Ajker Patrika

পাশের ভবনের কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার, ঝুঁকিতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
পাশের ভবনের কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার, ঝুঁকিতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

‘কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। আংশিক কাজ হওয়ার পর থেকে ঠিকাদার আর আসেন না। এরপর থেকে অসংখ্যবার কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। কথা বলেছি উপজেলা ও জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।’ কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাজারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুজ্জামান সরকার।

বিদ্যালয়ের পাশের ভবনের কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় ফেলে রাখায় এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আশরাফুজ্জামান সরকার আরও বলেন, নির্মাণাধীন জায়গায় আগে থেকেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল। বরাদ্দ পেলে সেটি ভেঙে দিয়ে নতুন ওয়াশ ব্লকের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু এত দিনেও কাজ শেষ হয়নি। সে কারণে গত চার বছর ধরে ঝুঁকিতে আছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা।

কথা হয় পশ্চিম হুড়াভায়া খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ কা ম খায়রুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কী আর বলি, ওয়াশ ব্লকের কথা মনে হলেই আঁতকে উঠি। স্কুলের মূল ভবনের সঙ্গে অ্যাটাচ করে ওয়াশ ব্লকটির কাজ শুরু করা হয়েছে। সে কারণে দ্বিতীয় তলার বারান্দা দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেয়াল দেওয়া হয়নি। নিষেধ করার পরও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ওয়াশ ব্লকের ছাদে যাতায়াত করে। সে কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে ক্লাসের পাশাপাশি ওদিকেও নজর রাখতে হয় আমাদের। কারণ ওপর থেকে পড়ে গেলেই ভীষণ বিপদ হবে। এমনকি মারাও যেতে পারে শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কোনো কাজ হয়নি।’

আরেক সহকারী শিক্ষক মোছা. মৌসুমি আক্তার ফেন্সি বলেন, কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয় প্রাথমিক স্কুল। হাজারো বার নিষেধ করি তাঁদের ওখানে যেতে। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই বোঝে না। সে কারণে কখন যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুল এলেই সেই চিন্তায় থাকতে হয় সার্বক্ষণিক। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার জোর দাবি জানান তিনিও। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম হুড়াভায়াখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বিপজ্জনক হওয়ায় বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী বেড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কাজটি যেন দ্রুত শেষ করা হয়, সে বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার মেসার্স মুজিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কামরুজ্জামান মিয়ার মোবাইলে গত দুই দিনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ফোন রিসিভ করেননি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলীও।

তবে ফোন রিসিভ করেছেন রংপুর বিভাগীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ। মোবাইল ফোনে সবকিছু শোনার পর তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনার কথার ওপর বক্তব্য দেওয়া যাবে না। বিষয়টি জানালেন, আমি দেখছি।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪-এর (পিইডিপি) আওতায় ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজগুলো ২০১৯-২০ অর্থ বছরের। একেকটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণে ব্যয় ধরা আছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা করে। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ কার্যাদেশ পায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মেসার্স মুজিব এন্টারপ্রাইজ। ওয়াশ ব্লক হবে দোতলার। নিচতলায় থাকবে তিনটি টয়লেট, পেশাবখানা দুটি ও বেসিন একটি। নিচতলার মতো সবই থাকবে ওপরতলায়। তবে সেখানে যুক্ত হবে একটি চেঞ্জিং রুম। বিদ্যালয় তিনটি হলো দক্ষিণ বাজারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম হুড়াভায়া খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কঞ্চিবাড়ী হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কাজ দ্রুত শেষ করতে মৌখিক ও লিখিতভাবে ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত