খোলা আকাশের নিচে দিন পার, রাত কাটে অন্যের বাড়িতে

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৩৪

ঘর পুড়ে যাওয়ার আট দিন পার হলেও মেরামত করতে পারেনি নওশিনের পরিবার। দিন পার হয় খোলা আকাশের নিচে আর রাত কাটে অন্যের বাড়িতে। তবে তাঁর পুড়ে যাওয়া বই ও পোশাক কিনতে টাকা মিলেছে। বড় বোনের বিয়েতে খরচের টাকা জোগানোর আশ্বাসও দিয়েছেন অনেকে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় রেলওয়ে কোয়ার্টারে থাকেন নওশিন। তিনি কায়সার আলীর মেয়ে। রংপুর মডেল কলেজের স্নাতকের সমাজ বিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নওশিন। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপক হিসেবে পার্ট টাইম চাকরি করেন তিনি। এই বেতনে বৃদ্ধ বাবা-মা ও দুই বোনসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্বে তিনি একাই।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাশের বাসায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যে পুড়ে যায় নওশিনের পরিবারসহ ওই মহল্লার পাঁচটি পরিবার। আগুনে পুড়ে গেছে নওশিনের জমানো সাড়ে ১৫ হাজার টাকাসহ জামা-কাপড় ও বইপত্র।

ঘটনার আট দিন পর আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া আধা দেওয়ালের ঘরটিতে সামিয়ানা টাঙানো আর নিচে পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র। এরই মধ্যে ঘরের এক কোণে বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে নওশিন দেখছে পোড়া বইগুলো। 

পুড়ে যাওয়া ঘরে সামিয়ানা টাঙিয়ে দিন পার করেন নওশিনের পরিবার।ভগ্ন কণ্ঠে নওশিন বলেন, ‘জামা-কাপড় ও আসবাবপত্রের সঙ্গে বই পুড়ে গেছে। পত্রিকায় খবর দেখে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ১৪ হাজার টাকা পেয়েছি। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমার বড় বোনের বিয়ের খরচ জোগান দিতে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী নুসরাত অমরিতা ১০ হাজার টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন।’

নওশীনের বাবা কায়সার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা পরিষদ থেকে আটটি ঢেউটিন পেয়েছি। ঘর তৈরি করতে অনেক খরচ, তাই অর্থ জোগানের চেষ্টা করছি। বড় মেয়ের বিয়ের জন্য যা টাকা জোগাড় করেছি তা পুড়ে গেছে। তবুও ছেলেপক্ষ মানবিকতার পরিচয় দিয়ে আজ বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসছে।’ 

ইউএনও ফয়সাল রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নওশিনের বড় বোনের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। আগামী রোববার পরিষদের পক্ষ্য থেকে টাকা তাঁর বাবার হাতে তুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারকে ঢেউটিন, নগদ টাকা দেওয়ার কথা জানান তিনি। 

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজকের পত্রিকায় ‘অগ্নিকাণ্ডে সব পুড়ে গেল নওশিনদের’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর অনেকে তাঁদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত