টিকিট চাওয়ায় রেলকর্মীকে মারধর, অভিযোগ আরেক সরকারি কর্মকর্তার দিকেই

দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০০: ০২

দিনাজপুর রেলস্টেশনে এক যাত্রীর কাছে টিকিট দেখতে চাওয়ায় রেল কর্মচারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা এবং লোক ডেকে তাঁদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেল পৌনে ৬টায় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে। এতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য ও দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে আরেক সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার দিকে। 

রেলওয়ে কর্মচারী ও রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী (আরএনবি) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেল আনুমানিক পৌনে ৬টার দিকে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন এক্সপ্রেস এবং শান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ-নেওয়াজ রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় তাঁর কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টিকিট দেখতে চান। কিন্তু তিনি টিকিট না দেখিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে রেলের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে স্টেশনের একটি রুমে আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অন্য কর্মচারীরা এসে শাহ-নেওয়াজকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে তাঁরা রেলের কর্মচারীদের ওপর চড়াও হন। এতে তিনজন আহত হয়। 

আহতেরা হলেন—রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজ (৩০), টিকিট কালেক্টর রিপন মিয়া (২৭) ও পোর্টারম্যান মো. নাহিদ হাসান (৩২)। এর মধ্যে মাসুদ পারভেজ মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাঁকে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে দিনাজপুর আরএনবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারওয়ার আহমেদ বলেন, ‘দুটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার রেলওয়ে স্টাফরা চেকিং কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। মাদকের ডিডি টিকিট ছাড়াই প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে চাইলে আমাদের স্টাফরা তাঁকে বাধা দেন। এ সময় তিনি টিসি (টিকিট কালেক্টর) রিপনকে ধাক্কা দিলে রিপন তাঁকে তার রুমে আটক করে রাখেন। পরে মাদকের ডিডি তাঁর স্টাফদের ফোন করে ডাকলে ৫ / ৬ মিনিটের মধ্যে আট-নয়জন মোটরবাইকযোগে এসে রেলের স্টাফদের ওপর চড়াও হয়। তাঁরা মাসুদ পারভেজের মাথা ফাটিয়ে দেন ও টিসির কাপড়চোপড় ছিঁড়ে ফেলেন।’ 

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নারগিস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে সবার টিকিট চেক করছিলাম। এ সময় তিনি (শাহ-নেওয়াজ) বাধা অতিক্রম করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাঁকে টিকিটের কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি টিকিট করেননি বলে জানান। টিকিট করে ভেতরে ঢুকতে বললে তিনি ধাক্কা মারেন। পরে তাঁকে একটি রুমে আটকে রাখতে বলি। পরে তিনি ফোন করেছেন কি না, জানি না। তবে তাঁদের (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দিনাজপুর) লোক এসে মারামারি শুরু করেন। শাহ-নেওয়াজ আগেও টিকিট নিয়ে ঝামেলা করেছিলেন।’ 

তবে স্টেশন সুপার নারগিসের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহ-নেওয়াজ। তিনি বলেন, তাঁর অফিসের এক সদস্যকে কাউন্টারে টিকিট কাটতে পাঠিয়ে তিনি স্টেশনের প্রধান ফটক দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে যান। বিষয়টি তিনি গেটে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেশন মাস্টারকে জানালেও, তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। তবে ফোন করে অন্য সদস্যদের ডেকে আনার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন শাহ-নেওয়াজ। 

এ বিষয়ে স্টেশন সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এত বড় একজন কর্মকর্তার আইনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত ছিল। তিনি যে কাজটি করেছেন, তা মোটও সঠিক হয়নি।’ 

এদিকে দিনাজপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় রেলওয়ে পুলিশের ওসি এরশাদুল হক ভূঁইয়ার কক্ষে উভয় পক্ষের বৈঠক বসে। রাত ৯টার দিকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, সে বৈঠক এখনো শেষ হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মওলা, স্টেশন সুপার মো. মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। এদিকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে কর্মবিরতি পালন করার কথা জানিয়েছেন রেল কর্মচারীরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত