মুক্ত সাংবাদিকতা বহু আগেই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঠাকুরগাঁওয়ে পৈতৃক বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। 

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তবে আওয়ামী লীগের অধীনে নয়, নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। চাল, ডাল, তেল ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম আকাশচুম্বী। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। মানুষের আয় কমে গেছে। জীবন-জীবিকা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই বিএনপি রাজপথে দাঁড়িয়ে লড়াই সংগ্রাম করছে। 
 
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সরকার দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করায় বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের অধিকারের আশা আশঙ্কা নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কী হলো তার চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে দেশের মানুষ। তখন বলা হতো দেশের ২২ পরিবার কোটিপতি। এখন সেই সীমানা ছেড়ে কোটি পতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজারে। এ যদি হয় দেশের অবস্থা, তাহলে দেশের মানুষ আরও গরিব হবে। ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে দেশের ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। 

যে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেই দেশকে কীভাবে উন্নত দেশ বা মধ্যম আয়ের দেশ বলা হয়? এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই কারণে আমরা লড়াই বা সংগ্রাম করছি। যে বাংলাদেশকে ডাস্টবিনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই দেশকে সেখান থেকে তুলে আনতে রাজপথে নেমেছি। দেশে আজ কোনো বিচার নেই। বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আজ ধ্বংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। 

তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপকরণের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কয়েক দিন আগে যে ৫০টি ওষুধ ৫৪ শতাংশ থেকে এখন ১৩৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি দেশের মানুষের জন্য একটি ভয়ংকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে অবৈধ সরকার। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, নিয়ন্ত্রণই নেই। সরকারি কর্মকর্তারা কী করছে তাঁদের হিসাব নিকাশও নেই। বর্তমানে যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদেরও কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। যা খুশি তাই করছে। ফলে গোটা সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার সে কাজ গুলো করে যাচ্ছে। জনগণের যে স্বার্থ সেটাকে তারা বিবেচনা করছে না। এ জন্য তারা মুক্ত গণতন্ত্রকে বহু আগেই বিনষ্ট করে ফেলেছে।’ 

সাংবাদিকতার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্ত সাংবাদিকতা বহু আগেই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। বিভিন্ন আইন করে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যা, নিপীড়ন চলছে। ফলে কেউ সাহস করে কেউ কিছু বলতে পারছে না, লিখতে পারছে না।’ 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ হক মাসুদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হকসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরপর তিন দিনের সফর শেষে নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মির্জা ফখরুল।