এখন ঘুষ লেনদেন হয় ডলারে: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২২, ২০: ১৩

টাকায় নয় এখন ঘুষ লেন দেন হয় ডলারের মাধ্যমে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। কারারক্ষী পদে চাকরিপ্রার্থী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জহিরুল ইসলাম এশুর করা রিটের শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ।

শুনানির এক পর্যায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখা যায় বস্তায় বস্তায় টাকা ঘুষ লেনদেন হয়।’ আবেদনকারীর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এটা আরেকটা জাহালম কাণ্ড।’ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা আরও বড় কিছু। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ। কেননা, জাহালম তো একজন ছিলেন। আর এখানে অনেকে ভিকটিম।’ 

হাইকোর্ট বলেন, ‘এ রকম একটি স্পর্শকাতর জায়গায় যদি এমন অনিয়ম হয়, তাহলে কিন্তু এটা অশনিসংকেত। বেশ বড় ধরনের অভিযোগ এটা। এখানে দুদকের আইনজীবী আছেন, তাঁর সামনেই বলি—এখন আর টাকায় নয়, ঘুষ লেনদেন হয় ডলারে। এসব বিষয় দুদক তো দেখে না।’ 

এর আগে ‘আরেকজনের নাম-পরিচয়ে চাকরি, ১৮ বছর পর তদন্ত’—শিরোনামে আজকের পত্রিকায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন জহিরুল ইসলাম এশু। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগদানপত্র পাননি তিনি। তবে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে ঠিকানা ও পরিচয় যাচাইয়ের জন্য কুলাউড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম খাঁন খছরুর কাছে একটি চিঠি আসে। কাউন্সিলর চিঠিটির বিষয়ে এশুকে জানান। পরে এশু কারারক্ষী পদে তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য কেউ চাকরি করছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। 

এদিকে, সাধারণ ডায়েরির পর এশু চাকরি ফিরে পেতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক বরাবর আবেদনও করেন। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। আবেদনে চাকরি ফিরে পাওয়ার সঙ্গে ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়। রিটে বিবাদী করা হয়, স্বরাষ্ট্রসচিব, কারা মহাপরিদর্শক, কারা উপমহাপরিদর্শক, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ও কারারক্ষী হিসেবে চাকুরিরত জহিরুল ইসলামকে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে ২১০ জন কারারক্ষী জাল-জালিয়াতি বা একজনের স্থলে আরেকজন কাজ করছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা তদন্ত করেছেন। তদন্তে ২০০ জনের মধ্যে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর ৩ জন পাওয়া গেছে, যারা প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে কর্মরত। আবার অনেকে রয়েছেন তাঁরা ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এগুলো ধরা পড়ার পরে ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত