বন্যা পরিস্থিতি: সিলেটে উন্নতি হলেও উত্তরে অবনতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ১১: ১২
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ১১: ২২

টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট বিভাগে ৫০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। সিলেট জেলার কিছু এলাকায় পানি কমার খবর পাওয়া গেলেও সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে ভূরুঙ্গামারীর একটি ইউনিয়ন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নীলফামারীর ডিমলায় বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধায় বাড়ছে তিস্তার পানি। সিরাজগঞ্জে ভয় দেখাচ্ছে যমুনা।

এদিকে বানের স্রোতে ভেসে ও পানিতে ডুবে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারেই মারা গেছে তিনজন। সুনামগঞ্জে একজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর নেত্রকোনায় মারা গেছে একটি শিশু।

সিলেটজুড়ে ৫০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। গত বুধবার রাত থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসায় সিলেট-সুনামগঞ্জের কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও গোয়াইনঘাট এখনো যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। তবে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ নদ-নদীর পানি গতকালও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।

গতকালও সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘির পাড়, উপশহর, যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার এলাকার রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি ছিল। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানি আগের থেকে কিছুটা কমলেও বৃষ্টি শুরু হলে আবার বেড়ে যাবে। বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট প্রকট হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষও পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না। যদিও প্রশাসন দাবি করেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। এর মধ্যে সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। বুধবার রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বেড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।

কুশিয়ারার পানি বেড়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ১০টি পাকা সড়ক ডুবে গেছে। পানিবন্দী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদীঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রামের ২ লাখ ৮১ হাজার ৯২০ জন মানুষ বন্যাকবলিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগীয় অফিসের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) রনি দাস বলেন, ‘সুরমার ৫টি, কুশিয়ারার ৩টি ও মনু নদের একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাটনাই ও মহাশিং নদীর একটি করে পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার সমতলে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি এবং সিলেটে বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি কিছুটা কমেছে। তবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভাগে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। চার জেলায় ১ হাজার ৭০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’

কুড়িগ্রামে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে বুধবার থেকেই। এরপর আক্রান্ত হয়েছে ভূরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলাও। পানির তোড়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদর থেকে শিলখুড়ি ইউনিয়নের ধলডাঙ্গা বাজারে যাওয়ার একমাত্র পাকা সড়কটি দেবীবাড়ি এলাকায় ভেঙে গেছে। এতে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। চিলমারীতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন বীজতলা, মরিচ, বেগুন ও তোষা পাটখেত। পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি আরও বাড়তে পারে।

উত্তরে বাড়ছে শঙ্কা
নীলফামারীর ডিমলায় সুন্দর খাতা এলাকায় গতকাল ভোররাতে বুড়িতিস্তা নদীর বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার অংশ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনা নদীর পানি, তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। পাউবো সূত্র বলেছে, ৩০ জুন পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বাড়বে। গাইবান্ধায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে, বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি। এরই মধ্যে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

তিন জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামে গতকাল সকালে বন্যার পানিতে ডুবে হৃদয় আহমেদ (১৬) ও ছাদি মিয়া (৯) নামের দুই শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বড়লেখার ভাগাডহর গ্রামে দুপুরে বন্যার পানিতে ডুবে আয়শা বেগম (১২) নামের এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে সকালে পানিতে পড়ে মারা গেছে তোরা মনি (৮)। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিকেলে ঘাস কাটতে গিয়ে বানের স্রোতে ভেসে রুহুল আমিন (৩৭) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট এবং সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, গোয়াইনঘাট (সিলেট), কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ), নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ), ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম), চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ও ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত