Ajker Patrika

যৌবনহারা যমুনেশ্বরীতে আর হয় না বিসর্জনের নৌকাবাইচ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
যৌবনহারা যমুনেশ্বরীতে আর হয় না বিসর্জনের নৌকাবাইচ

এক সময় বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনকে উপলক্ষ্য করে  রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরে যমুনেশ্বরী নদীর তীর উৎসবে মেতে উঠতো। সনাতন ধর্মাবলম্বী আর স্থানীয় মুসলমানদের মিলনমেলায় পরিণত হতো নদী তীর। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত নৌকা বাইচ। নদীর দুই কিনারে গিজ গিজ করতো মানুষ, পা ফেলার জায়গা থাকতো না! আর সন্ধ্যার আগে আশেপাশের এলাকার দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো একই স্থানে। ফলে ওই সময় নানা মণ্ডপ থেকে আসা প্রতিমার সাজসজ্জায় ঝলমল করে উঠতো নদী।

এখন আর সেই দৃশ্য নেই। পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, সেই সঙ্গে বালুদস্যুতে দৌরাত্ম্যে যমুনেশ্বরী ভরাট হয়ে এখন প্রায় চড়ে পরিণত হয়েছে। আগের মতো নদীতে মাছ হয় না,  ফলে অধিকাংশ জেলে পেশা বদল করেছেন। জেলে নেই, নদীতে নৌকাও আর আগের মতো দেখা যায় না। এ কারণেই প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতিমা বির্সজনের দিন নৌকা বাইচ হয় না বলে জানিয়েছে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটি।

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় বদরগঞ্জ পৌর শহরের ১০টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এক সঙ্গে নেওয়া হয় যমুনেশ্বরী নদীর তীরে পশু মেলার মাঠে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকের বাদ্যে নাচে গানে মেতে ওঠে নারী-পুরুষ। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়াল অনুযায়ী একের পর এক প্রতিমা রিকশাভ্যান যোগে যমুনেশ্বরী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। 

প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার আগেই মেলার মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আমরুলবাড়ি গ্রামের দুলাল চন্দ্র রায়। এতো আগে কেন ফেরা হচ্ছে জানতে চাইতেই দুলালের কণ্ঠে ঝরল হতাশা। তিনি বলেন, ‘আগে নৌকায় চড়ে আনন্দ উল্লাস করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো। এখন নদীতে পানি না থাকায় সেই আনন্দ নাই। এ কারণে বিসর্জনের আগেই বাড়ি ফিরছি।’ 

পৌর প্যানেল মেয়র মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগে প্রতিমা বিসর্জনে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা ছিল। এই প্রতিযোগিতা দেখতে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনও পৌর শহরের যমুনেশ্বরী নদীর তীরে আসত। এতে অর্ধলাখ মানুষের সমাগম ঘটতো। কিন্তু এখন নদীতে পানি না থাকায় সেই দৃশ্য নেই।’ 

আজ থেকে এক দশক আগে বিসর্জনের আগে যমুনেশ্বরীতে হতো টান টান উত্তেজানার নৌকা বাইচ। ছবি: আজকের পত্রিকাযমুনেশ্বরী শুকিয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা পেটের দায়ে পেশা বদল করেছেন। অথবা নতুন পেশায় মানিয়ে নিতে এখনো ধুঁকছেন। সেই সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার আনন্দেও ভাটা পড়েছে। যেমনটি বলছিলেন আমরুলবাড়ির দুলাল চন্দ্রসহ স্থানীয় অনেকেই।

উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গবিন্দ কুণ্ডু বলেন, ‘আগে নদীতে পানি ছিল প্রচুর। নৌকা ছিল অনেক। পৌর শহরের মণ্ডপগুলোর প্রতিমা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পূজামণ্ডপের প্রতিমা নিয়ে আসা হতো এই যমুনেশ্বরী নদীতে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো নৌকা প্রতিযোগিতা। সূর্য ডোবার পর  নৌকা থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হতো।'

 তিনি বলেন, ‘এখন নদী ভরাট হয়ে চর জেগে উঠছে। তেমন পানি নেই নদীতে। অনেক জেলে পেশা ছেড়ে দেওয়ায় আগের মতো নৌকাও নেই। এ কারণে প্রায় ১০ বছর ধরে নৌকা বাইচ হয় না।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত