রামেক হাসপাতাল: সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে বেশি দরে পথ্য কেনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ২০: ২৩
Thumbnail image

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পথ্য কেনার দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে পথ্য সরবরাহের কার্যাদেশ না দিয়ে বেশি দর দেওয়া ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়ার এ অভিযোগে আদালতে মামলাও হয়েছে। আদালত মামলার বিবাদীদের উদ্দেশ্যে সমন জারি করেছেন। 

মামলার আরজিতে রামেক হাসপাতাল, হাসপাতালের পরিচালক, উপপরিচালক, কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর ট্রেডিং করপোরেশন, মেসার্স শফিকুল এন্টারপ্রাইজ ও আবদুস সেলিমকে বিবাদী করা হয়েছে। রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ২৯ নভেম্বর বিবাদীদের আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। 

গত ২৯ অক্টোবর মামলাটি করেছেন ইকবাল হোসেন নামের এক ঠিকাদার। ইকবাল হোসেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মো. আজাদ আলী। গত বছর এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে রোগীদের পথ্য (খাবার) সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছিল। 

ঠিকাদার ইকবাল হোসেনের অভিযোগ, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে তাঁকে কার্যাদেশ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার এই পথ্য কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল সম্প্রতি। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য পথ্য ও স্টেশনারি সামগ্রী কেনার জন্য গত ২২ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মো. আজাদ আলী পাঁচটি গ্রুপের দরপত্র অংশগ্রহণ করে। ২৪ সেপ্টেম্বর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি মৌখিকভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মো. আজাদ আলীর নাম ঘোষণা করে। 

কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে জানায়, পিজি৩-১, পিজি৩-২ ও পিজি৩-৫ অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দাখিল, গ্রুপ ‘এ’-এর ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে ব্যাংকের কাগজের আসল কপি না দিয়ে ফটোকপি দেওয়া এবং গ্রুপ ‘ডি’-এর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকার কারণে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি মেসার্স মো. আজাদ আলীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এরপর অন্য ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। 

ঠিকাদার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। গত বছরও রামেক হাসপাতালের পথ্য সরবরাহের কাজ পেয়েছিলাম। সুতরাং, আমি ভালো করেই জানি দরপত্রের সঙ্গে কী ধরনের কাগজপত্র লাগে। সব কাগজই দেওয়া হয়েছিল। আমার কাগজপত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এবার যারা কার্যাদেশ পেয়েছে, তারা বিগত ১৫ বছর ধরেই পথ্য সরবরাহের কাজ পেয়ে আসছিল। তারা অনিয়ম করে আসছিল। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করে করে গত বছর আমি কাজ পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কার্যাদেশ পেলাম না। যারা বেশি দর দিয়ে দরপত্র দিয়েছে, তাদেরই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের অন্তত ২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। আমি শুধু খাবার সরবরাহের দরপত্রে অংশ নিয়েছিলাম। স্টেশনারির হিসাব করতে গেলে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকায় দাঁড়াবে।’ 

এ অভিযোগের রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারেরা কাজ না পেলে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দাঁড় করায়, এটাও তাই। আমরা সমস্ত নিয়ম মেনে কার্যাদেশ দিয়েছি। দরপত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত কিছু ফরম আছে, এই ফরম ফলো করে দরপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু এই ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করেছিলেন। তাই বাদ পড়েছেন। মামলা করেছেন, সমন পেয়েছি, আমরা কোর্টে জবাব দেব।’ 

ইকবাল হোসেনকে কার্যাদেশ না দেওয়ার কারণে ২ কোটি টাকার ক্ষতি সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘টোটালি ফলস কথা। আমাদের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ছিল, তারা সব পণ্যের বাজারদর যাচাই করেছে। বাজারদরের চেয়ে কম দরেই পথ্য কেনা হচ্ছে। সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে। যে ঠিকাদার অভিযোগ করছেন, তিনি গতবার কাজ পেয়েছিলেন। আমরা তাঁকে নিয়ে ভুগেছিলাম। মানসম্মত পথ্য সরবরাহ না করার কারণে আমি কয়েকবার তাঁকে ডেকে সতর্ক করেছিলাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত