Ajker Patrika

পানিতে ডুবেছে বাদামখেত, চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে হাহাকার

আনিছুর লাডলা, লালমনিরহাট
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১১: ৫৫
পানিতে ডুবেছে বাদামখেত, চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে হাহাকার

তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট। লালমনিরহাট জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির বাদামখেত। গত মাসে ১৫ দিনের ব্যবধানে পরপর দুটি বন্যা হওয়ায় পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের কৃষকের খেতের বাদাম। ফলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না বাদামচাষিরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা তিস্তা আর ধরলা নদী। তিস্তা নদী জেলার দক্ষিণ দিয়ে পাঁচটি উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলেছে আর খরস্রোতা ধরলা জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে চলেছে। সব মিলে নদী দুটি দুই দিক দিয়ে জেলার সীমান্তকে আগলে রেখেছে। বর্ষা মৌসুমে ধরলা আর তিস্তার খরস্রোতে প্রতিবছর গৃহহারা হচ্ছে শত শত পরিবার। ভিটেমাটি আর চাষাবাদের ফসলি জমি হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দুই নদীর তীরবর্তী মানুষ। বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে মাঠের পর মাঠ বালুচরে পরিণত হয়। 

কৃষকেরা জানান, জেলাজুড়ে প্রায় ৩৬টি চরাঞ্চল রয়েছে নদীর বুকে। শুষ্ক মৌসুমে কঠোর পরিশ্রম করে ধু ধু বালুর ওপর সবুজ ফসলে চরাঞ্চল ভরে তোলেন চাষিরা। শুষ্ক মৌসুমের এই স্বল্প সময়ে চাষাবাদের আয়ে চলে চরাঞ্চলের মানুষের সারা বছরের সংসার। কেউ ঋণ করে আবার কেউ বাকিতে বীজ, সার, কীটনাশক ক্রয় করে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। ফসল উঠে গেলে ঋণ ও দোকানের পাওনা পরিশোধ করে বাকি সময়টুকু বিকল্প পেশায় আয়-রোজগার করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। 

কিন্তু এ বছর ঘটেছে উল্টো। ধু ধু বালুর ওপর হঠাৎ বন্যার আঘাত লাগে তিস্তাপাড়ে। আগাম বন্যায় অনেক ফসল ঘরে তুলতে পারেননি চরাঞ্চলের চাষিরা। এ ছাড়া শীতকালীন ফসল আলু, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, সবজি ও তামাক নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চৈত্র মাসের আগাম বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। বাকি ছিল চরাঞ্চলের বাদাম। সেই বাদামও চলতি মাসের টানা বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। সব মিলে এ বছর চরাঞ্চলের চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

এ বছর শুষ্ক মৌসুমের কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা। ফলে চলতি বছর ঋণ ও বাকিতে কেনা বীজ, সার ও কীটনাশকের টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি অনেকে। শুষ্ক মৌসুমের ফসল রাখেন বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ের সম্বল হিসেবে। সেটাও এ বছর সঞ্চিত রাখতে পারেননি চাষিরা। ফলে নদীপাড়ের কৃষকের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুণ্ডা গ্রামের বাদামচাষি আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘চরের বালু জমিতে কম খরচে অধিক মুনাফা পেতে বাদাম চাষের জুড়ি নেই। প্রতি ২৭ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষে খরচ পড়ে মাত্র ৪ হাজার টাকা। আর বাদাম উৎপাদন হয় চার-পাঁচ মণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি মণ সাড়ে ৪ হাজার টাকা। গেল বছরও শুষ্ক মৌসুমের বিভিন্ন ফসল বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। এ বছর উৎপাদন খরচও পেলাম না। সব নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টি আর আগাম বন্যায়।’ 

একই এলাকার চাষি আবু হাসান জানান, ‘এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছি। কিছুদিন পরেই বাদাম ঘরে তুলতে পারতাম। এরই মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সব। পানি কমে যাওয়ায় কিছু বাদাম ডুবে ডুবে তুলেছি, যা আবার অঙ্কুরোদগম হতে শুরু করেছে। কিছু বাদাম পচে নষ্ট হচ্ছে। বেশির ভাগই বন্যায় বালুচাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে। এবার লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠবে না। ঋণ আর বাকিতে কেনা সার-বীজের টাকা পরিশোধ নিয়ে পড়েছি বিপাকে।’

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের আমতলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘অন্যের দুই দোন (২৭ শতাংশে এক দোন) জমি বর্গা নিয়ে বাদাম আবাদ করেছিলাম। বন্যায় সব ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া বাদাম কিছু তুলতে পেরেছি। বাকিগুলো পলি পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’ 
 
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, এ বছর চরাঞ্চলের কোনো কৃষক লাভবান হতে পারেননি। প্রতিটি ফসল শিলাবৃষ্টি আর বন্যায় নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চলজুড়ে কৃষক পরিবারে রয়েছে হাহাকার। খাদ্যের ঘাটতিসহ আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। এসব মানুষকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। 

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান মুকুল জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় গেল বন্যায় ৩৮৩ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে ছিল, যার মধ্যে ২০১ হেক্টর জমির বাদাম, আউশ ধান, ভুট্টা, পাট ও আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার ৩০০ চাষিকে পুনর্বাসনের বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে দুই যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ: পর্যটক সেজে লামায় লুকিয়ে ছিলেন ৫ আসামি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরে স্থানীয় দুই যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরজিরি এলাকায় মাতামুহুরী রিভার ভিউ রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমি উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা ওরফে আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং আরেকজন ১৭ বছর বয়সী কিশোর। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

ওসি ছমি উদ্দিন বলেন, ৯ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কে বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফারুক নামের দুই যুবদল কর্মী। এই ঘটনার পর থেকে পাঁচ আসামি পর্যটকের ছদ্মবেশে বান্দরবানের লামায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে লামায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দুই যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম (৩৫) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩৪)। তাঁরা শহরের বাইপাস সড়কের চারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত