Ajker Patrika

রংপুরে একমঞ্চে ১৫টি যৌতুকবিহীন বিয়ে

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৯: ৩৩
রংপুরে একমঞ্চে ১৫টি যৌতুকবিহীন বিয়ে

নার্গিস আক্তার, রংপুর সদর উপজেলার হরকলি পীরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। মায়ের সামান্য আয়ে সংসারে দুবেলা খাবার জোটে না। এমন অবস্থায় তাঁর বিয়ে দেওয়ার খরচ দুঃসাধ্য ছিল। এমনই ১৫ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে রংপুরে। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরীর শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে এ বিয়ের আয়োজন করে ঢাকাস্থ আল-খায়ের ফাউন্ডেশন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নবদম্পতিদের নগদ অর্থ, ভ্যান, সেলাই মেশিনসহ সংসারের নানা উপকরণও উপহার দেওয়া হয়। 

এমন বর্ণিল আয়োজনে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন নবদম্পতিরা। রংপুরে প্রথমবারের মতো জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে যৌতুকবিহীন এমন বিয়ের আয়োজন করায় খুশি স্থানীয় প্রশাসনও।

ঘুরে দেখা যায়, বিয়ের আয়োজনকে ঘিরে নগরীর শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে ছিল সাজ সাজ রব। সাদা কাপড়ে ঘেরা পুরো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে সারি করে রাখা ভ্যান, সেলাই মেশিন, গ্যাসের চুলা, বালতি, প্লেট-গ্লাস, জগ, তোশকসহ সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাব। প্রতিটি ভ্যানে এক-দুই করে নম্বর সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। ইনডোর স্টেডিয়াম ভবনের সামনে ফুলে সজ্জিত গেট।

রাজকীয়ভাবে সাজানো মঞ্চে সারি করে বিয়ের পাঞ্জাবি, পায়জামা, জুতা, পাগড়ি পরে বসে আছেন ১৫ জন বর। অপর আরেকটি ঘরের ভেতরে বিয়ের সাজে ১৫ জন কনে। সবারই হাস্যোজ্জ্বল মুখ। মঞ্চের বিপরীতে বসে ছিলেন ৩০ পরিবারের সদস্যরা।

নগরীর জুম্মাপাড়ার এলাকার কনে নুসরাত বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কল্পনায়ও ভাবি নাই, এত সাজসজ্জা করে আমার বিয়ে হবে। স্টেজে সেজে বসে থাকব। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। বিয়েতে আমাদের একটি টাকা খরচ হয়নি, বরং উপহারও পেয়েছি। বর ও আমি দুজনেই খুশি। দোয়া করবেন যে সংসার জীবনে সুখী হই।’ 

 

রংপুরে যৌতুকবিহীন ১৫ বিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কনে নার্গিস আক্তার বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার অনেক বছর হয়েছে। মায়ে তামাক কোম্পানিত কাম করি যা পায়, তাই দিয়া আমরা তিন ভাই-বোন মা খাইছি। এমন আয়োজন করে বিয়ের সাধ মায়ের ছিল। কিন্তু ধুমধাম করেই আজ আমার বিয়ে হলো। একটা যৌতুক লাগে নাই। যারা আমার ঘর বান্ধি দিল তাদের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।’ 

পাগলাপীর কিশামত হরকলি গ্রামের বাসিন্দা বর মারজান মিয়া বলেন, ‘ডিমান্ড ছাড়া বিয়া করবার পারছি। এ্যালা বুক উচা করি চলবার পামো। কাইয়ো কিছু কবার পাবার নয়। এমন করি বিয়া হইলে যৌতুক সমাজ থ্যাকি উঠি যাইব। যৌতুকের জন্তে কোন মেয়ে নির্যাতন হবার ন্যায়।’ 

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যৌতুক নেওয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে বেআইনি কাজ। তবে সমাজে ব্যাধি হয়ে এটি এখনো রয়েছে। আল-খায়ের ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমি তার সাধুবাদ জানাই। যেহেতু যৌতুক বেআইনি কাজ, এটি বন্ধ করা পুলিশের কাজ। 

‘আমি মনে করি, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি সুস্থ ধারার সূচনা হলো। আমরা এ কাজকে শুধু সমর্থনই করি না। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা নবদম্পতির জন্য উপহার দিয়েছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে সব বিয়েই যৌতুকবিহীন হবে। যারা এ ধরনের উদ্যোগ নেবেন আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকব।’ 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হাসান রুমি, বিসিবির পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম দুলাল, অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক মেরিনা লাভলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত