হয়রানি মুক্তির প্রিপেইড মিটারে ভোগান্তিতে গ্রাহক

  • জরুরি ব্যালান্স নিলে পরিশোধ করতে হয় মাত্রাতিরিক্ত চার্জ।
  • প্রিপেইড মিটার বন্ধ করে পোস্টপেইড মিটার স্থাপনের দাবি।
  • প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন।
লবীব আহমদ, সিলেট 
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতের অপচয় নিয়ন্ত্রণ এবং ভুতুড়ে বিলের হয়রানি থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে ২০০৪ সালে সারা দেশে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই থেকে সিলেট নগরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মার্কেটে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) আওতাধীন এলাকায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮২টি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রিপেইড মিটার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা। অযথা টাকা কেটে নেওয়া থেকে শুরু করে রয়েছে নানা সমস্যা।

এ জন্য প্রিপেইড মিটার বন্ধ করে পোস্টপেইড ও ডিজিটাল মিটার স্থাপনের দাবি গ্রাহকদের। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আগের পোস্টপেইড মিটার সরিয়ে নতুন প্রিপেইড মিটার বসাতে গ্রাহকদের অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার নিয়ে চলছে নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ। মিটারে রিচার্জ করার পরই দ্রুত টাকা শেষ হয়ে যায়। কাগজের বিলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিল পরিশোধ করতে হয় প্রিপেইড মিটারে। আবার আরেক ভোগান্তির নাম হচ্ছে জরুরি ব্যালান্স। জরুরি ব্যালান্স নিলে পরিশোধ করতে হয় মাত্রাতিরিক্ত চার্জ। রিচার্জে পোহাতে হয় নানামুখী ঝামেলা। একদিকে রিচার্জ কার্ড সব জায়গায় পাওয়া যায় না, অন্যদিকে ডিজিট বেশি হওয়ায় তা মিটারে প্রবেশ করাতে ঝক্কি পোহাতে হয়। একসঙ্গে এতগুলো ডিজিট প্রবেশ করাতে গিয়ে ভুল হলেই মিটার ‘লক’ হয়ে যায়। তখন দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। মিটার আনলক করতে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হয় বিদ্যুৎ অফিসে। এসব কারণে গ্রাহকেরা প্রিপেইড মিটারের পরিবর্তে আবার পোস্টপেইড মিটার স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে মানববন্ধনও হয়েছে। স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। এ ছাড়া নগরীতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রিপেইড মিটার প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটি গড়ে উঠছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সেবা না দিয়ে উল্টো প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে লুটপাট শুরু করেছেন। প্রিপেইড মিটারে আগের মিটারের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি বিল আসছে। এ ছাড়া মিটারভাড়াও বেড়েছে।

ভুক্তভোগী সৈয়দ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আগে ৬০০-৭০০ টাকা বিল আসত। এখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আসে। কী কারণে এটা হচ্ছে, বুঝতেছি না। আবার লোডশেডিংও বেশি। আমরা আগের মিটার চাই।’ নগরের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল মুকিত বলেন, ‘আমার একটাই অনুরোধ, প্রিপেইড মিটার খুলে আমাদের আগের মিটারটাই দেওয়া হোক। আমরা তো কখনো টাকা বকেয়া রাখি না। মাস পুরলেই বিলের টাকা দিয়ে দিই। এই মিটারে নানা সমস্যা, এটা আর চাই না।’

সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা যায়, সিসিকের আওতাধীন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এ ১৭ হাজার ৮৭৮টি, বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-২-এ ৫৮ হাজার ৫৯৩টি, বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-৩-এ ১৬ হাজার ৪২৭টি, বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-৪-এ ২৩ হাজার ৫৮৪টি এবং বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-৫-এ ৩০ হাজার প্রিপেইড মিটার ইতিমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) অফিসের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘এটা তো ডিজিটাল সিস্টেম, সারা দেশেই প্রথম দিকে একটু সমস্যা হচ্ছে। সিলেটে প্রায় ৬৩ শতাংশ প্রিপেইড মিটার। সবারই তো চলতেছে, যাঁরা নতুন, তাঁরা এসব বলছেন। ২০০৫-০৬ সাল থেকে যাঁরা ব্যবহার করছেন, তাঁদের তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে সিলেটে। বিভিন্ন জায়গায় মিটারে কারচুপি হচ্ছে। যারা বিল তোলে, তারা সঠিক রিডিং নেয় না। গ্রাহকদের এসব হয়রানি তো বন্ধ হচ্ছে প্রিপেইড মিটারে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত