পিটিয়ে যুবলীগ নেতার হাত ভেঙে দিলেন ওসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ মে ২০২৩, ১৬: ৪৯
Thumbnail image

ঠাকুরগাঁওয়ে থানায় নিয়ে যুবলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।

এ ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর।

অভিযোগ তদন্তে ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (প্রশাসন) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় দর্শনার্থী হিসেবে যান জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি। এ সময় কয়েকজন অকারণে হট্টগোল করলে তিনি বাধা দেন এবং তা নিরসনের চেষ্টা করেন। এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে কোনো কিছু না শুনে রকিকে মারধর শুরু করে এবং টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক। এ সময় তিনি সদর থানার ওসি কামাল হোসেনকে তাঁকে আটকের বিষয়ে এবং মারধরের কারণ জানতে চান। কিন্তু পুলকের ওপর চড়াও হন এবং রকি ও পুলককে মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যান।

এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান পুলক বলেন, ‘থানায় নিয়ে গিয়ে চোখে কাপড় বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন ওসিসহ চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে রাতে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাঁন তাঁরা। হাসপাতালের চিকিৎসক হাত ভাঙার কারণ জানতে চাইলে ওসি তাঁকে বলেন, চিকিৎসা দিন, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কেন করছেন।’

পুলক আরও বলেন, ‘২ মে আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসা শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আসাদুজ্জামান পুলক নামের এক রোগী হাসপাতালের একটি কেবিনে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর বাঁ হাতের একটি হাড় ফেটে গেছে।

এদিকে এই ঘটনার নির্যাতনের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে একটি মেলা চলছিল। সেখানে গত ২৯ এপ্রিল রাত সোয়া ১০টার দিকে মেলা কর্তৃপক্ষ ফোন দিয়ে আমাদের জানায়, একদল যুবক মদ খেয়ে মেলা প্রাঙ্গণে নারীদের উত্ত্যক্ত করছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। গিয়ে দেখতে পাই, মেলার উপস্থিত লোকজন তাদের ধোলাই দিয়েছে। তারা আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। থানায় এনে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। রাতেই জেলার যুবলীগ নেতারা থানায় এসেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন আটক ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে নিতে, তবে মেলা কর্তৃপক্ষ মামলা করায় তাদের ছাড়া যায়নি। পরের দিন তাদের আদালতে চালান করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিন দিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজিয়েছে। এগুলো সঠিক নয়।’

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান পুলকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। খালিদ সিরাজ রকির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, পুলিশ অ্যাসল্টসহ নয়টি মামলা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগটি আসার পরই আমি ঘটনাটি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত