স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুর্গাপুরের শজনে যাচ্ছে সারা দেশে

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ২৩: ৪০
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩, ০১: ০৮

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এবার শজনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত শজনের এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারগুলোয় ভরপুর। প্রতি কেজি শজনে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। রাস্তার ধার, জমির আইল, ফসলের মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় কম খরচে উৎপাদন ও পরিচর্যা কম হয় বলে বলেই কৃষকেরা পুষ্টিকর এ সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

এদিকে উৎপাদিত শজনে উপজেলা ও জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় শজনেতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। প্রতিদিন উপজেলার পাড়া মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে শজনে কিনছেন পাইকারেরা।

হাটবাজার ও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কৃষকদের কাছে থেকে শজনে কিনছেন। দুপর নাগাদ ক্রয়কৃত শজনে ব্যবসায়ীরা আঁটি বেঁধে ট্রাকে তুলছেন। ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত শজনে ঢাকা, জামালপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর শুরুতে উপজেলার প্রায় হাটে-বাজারে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পৌর এলাকার শালঘরিয়া বদির মোড়ে ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘দীর্ঘ দিন থেকে আমি এ অঞ্চল থেকে শজনে কিনি। শুধু দুর্গাপুর উপজেলার না, রাজশাহীর চারটি উপজেলা থেকে প্রতি বছর কৃষকদের থেকে শজনে কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করি।’

কৃষকের উৎপাদিত শজনের এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারগুলোয় ভরপুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ‘চলিত মৌসুমে দুই দফা কাল বৈশাখী ঝড়ে শজনের উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদন শজনের দাম বেশ চড়া। কৃষকদের কাছে থেকে পাইকারি ৯৫ থেকে ১০০ কেজি দরে কিনছি।’

দুর্গাপুর সদর মোড়ের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখান থেকে শজনে কিনে ট্র্যাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠিয়ে দেই। কারওয়ান বাজারে আমার ছোট ভাই কাঁচা মালের ব্যবসা করে। এখন বাজারে শজনে একটু কম পাওয়া গেলেও সপ্তাহখানেক পর পর্যাপ্ত শজনে পাওয়া যাবে। তবে কম উৎপাদন হলেও দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকেরা।’

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের লাইলী বেগম বলেন, ‘আমার গাছের শজনেগুলো পুষ্ট ও ভালো মানের হওয়া প্রথম দিনেই আমি পাইকারি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বাজারে প্রচুর আমদানি হলে আগামী সপ্তাহে দাম একটু কমে আসবে।’

লাইলী বেগম আরও বলেন, ‘রাস্তার ধারে নিজের জমির সীমানায় তাঁর প্রায় ২০টি শজনে গাছ আছে। গত বছর রাস্তার ধারে জমির শজনে গাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার শজনে বিক্রি করে ছিলাম। এ ছাড়াও পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনকেও দিয়েছি।’

দাম ভালো দাম পাওয়ায় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে শজনে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলার বাদইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শজনে গাছের কাঠ হালকা ও নরম। একটু জোড়ে বাতাস বা ঝড় হলে ভেঙে পড়ে। এ কারণে শজনে গাছ লালন পালন করা খুব কঠিন। পরিবারের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনা দিয়ে কিছু গাছ লাগিয়েছি। এ বছর সেসব গাছে পর্যাপ্ত শজনে এসেছে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনদের দিয়েছি। এ ছাড়া বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকাও পেয়েছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ উপজেলা প্রচুর পরিমাণ শজনে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাড়ির গৃহিণীরা বাড়ির আশপাশে বেশি শজনে গাছ লাগিয়ে থাকেন। জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে শজনের চাষ বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ কৃষকেরাই বাড়িতে খাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে লাগিয়ে থাকেন। যখন প্রচুর উৎপাদন হয়, তখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত