তিস্তাপারের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী, ভাঙনে ধরলায় বিলীন ৩৫ বসতি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৪
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ০৬

কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদীর তীব্র ভাঙনে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজারহাটে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলে বন্যায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী। গত তিন দিনে ধরলার ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অন্তত ৩৫ পরিবারের বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। 

জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ দুই ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী আছেন। চলমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনা খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। 

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ সোমবার সকাল ৯টায় তিস্তার পানি কমে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টার তিস্তার পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৯ দশমিক ৩১ মিটার। 

রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলার দুই ইউনিয়নের এখনো শতাধিক পরিবার পানিবন্দী আছে। এসব পরিবারের ম সরকারিভাবে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ 

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নবাসী সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নে গত তিন দিন ধরে ধরলার তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙনে একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। খুদিরকুটি, রসুলপুর ও কবিরাজপাড়া গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। গতকাল রোববার রাতে ধরলার ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিরকুটি আকেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক। ধরলার তীব্র স্রোতে ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুদিরকুটি আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়সহ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। ভাঙনের তীব্রতায় ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশতাধিক পরিবারে হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বসতভিটা থেকে ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। 

বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সংগঠক ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘ভাঙনে সব শ্যাষ হয়ে যাইতেছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের আল আমিন বাজার থেকে খুদিরকুটি বাজার হয়ে কবিরাজপাড়া পর্যন্ত তীব্র স্রোত আর ভাঙন। ঘরবাড়ি, মসজিদ, ক্লিনিক—কোনো কিছুই থাকছে না। ঠেকাতে না পারলে এলাকা শেষ হয়ে যাবে।’ কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্লাবিত তিস্তা পারের নিম্নাঞ্চল। ছবি: আজকের পত্রিকাবেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ‘খুব ভাঙন শুরু হয়েছে। একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। রোববার রাতে কমিউনিটি ক্লিনিকটা নদীতে গেছে। কোনো প্রতিকার নাই।’ 

‘গতকাল রাতে আমার বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটা গেল। যেভাবে ভাঙতেছে তাতে আশ্রয়কেন্দ্র আর স্কুলটাও থাকবে না। এই মুহূর্তে কিছু ব্যাগ ফেললে অনেকটা রক্ষা করা যাইত।’ পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও করণীয় নিয়ে এভাবে কথা বলেন ভাঙনে সদ্য ভিটা হারানো খুদিরকুটি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মহুবর। 

ভাঙনে শুধু কৃষক আর দিনমজুর নন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও ভিটে হারাতে বসেছেন। আজ সোমবার সকালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে নিজের বসতি সরানোর কাজ করছেন বলে জানান বাবলু মিয়া। 

চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘গত দুই-তিন দিনে আমার আপন ভাইয়ের বসতিসহ অন্তত ৪০টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীতে গেছে। আমার ভিটার অনেক গাছপালা রক্ষা করতে পারি নাই। এখন বাধ্য হয়ে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছি। কোথায় গিয়ে উঠব এখনো ঠিক করতে পারি নাই। আপাতত জিনিসপত্র রাস্তায় রাখতে হচ্ছে।’ 

ভাঙনে সরকারি সম্পত্তিসহ স্থানীয়দের বসতি বিলীন হয়েছে বলে জানান উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘যেভাবে সরকারি সম্পত্তিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের কবলে পড়েছে তাতে আতঙ্ক বোধ করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দুদিন ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে আসছি। আমি আবারও যোগাযোগ করছি। নিজেও ভাঙন এলাকায় যাব।’ 

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। আর খুদিরকুটি আকেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হওয়ার খবর পেয়েছি। ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ 

কুড়িগ্রামে পউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়েছি। আমরা জিও ব্যাগ পাঠিয়েছি। আজ সোমবার থেকেই ব্যাগ ফেলা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত