তাপপ্রবাহে বাড়ছে বোরো চাষের খরচ

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১: ৫৩
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ২৩

‘একে তো গরম, তার ওপর কারেন্ট থাকে না। পাম্পওয়ালা কারেন্ট না থাকায় ঠিকমতো ধানখেতোত পানি দেওছে না। খেত বাঁচার জন্য অ্যালা শ্যালো মেশিন নাগে পানি দেউছি। তাপ বেশি থাকায় রোগবালাইও বাড়ছে। এবার আবাদ খরচ অনেক বেশি হওছে। এমন তাপ থাকলে জীবন, ফসল—দুইটাই বাঁচা কঠিন হয়্যা যাইবে।’

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মাটিয়ালপাড়া মাঠের বোরো খেতে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনে সেচ দেওয়ার সময় কথাগুলো বলছিলেন জুম্মাপাড়া গ্রামের কৃষক কালা মিয়া। ওই মাঠেই খেতে ওষুধ ছিটানো শেষে জোড়বটতলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক আখেরুল ইসলাম। তিনি জানান, অতিরিক্ত তাপে খেতে ব্লাস্ট (ছত্রাকজনিত রোগ) দেখা দেওয়ায় একবারেই দেড় হাজার টাকার ওষুধ ছিটিয়েছেন। পুরো বৈশাখ মাসে এমন তাপমাত্রা থাকলে বোরো চাষে প্রতি একরে পানি ও কীটনাশক ব্যয় বাড়বে কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা।

চলমান প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে শুধু কালা মিয়া ও আখেরুল ইসলামই নন, তাঁদের মতো হাজারো কৃষক বোরো ধান ও সবজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, হিট শক ও ব্লাস্ট সংক্রমণ যাতে না হয়, সে জন্য ঘন ঘন সেচ এবং ওষুধ দেওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ হেক্টরে ধান চাষ হয়েছে। কৃষকেরা ১৫ মার্চ পর্যন্ত এ চারা রোপণ করেছেন।

অন্তত ছয়টি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড রোদে খেত শুকিয়ে গেছে। সেগুলোতে ফসল রক্ষায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন কৃষকেরা। কেউ কেউ করছেন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় খেতের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ পাম্প দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় কৃষকেরা ব্যক্তি উদ্যোগে ডিজেলচালিত মেশিন দিয়ে এক দিন পর পর সেচ দিচ্ছেন। অনেক খেত শুকিয়ে হিট শক ও ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। এতে ফসল রক্ষায় তাঁরা খেতে নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করছেন।

হরকলির মাঠে ধান চাষ করা কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ছত্রাকনাশক আর সেচ খরচ খুবই বেশি হওছে। ধানের দাম ভালো না পাইলে লোকসান গুনবার নাগবে।’ ডাংগীরহাট মাঠের কৃষক হানিফ মিয়া বলেন, ‘আর কত দিন এইংকা গরম থাকবে? এমতোন থাকলো হামার সবজি খেতোত ফুল-ফল ঠিকমতো আইসার নেয়, উৎপাদন কম হইবে। ধানের শীষ চিটা হয়া যায়বে। আল্লাহ যেন দেশটাক ঠান্ডা করি দেয়।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রংপুরে তাপমাত্রা কম। আর এখানে ধানের পরাগায়ন বেলা ১১টার মধ্যে শেষ হয়। এখানে তাপমাত্রা বাড়ে দুপুর ১২টার পরে, তাই ধান ও সবজির তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের খেতে সেচ ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকেরা অনেক সচেতন, তাঁরাও মাঠে ফসল রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা করছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত