নীলফামারীতে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি

নীলফামারী প্রতিনিধি
Thumbnail image
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নীলফামারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নেমেছেন নীলফামারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। জেলার জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক সুরাইয়া জান্নাত শম্পাকে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই দিন রাত ৮টার দিকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এই কর্মসূচি আজ বুধবার সন্ধ্যারাতেও অব্যাহত থাকে। কর্মবিরতি চলাকালে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে তানহা (১৪) নামের এক কিশোরীকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সে চিকিৎসাধীন ছিল মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে। ওই রোগীর বাবা নীলফামারী সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম শাহ আলম তমু ও চাচা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা।

শামীম ও বাবলা মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক সুরাইয়া জান্নাত শম্পার কাছে রোগীকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিতে বলেন। তিনি ওই রোগীকে শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখাতে বলেন। এতে চিকিৎসকের সঙ্গে বাকতিন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এই দুই অভিভাবক। একপর্যায়ে তাঁরা ওই নারী চিকিৎসকের ওপর চড়াও হয়ে লাঞ্ছিত করেন ও কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া তাঁরা চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। এ ঘটনায় আহত চিকিৎসককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইন্টার্ন চিকিৎসক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের সহকর্মী সুরাইয়া জান্নাত শম্পাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তার করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনে যাব।’

ইন্টার্ন চিকিৎসক সুরাইয়া জান্নাত শম্পা বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে চারজন জটিল রোগীকে ভর্তি করছিলাম। এ সময় শামীম নামের এক ব্যক্তি এসে তাঁর মেয়েকে দেখতে বলেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করেছি জটিল চার রোগীকে দেখে ও ভর্তি করে আপনার মেয়েকে দেখছি। এতে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফাইল নিয়ে দেখি ওনার মেয়েকে ইমার্জেন্সি থেকে শিশু ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এরপরও মেয়েকে দেখে শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বলি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। এ সময় আমি ডিউটি রুমে চলে আসি। এর কিছুক্ষণ পর শামীম ও তাঁর বড় ভাই বাবলা ডিউটি রুমে এসে পুনরায় আমার ওপর চড়াও হয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন। তাদেরকে নিষেধ করলে আক্রমণাত্মক হয়ে আমার শরীরে আঘাত ও হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে কক্ষে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। পরে হাসপাতালে থাকা রোগীর অন্য স্বজন এবং একজন ওয়ার্ড বয় এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’

চিকিৎসক শম্পার সহকর্মী আফসানা মিমি বলেন, ‘বাবলা ও শামীম দেড় মাস আগে বিনা কারণে আমার ওপর ও এক সিনিয়র নার্সের ওপর চড়াও হয়ে গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় হাসপাতালের স্টাফরা এগিয়ে আসায় পালিয়ে যান তাঁরা। ওই সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হলে পুনরায় চিকিৎসক লাঞ্ছিতের সাহস পেতেন না।’

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা, মামলা করা, সবকিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি সবকিছু নিয়ম মাফিক হবে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা বলেন, ‘আমার ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক সুরাইয়া জান্নাত। আমার ভাতিজি মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারালে তাঁকে হাসপাতালে আনি। জরুরি বিভাগ থেকে রোগীকে শিশু ওয়ার্ডে নিতে বলা হয়। শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসক না থাকায় নার্সের পরামর্শে কেবিনে ভাতিজিকে রেখে চিকিৎসকের ডিউটি কক্ষে যায় আমার ভাই। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক সুরাইয়া জান্নাত শম্পাকে রোগী দেখার অনুরোধ করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। আমরা তাঁকে অনুরোধ করতে থাকলে তিনি মোবাইল ফোন বের করে আমাদের ছবি তোলেন। আবারও রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ করা হলে তিনি আমাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় উপস্থিত রোগী এবং স্বজনেরা চিকিৎসকসহ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে অভিযোগ করতে থাকলে তা নিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে লাইভ করি। এতে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত