কচুরিপানার ওপর চলছে হাঁটা-চলা, ফুটবল খেলাও

রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ১৯: ০৩

উজানের ঢলের পানিতে ভেসে এসেছে কচুরিপানা। সেই কচুরিপানা জমাট বেঁধেছে নদীর এক অংশে। ধীরে ধীরে জমে যাওয়া সেই কচুরিপানার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে-কিশোরেরা সেখানে ফুটবল খেলছে, স্থানীয় লোকজন এর ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন। আর সেই দৃশ্য দেখতে আশপাশেরসহ দূরের এলাকা থেকেও মানুষ এসে জড়ো হচ্ছেন। 

বর্তমানে সেখানে কোনোরকম দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর বরাতি সেতু এলাকায়। 

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত বরাতি সেতুতে হাজারো মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে নদীতে তাকাতেই দেখা যায় লোকজন কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন, শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করছে, অনেকে মাঝ নদীতে কচুরিপানার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ বা লাইভ ভিডিও চালাচ্ছেন। 

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দিন আগে উজানের ঢলে ভেসে আসা কচুরিপানা বরাতি সেতুর উত্তরপাশের ২০০ মিটার অংশে নদীর দুই তীরে জমাট বাঁধে। পানির স্রোত নিচ দিয়ে বহমান থাকলেও কচুরিপানাগুলো নদীর ওই অংশ থেকে সরেনি। ফলে আটকে গিয়ে ঘন হয়ে যায়। ওই পানার নিচে অন্তত ৫-৭ ফুট গভীর পানি রয়েছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় কিছু কিশোর সেখানে প্রথম হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তারা সফল হলে সেখানে ফুটবল খেলা শুরু করে। এ ঘটনা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন তা দেখতে ছুটে আসেন। হাজারো মানুষের ভিড় দেখে অনেক পথচারীও সেখানে দাঁড়িয়ে জমাট বাঁধা কচুরিপানার ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। 

যমুনেশ্বরী নদীর বরাতি এলাকার ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কচুরিপানার ওপর নদী হেঁটে নদীর পার হচ্ছে, এমন ঘটনা শুনে আমি নিজেও এখানে এসেছি। এখানে হাজার মানুষ জমা হয়েছে। নদীর প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় কচুরিপানা জমাট বাঁধায় লোকজন তাঁর ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে। ছেলের দল ফুটবল খেলছে। আমি স্থানীয় কিছু লোককে সকাল থেকেই কচুরিপানাগুলোর বাঁধ ভেঙে দেওয়ার জন্য লাগিয়ে দিয়েছি, তাঁরা কাজ করছে।’ 

মিঠু সরকার নামের একজন দর্শনার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভাই, আমরা ফেসবুকে দেখে তিনটি ভ্যানে ৩০ জন এসেছি। এটা বিরল ঘটনা। এর আগে আমরা কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হতে দেখিনি। তাই আজ দেখতে আসলাম। এখানে প্রচুর মানুষের ভিড়।’ 

দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল এই পথে যাওয়ার সময় এখানে কিছু মানুষকে দেখতে পাই। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে দেখি হাজার মানুষের জটলা। তাই বাইক থামিয়ে এগিয়ে এলাম। নদীর ওপর ভাসমান কচুরিপানার ওপর মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, চলাচল করছে।’ 

নদীতে ৫-৭ ফুট গভীর পানির ওপরে ঘন কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকারংপুর থেকে দিনাজপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতি নাছিমা আক্তার ও আয়মান হোসেনও লোকজনের ভিড় দেখে বরাতি এলাকায় মোটরসাইকেল থামান। কথা হলে নাছিমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ নদীর দিকে তাকাচ্ছে। কৌতুহলবশত আমরাও মোটরসাইকেল থামিয়ে এখানে আসি। দেখছি কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে।’ 

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে গিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকজন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদীর ওই এলাকায় কচুরিপানা অপসারণে কাজ চলছে। কোনো রকম দুর্ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ রয়েছে।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেতু এলাকায় ব্যাপক লোক সমাগম হওয়ায়, জননিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত