্তা নাহিদ সুতা ১ বছর আগেও ছিল ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, বর্তমানে ২২ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মিলন ইসলাম খান বলেন, তাঁতমালিকদের বিদ্যুৎ বিলও দিতে হচ্ছে, আবার জেনারেটরও চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁতমালিকদের। এই শিল্প টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, লোডশেডিং ও তেলের দাম বাড়ার কারণে অধিকাংশ সময় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। শ্রমিকেরাও কাজ করতে পারছেন না। নতুন করে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সুতার দামও বেড়েছে। আর যতটুকু কাপড় তৈরি করা হচ্ছে, তা বিক্রি করা যাচ্ছে না। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।

বদিউজ্জামান আরও বলেন, জেলায় প্রায় আড়াই লাখ তাঁতকল আছে। এগুলোর মধ্যে এক লাখ যন্ত্র বন্ধ রয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শ্রমিকেরাও বেকার হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে কারখানা চালানো যাচ্ছে না। তাঁতমালিকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত