লিচু বাছাইয়ের কাজ করে কারও চলে লেখাপড়া, কারও সংসার

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ১৯: ১৫
Thumbnail image

মায়ের মৃত্যুর পর বাবা জাহিদুল আরেকটি বিয়ে করেন। ১০ বছরের জয়নবকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান তিনি। জয়নবের ঠাঁই হয় বৃদ্ধা নানির কাছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থায় নানির পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগানো অসম্ভব। পড়াশোনার খরচ জোগাতে মৌসুমের এ সময় সদর উপজেলার মুন্সিরহাট এলাকায় নানিসহ বাগানে লিচু বাছাইয়ের কাজ করে জয়নব। 

জয়নব বলে, সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। নানি বলেছেন, অভাবের সংসারে তিনি লেখাপড়ার খরচ দিতে পারবেন না। সে যদি কিছু উপার্জন করতে পারে, তাহলে খাতা-কলম কিনতে আর চিন্তা করতে হবে না। তাই প্রতিদিন বাগান থেকে লিচু বাছাইয়ের কাজ করে। মজুরি হিসেবে যে টাকা পায় তা দিয়ে সারা বছরের পড়াশোনার খরচ হয়ে যায়। প্রতি বছরই সে এ কাজ করে।

সদর উপজেলার সালান্দর এলাকার একটি লিচু বাগানে কাজ করতে আসা রোজিনা, খাদিজা, মরিয়ম, রেহেনা জানান, এ কাজ তাঁরা প্রতি বছর করেন। 

এ চিত্র শুধু একটি বাগানেই নয়, জেলার অধিকাংশ লিচু বাগানে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোরেরা উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিপণনের কাজ করছে। এদের কেউ গৃহিণী, দিনমজুর, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। 

আজ শুক্রবার সদরের গোবিন্দনগর-মুন্সিরহাট এলাকায় কথা হয় দুই সন্তানের মা সালমা বেগমের সঙ্গে। তাঁকে লিচু বেছে দেওয়ার কাজে সহায়তা করছে ছেলে হাবিবুল ইসলাম। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

সালমা বেগম বলেন, ‘সংসারে একটু সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বাড়ির কাজের ফাঁকে বাগানে কাজ করি। সারা দিন কাজ শেষে ৪০০ টাকা পাই। ছেলে পায় ৩০০ টাকা। সব মিলে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত পাই।’ 

নারগুন কহর পাড়া এলাকার খাদিজা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশে লিচুর বাগান। নিজের এলাকায় বলে কাজটি করা হয়। এক মাসে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সন্তানের পড়াশোনা ও সাংসারিক কাজে ব্যয় করি।’ 
 
একই এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী দীপ্তি রাণী বলে, ‘লিচু মৌসুমে আমার মতো শত শত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কাজ করে। পরে এ আয় জমিয়ে রেখে সারা বছরের পড়ার খরচের জন্য।’ 

এ গ্রামের লিচুর বাগান মালিক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে পাঠানোর আগে লিচু বাছাই গণনা ও ঝুড়িতে ভরা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি নারীরা করে থাকেন। আমার চারটি বাগানে ২০০ নারী এ কাজে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাগানে লিচু প্রসেসের কাজ করেন।’ 

হরিপুর কাঠাঁলডাঙ্গী এলাকার লিচু চাষি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘লিচু বাছাই ও গণনার কাজে নারী শ্রমিকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এখন বোরো মৌসুমে ধান কাটার মুহূর্তে শ্রমিকের যে সংকট, তাতে নারী শ্রমিক না থাকলে লিচু বাছাই ও গণনার কাজ কঠিন হয়ে যেত।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ৯০৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫৬টি বাগানে লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৮ টন। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন বাড়ির উঠানে লিচু গাছ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত