বিদ্যালয়ের ঘণ্টায় মিলছে জীবিকা

প্রতিনিধি, তারাগঞ্জ (রংপুর)
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ০০
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ২৮

দীর্ঘ দেড় বছর পর বিদ্যালয় খোলায় যেমন স্বস্তি মিলেছে শিক্ষার্থী–অভিভাবক ও শিক্ষকদের, তেমনি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্বস্তি মিলেছে বিদ্যালয়ের আশপাশের বাজারের ব্যবসায়ীদের। ক্লাস শুরুর আগে ও ছুটির পর শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে দোকানগুলোতে। এতে আগের থেকে কর্মচঞ্চল হয় উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। এটি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চিত্র।

আজ সকাল ৯টায় উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক, অলিগলিতে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাকে শিক্ষার্থীদের দেখা মেলে। মুখে মাস্ক, কেউ বই হাতে, কেউ ব্যাগ কাঁধে সারবেঁধে বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছে।

স্কুল ঘেঁষে গড়ে ওঠা কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পছন্দ ও চাহিদার দিকগুলো খেয়াল রেখে সে অনুযায়ী বিভিন্ন ধরেন মালামাল দোকানে তোলেন তাঁরা। তাদের ক্রেতাদের সব থেকে বড় একটা অংশ স্কুল–কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া বন্ধ হয়। ধীরে ধীরে কমতে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেচাকেনাও। একপ্রকার মন্দা নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন কেউ কেউ। তবে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল–কলেজগুলো খোলায় ফের শিক্ষার্থীরা কেনাকাটা করছে। বেড়েছে বেচাকেনা ও আয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মুখে মাস্ক পরেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে দাঁড়িয়েছে মাঠে। শিক্ষকেরা এক এক করে শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। যাদের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির ওপরে, তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করার পর শিক্ষার্থীরা সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে। বসছে সামাজিক দূরত্ব মেনে। বন্ধুদের সঙ্গে পাশাপাশি বসতে না পারলেও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিদ্যালয়ে আসার আনন্দের ঝিলিক তাদের চোখে–মুখে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে দফায় দফায় স্কুল বন্ধের ছুটি বেড়েছে। দেড় বছরের বেশি সময়ের পর করোনা সংক্রমণ কমে আসায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরেছে। তারা বিদ্যালয়ে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।

গতকাল দুপুর ১টায় তারাগঞ্জ ও/এ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় ঝালমুড়ি বিক্রেতা খিতিস মহন্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে এখানে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। এটাই আমার পেশা। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় ঝালমুড়ির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গায় কাজ করেছি। ব্যবসার মতো ফায়দা হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকায় বড় লোকসান হয়েছে।’

ওই বিদ্যালয়ের ৫০ গজ দূরে জিকেএস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানে বাদাম, বুট বিক্রি করে যায় আয় হয়, তা দিয়ে চলে কাশি মহন্তের পরিবার। শিক্ষার্থীদের কাছে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে করতে কাশি মহন্ত বলেন, ‘ভাই, এই ব্যবসায় পুঁজি কম লাগে। শ্রম কম। কিন্তু করোনায় স্কুল বন্ধের পর অনেক কষ্টে দিন কাটাইছি। এখন স্কুল খুলছে ,ফের দোকান করছি। স্কুলের টিফিন, ছুটির ঘণ্টা বাজলে ছেলেমেয়েরা ফের ছুটে আসছে মুড়ি, বাদাম খেতে। বিদ্যালয় এখন ছাত্রছাত্রী–শিক্ষকের উপস্থিতিতে ভরপুর। দেখে মনটা ভরে যায়।’

শুধু খিতিস মহন্ত আর কাশি মহন্তই নন। তাঁদের মতো অনেকেই প্রতিটি বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় তাঁদের জীবিকার চাকা ঘুরে গেছে। ঝালমুড়ি, বাদাম, বুট, পাঁপড় বিক্রির আয়ে অনেকে দুবেলা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পেট ভরে খেতে পারছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলায় ৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৯৪০ জন শিক্ষার্থী এবং ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত