রংপুরের তারাগঞ্জে আগুনে আট পরিবারের ২২টি বসতঘর পুড়ে গেছে। এতে নগদ টাকাসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় উপজেলার রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এস এম শরিফুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের দল সেখানে ছুটে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আটটি পরিবারের ২২টি ঘরসহ মালামাল পুড়ে যায়।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের পরিবারগুলো অধিকাংশই দিনমজুর ও কৃষক। গতকাল রাত ৯টার দিকে ভ্যানচালক আতাউর রহমানের বাড়ির বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে।
এ সময় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পাশের রাহেনা বেগমের দুটি, মহুয়া বেগমের দুটি, মনছুর আলীর তিনটি, দুলু মিয়ার চারটি, লুৎফর রহমানের তিনটি, সাইদুল রহমানের একটি, মোনা মিয়ার তিনটি ও আতাউর রহমানের দুটিসহ আটটি পরিবারের ২২টি ঘর, নগদ টাকা, চাল-ডাল, ধান, পাট, দলিল, বই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাবপত্রসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল পুড়ে যায়।
আজ শুক্রবার মন্ডলপাড়া গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির কাঠ, কয়লা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘর পোড়ার খবরে দূর–দুরন্ত ছুটে এসেছেন স্বজনেরা। পোড়া ভিটায় স্বজনদের জড়িয়ে কেউ কেউ বিলাপ করছেন।
আগুনে দিনমজুর মনছুর আলীর তিনটি ঘরের সঙ্গে হাঁস-মুরগিও বাদ যায়নি ছাই হওয়া থেকে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘চোর চুরি করলে কিছু না কিছু বাঁচে। কিন্তু আগুন ধরলে তো সুতাও থাকে না। এই আগুন মোক ফকির বানে দিলে। মোর আর ঘর করির সামর্থ্য নাই। আকাশের নিচোত এ্যালা দিন পার কইরার নাগবে।’
দুলু মিয়ার ঘর পুড়েছে চারটি সঙ্গে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকাও। কথা হলে দুলু মিয়া বুক চাপড়ে বলেন, ‘বাবা, কি থাকি কি হয়্যা গেল। বাজার থাকি আসি ভাত কোনা খাবার বসছু দ্যাখো ঘরের চালোত আগুন। আগুন দ্যাখি ভাত ছাড়ি জান নিয়া দৌড়াছু। এনজিও ঋণের টাকা ও ভুই বন্ধ কি টাকা সউগ পুড়ি গেল। মুই এ্যালা কি নিয়া বাঁচিম কিস্তি কি দিয়া দেইম।’
মহুয়া বেগমের চোখের পানি যেন কিছুতেই থামছিল না। শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে বলেন, ‘মুই কেমন করি ঘুরি দাঁড়াইম, কোনঠে মাথা গোঁজাইম আগুন যে মোর কিছুই থুইল না।’
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রহিমাপুর মন্ডলপাড়া ক্ষতিগ্রস্ত আটটি পরিবারের সবাই দিনে এনে দিনে খায়। আগুন তাদের নিঃস্ব করে দিল।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পরিদর্শন করেছি। প্রত্যেক পরিবারকে নগদ তিন হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, তিন কেজি আলু, এক কেজি লবণ ও এক কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। আরও সহায়তার জেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।’