রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন ২৭ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনকে ঘিরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের মধ্যে। এমনটাই ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। 

নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটারেরা বলছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রতীক লাঙল বরাবরই রংপুরে জনপ্রিয়, যা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা। সামনে জাতীয় নির্বাচন ফলে সরকারি সুবিধা কাজে লাগিয়ে রসিক নির্বাচনে জবরদস্তি করে জিততে আগ্রহী নয় আওয়ামী লীগ। এতে জাপার সঙ্গে দূরত্ব তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব দেখাতে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে সে জন্য পরোক্ষভাবে হলেও জাতীয় পার্টিকে রংপুর সিটি করপোরেশন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে মাঠপর্যায়ে কোনো তৎপরতা নেই। 

এ ছাড়া দলের মধ্যে নীরব কোন্দলে বেকায়দায় রয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে রসিক নির্বাচনের জন্য জোর প্রস্তুতি নিয়ে নেতা-কর্মীদের ও মাঠ চাঙা রেখেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল ও সভাপতি সাফিউর রহমান সাফি। কিন্তু তাঁদের কাউকে প্রার্থী না করে আলোচনার বাইরে থাকা ডালিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ কারণে দলের দুজন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাঁড়ালেও মাঠে রয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি লতিফুর রহমান মিলন। তাঁর সঙ্গে দলের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীও যুক্ত হচ্ছেন। আর দলের কোনো কোনো নেতা-কর্মী পদপদবি বাঁচাতে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে থাকার কথা বললেও মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন। মনোনয়ন বঞ্চিতরা কতটুকু আন্তরিক তাও বোঝা যাচ্ছে না। এতে নেতা-কর্মীরা চরম হতাশায় পড়েছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা রসিকের মেয়র পদটি জাতীয় পার্টির জন্য সরকারের উপহার দাবি করে বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রার্থীর নিজস্ব জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় সাংগঠনিক শক্তির ওপরই বেশি নির্ভর করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাপার প্রার্থীর এগিয়ে আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকেও নির্বাচনের মাঠপর্যায়ে তেমন কোনা তৎপরতা নেই।’ 

এ দিকে সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে রসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সে জন্য নেতা-কর্মীদের মাঠে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে এক জোট হয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। জাপার নেতা-কর্মীরা ধরেই নিয়েছেন, তাঁদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আওয়ামী লীগ পরোক্ষভাবে হলেও জাপাকে সিটি মেয়রের পদ ছেড়ে দিয়েছে। 

এ নিয়ে জাপার মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘পাঁচ বছরে যেসব উন্নয়ন মূলক কাজ করেছি, তা এখন দৃশ্যমান। মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছি না। সবার ভালোবাসায় বিপুল ভোটে জয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’ 

আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল সবাই আমার পাশে আছেন। তাঁরা মাঠপর্যায়ে আমার সঙ্গে কাজও করছেন। রংপুরের মানুষ নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। নৌকার জয় নিশ্চিত।’ 

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও রসিক নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন (হাতি মার্কা) বলেন, ‘আমি কখনো দল থেকে মনোনয়ন চাইনি। নিজ যোগ্যতায় নিজের পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নির্বাচনী মাঠ এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। রংপুরের মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন উপহার দিতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য লড়ে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ আমার পাশে আছেন। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি মানুষ আমাকে তাঁদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’