গরুর বদলে জমিতে হালচাষে দম্পতি

পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৪৮
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ০৪

কখনো অন্যের জমিতে বর্গাচাষ কখনো বা খালে-বিলে মাছ ধরে চলে জীবিকা। সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের দায়ভার চল্লিশ বছরের নেপেনের। অর্থাভাবে যখন গরু দিয়ে হালচাষ করা দায়, তখন স্ত্রী সুভাসিনীর সহযোগিতায় মই দিয়ে নিজেরাই করছেন হাল চাষ।

গত রোববার গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর পবনাপুর ইউনিয়নের পবনাপুর গ্রামের মাঠে গেলে চোখে পড়ে নেপেন-সুভাসিনী দম্পতির মই দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য।

অন্যের জমি বর্গাচাষের পাশাপাশি খালে-বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে যা মেলে তা দিয়েই মেটাতে হয় সংসারের মৌলিক চাহিদা। তাই এমন সংগ্রামী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এ কাজে পালাক্রমে একজন গরু ও অপরজন চাষির ভূমিকা রাখতে হচ্ছে তাঁদের।

মাঠে ইরি-বোরো মৌসুমে যেখানে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের সাহায্যে জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা, এখানে ব্যতিক্রম শুধু নেপেন-সুভাসিনী দম্পতি। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে পানিতে ভিজে জমি সমান করতে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে হাল দিয়ে চলেছেন তাঁরা। বাঁশের তৈরি মইয়ের দুপাশে দড়ি বেঁধে দুহাতে টেনে গরুর ভূমিকা রাখছেন সুভাসিনী এবং শক্ত হাতে মই চেপে রেখেছেন নেপেন। আর এতেই কাঁদাজলে ভেজা উঁচু-নিচু জমি সমান হয়ে চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে।

এ দম্পতি জানান, তাঁদের নিজেদের কোনো জমি নেই। প্রায় এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন তাঁরা। আজ দশ শতক জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য মই দিচ্ছেন। এ জমি থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার অর্ধেক পান জমির মালিক। বাকি ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের জোগান মেটাতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে টাকা দিয়ে গরুর হাল না কিনে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন।

তাঁরা আরও জানান, তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মাধব এসএসসি পাস করেছে। ছোট ছেলে নিখিল, মেয়ে লক্ষ্মী ও প্রতিমা হাইস্কুলে পড়াশোনা করছে। এ ছাড়া অর্জুন নামে কোলের এক সন্তান রয়েছে তাঁদের।

পবনাপুর ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চান মিয়া বলেন, ‘নেপেন-সুভাসিনী দম্পতি আমার প্রতিবেশী। বেঁচে থাকার তাগিদ ও সন্তানদের শিক্ষিত করতে সংগ্রাম করে চলেছেন তাঁরা।’

পবনাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে পানি ও হাল চাষের পর মাটি সমান করতে মই দেওয়ার কাজটি গরু দিয়ে করা হলেও নেপেন-সুভাসিনী দম্পতি আর্থিক সংকটের কারণে নিজেই এ কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবারটিকে সরকারি সহায়তার দাবি জানাই।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, খোঁজ নিয়ে পরিবারটিকে সম্ভাব্য সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত