Ajker Patrika

সুনামগঞ্জে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

সদরুল আমিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২১ মে ২০২২, ০১: ১৯
সুনামগঞ্জে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তীব্র হচ্ছে গোখাদ্যের সংকট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বন্যার পানিতে গ্রামাঞ্চলের টিউবওয়েলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি কাদাযুক্ত হওয়ায় ফুটিয়েও পান করা যাচ্ছে না। সিএনজিচালিত অটোচালক সজিব আহমদ বলেন, ‘বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গাড়ি চালাতে পারছি না। খাদ্যসংকটে পরিবারের লোকজন নিয়ে বিপদে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধির দেখা মেলেনি। কেউ সহযোগিতা করেনি।’

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের সঙ্গে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে শুক্রবার দুপুরে দূরপাল্লার যান চলাচল শুরু হয়েছে। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ফায়ার সার্ভিস এলাকা, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও ঝাওয়ার খাড়া সেতুর দুপাশে এখনো কোমরপানি। এ রিপোর্ট (শুক্রবার বিকেলে) লেখা পর্যন্ত সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্যাদুর্গতদের জন্য পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার আব্দুস সত্তার নামের এক কৃষক বলেন, ‘চারদিকে পানি। চার দিন ধরে গরু পানিতে রয়েছে। খড়কুটো যা ছিল, তা বন্যায় ভেসে গেছে। গোখাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’

ঢলের পানির প্রবল স্রোতে আতঙ্কে রয়েছে সুরমা নদীর তীরবর্তী শতাধিক পরিবার। উপজেলার ইসলামপুর, নোয়ারাই, কালারুকা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড় ইউনিয়নসহ অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে থই থই। এসব এলাকার ছোট-বড় প্রায় ৫০টি মাছের খামার ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার প্রায় সবক’টি গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক কৃষকের মাড়াই করা ধান রোদে শুকাতে না পারায় ঘরেই পচে যাচ্ছে। অনেকের কাটা ধান বন্যায় ভেসে গেছে।

কালারুকা ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, এক বিঘা জমির কাটা ধান বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে ও রাস্তায় পানি থাকায় ধান শুকানোর জায়গা নেই। গোখাদ্য-সংকটে বিপাকে পড়েছে শত শত কৃষক পরিবার।

জাউয়া বাজার ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চার দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছি। দোকানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমলেও তা আবার বৃষ্টির কারণে বেড়ে যাচ্ছে।’

ব্যাটারিচালিত অটোচালক সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘বন্যার পানি ঘরে উঠেছে গত মঙ্গলবার। কাঁচা ঘর হওয়ায় যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। আতঙ্কে দিন পার করছি। পানির কারণে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। বিশুদ্ধর পানি ও খাদ্যসংকটে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকার থেকে সাহায্য করেনি।’

গত বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ছাতক-দোয়ারাবাজারের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। 
এদিকে উপজেলা শহরের বাইরে পানিবন্দী মানুষের সরকারি-বেসরকারি পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তাও পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, সুরমা, চেলো ও পিয়াইন নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ইসলামপুর ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব মানুষ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসহায়তার বাইরে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। বানভাসি মানুষের সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত