লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, বিপর্যস্ত জনজীবন

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৭
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৫

কুড়িগ্রামে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আজ শনিবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। একে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। 

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘আজ সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা তেঁতুলিয়াসহ যৌথভাবে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও দু-এক দিন বিরাজ করতে পারে।’ হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন এই আবহাওয়াবিদ।

সকাল থেকে কনকনে ঠান্ডা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সূর্যের উপস্থিতিতে ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। সাধারণ মানুষকে রোদ পোহাতে দেখা যাচ্ছে। বোরো আবাদ শুরু হওয়ায় শীত উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন শ্রমজীবী ও কৃষকেরা। 

লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল বাতাস আর হালকা কুয়াশা মিলে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

আজ শনিবার সকাল ৯টায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই দিনের শীতে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দিনভর খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে এলাকাবাসী। শীতের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের আউটডোরে। 

শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সন্ধ্যার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শীত উপেক্ষা করে কাজ করলেও বোরো বীজতলা, ভুট্টা, আলু, সবজিখেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। 

তিস্তাপাড়ের দিনমজুর ওয়াকিল আহমেদ বলেন, গত দুই দিন ধরে প্রচুর শীত আর কনকনে ঠান্ডা। এর আগে এরকম শীত দেখা যায়নি। শহর এলাকার চেয়ে তিস্তার পাড়ে শীত অনেক বেশি। 

দৈনন্দিন জীবনে ছন্দপতনশহরের নর্থবেঙ্গল এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আনিসুর বলেন, সকালে রোদ দেখে শহরে এসেছি। কিন্তু এখন আকাশ মেঘলা ও হালকা কুয়াশা পড়ছে। ঠান্ডায় অটো চালাতে কষ্ট হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে বাতাসের কারণে শীত বাড়ছে, সড়কে মানুষ কমে গেছে। গত দুই দিনের মতো ঠান্ডা এ বছর পড়েনি। 

শহরের সেনামৈত্রী মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী আব্বাস বলেন, গত দুই দিন ধরে খুব ঠান্ডা পড়ছে। রাত থেকে প্রচণ্ড শীত আর ঠান্ডা বাতাস বইছে। আড়তে মাছ নিয়ে ব্যবসা করা মুসকিল হয়ে পড়েছে। ঠান্ডায় হাত বরফ হয়ে যাচ্ছে। আড়তে বেচাকেনা শূন্যের কোঠায়। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। 

সদর উপজেলার হারাটি এলাকার কৃষি শ্রমিক ফরহাদ বলেন, এই ঠান্ডায় জমির মালিক কাজে নিচ্ছেন না। কাজ কম হলেও হাজিরা তো দিতে হবে; এই ভয়ে কাজ করাচ্ছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যেদের উপোস থাকতে হবে। 

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় আশা নামের এক শিশুর বাবা বললেন, ‘তিন দিন ধরে বাচ্চার পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন সুস্থ আছে।’

আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে গত শুক্রবার লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল বাতাসের প্রভাব ও গতিবেগের কারণে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে এ এলাকায়। তবে এই মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরও দু-তিন দিন থাকতে পারে। 

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে; বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। 

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এবারে শীতে জেলায় ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে বিতরণের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে অনেক এনজিওসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শীতের কাপড়ের অভাবে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় না করার অনুরোধ মহাপরিচালকের, ক্ষোভ জানালেন মামুনুর রশীদ

আদালতের নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী চান বিচারকেরা

ইস্টার্ন রিফাইনারি: ১৮ কোটি টাকার কুলিং টাওয়ারের সবই নকল

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত