হাবিপ্রবিতে ভাত ১৫ টাকা প্লেট চাওয়ায় ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের বিতণ্ডা, সড়ক অবরোধ

দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৩, ১৬: ৫৪
আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১৮: ০৪

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন (হাবিপ্রবি) খাবার হোটেলে এক প্লেট ভাতের দাম ১৫ টাকা চাওয়ায় গতকাল শুক্রবার রাতে হোটেলমালিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে আজ শনিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানান।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। দুই পক্ষের রেষারেষিতে রাস্তার দুই পাশে আটকা পড়ে কয়েক শ যানবাহন। তীব্র গরমে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন হিমেল হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে বিল দেওয়ার সময় হোটেলমালিক মিঠুন প্রতি প্লেট ভাতের দাম ১৫ টাকা দাবি করেন। ছাত্ররা প্রতিবাদ করে বলেন, ‘রাতারাতি ভাতের প্লেটের দাম কীভাবে বাড়ল? কার অনুমতিতে দাম বাড়ালেন?’ এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্লেট গ্লাস ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিমেল হোটেলের মালিক মিঠুন ও তাঁর স্ত্রী ফেন্সি বলেন, ‘৭০ টাকা কেজি চাল কিনে ১০ টাকা ভাতের প্লেট বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। তা ছাড়া মুরগিসহ সব জিনিসের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। আমরা কী করব? শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরও হোটেলের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। প্লেট-গ্লাস ভেঙেছে।’

এ ঘটনায় আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজের নেতৃত্বে বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক মূল্যতালিকা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত দোকানিরা সব পণ্য আগের দামেই বিক্রি করবেন। মিটিং শেষে দোকানপাটও খুলে দেবেন। 

বৈঠক শেষ হওয়ার পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মেসে থাকে। সকাল থেকে হোটেলসহ অন্য দোকানপাট বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। দোকান বন্ধের বিষয়টি আগে থেকে না জানায় অধিকাংশই সকাল থেকে না খেয়ে আছেন। আশপাশের বাজারের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানগুলোতে কিনতে গেলে প্রতিটি জিনিস দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়। 

 হাবিপ্রবিতে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, একটি সাধারণ টিনশেড মেসে থাকতে গেলে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। একটু ভালোমানের মেসে থাকতে হলে তিন হাজার টাকা লাগে। মেয়েদের বেলায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া লাগে। এসব বিষয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। 

অপর এক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা দোকানিদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। তারা একটুতেই দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। সামান্য ঘটনায় তারা কোনো ঘোষণা ছাড়াই দোকান বন্ধ রাখায় অনেক শিক্ষার্থীই সকাল থেকে না খেয়ে আছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানি বলেন, ‘এখানে সব মিলিয়ে দুই শতাধিক দোকান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও সামান্য কিছু শিক্ষার্থীর জন্য সমস্যা তৈরি হয়। কিছু কিছু শিক্ষার্থী আছে হোটেলে খাবার খেয়ে অর্ধেক দাম দিয়ে চলে যায়। আবার অন্য মালামাল নেওয়ার সময়ও দাম কম দেয়। প্রায় সময় এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গন্ডগোল হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো সুরাহা হয় না।’

সড়ক অবরোধের খবরে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে বেলা ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। 

সবার উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মেসভাড়া ও পণ্যসামগ্রীর মূল্যতালিকা নির্ধারণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত