ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার তাড়ালিয়া গ্রামে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয় পক্ষ। কেটে ফেলা হয় চলাচলের রাস্তাও। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করেও হয়নি কোনো সুরাহা। বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় গ্রামবাসীর সঙ্গে। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। তবে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন যুগ পূর্বে তাড়ালিয়া গ্রামের ৪৫ শতাংশ জমি কিনে বসবাস শুরু করেন জহুরুল হক ও শওকত আলী নামে দুই ভাই। একই মালিকের কাছ থেকে বেশ কিছু জায়গা ক্রয় করেন ওই গ্রামের সুধীর গোপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যেন্দ্র গোপ। ওই সময় থেকে জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবারসহ কয়েকটি পরিবার বাড়ির উত্তর অংশে বিরোধপূর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন।
২০২০ সালে জহুরুল হক ও শওকত আলীর বসবাসকৃত বাড়ির অংশে সুধীর গোপের জায়গা রয়েছে বলে দাবি করেন। সুধীর গোপের দাবির প্রেক্ষিতে ওই বছর সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলও উপস্থিত ছিলেন। সালিস-বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুধীর গোপের দাবি করা জায়গা ছেড়ে দেন জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবার। ওই সময় জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য বিরোধপূর্ণ রাস্তা সংস্কারে সম্মতি দেন সুধীর গোপ ও সত্যেন্দ্র গোপের পরিবার। অনুষ্ঠিত সালিস-বৈঠকে উভয় পক্ষের মনোনীত দুজন করে মোট চারজন ব্যক্তিকে রাস্তা সংস্কারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন সুধীর গোপের মনোনীত শুকুর গোপ, ইরেশ গোপকে এবং জহুরুল হক পক্ষের মনোনীত টনু মিয়া, মুসলিম মিয়া। উভয় পক্ষের মনোনীত চারজন ব্যক্তি ওই রাস্তা সংস্কারকালে জহুরুল হক ও সুধীর গ্রুপের কোনো লোকজন উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। উভয় পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
২০২০ সালের ২০ মে রাস্তা সংস্কার করতে যান জহুরুল হক ও সুধীর গোপ মনোনীত চারজন ব্যক্তি। এ সময় জহুরুল হক ও সুধীর গোপ সালিস-বিচারের নির্দেশ অমান্য করে উক্ত রাস্তা সংস্কারের স্থানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে রাস্তা সংস্কারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষ হয়। এতে দু-পক্ষের ৮-১০ জন আহত হন। এরপর বারবার জহুরুল হকের লোকজন রাস্তা সংস্কার করলে সুধীর গোপের লোকজন রাস্তা কেটে ফেলেন। ফলে কয়েক দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একই ঘটনা নিয়ে ফৌজদারি তিনটি ও দেওয়ানি দুটি মামলা রয়েছে।
এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীর কার্যালয়ে ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু মেলেনি সমাধান। মামলা চলমান অবস্থায় সম্প্রতি উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানাকে জানানো হলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের সমঝোতার চেষ্টা করেন।
গত ২১ মে উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রে সালিস-বৈঠক হয়। সভায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও সার্বিক দিক বিবেচনায় রাস্তাটি বহাল থাকার ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সালিস-বৈঠকেই সুধীর গোপের লোকজন ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের। পরে উভয় পক্ষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না ঘটিয়ে আইনিভাবে মোকাবিলা করার জন্য বলা হয়। জহুরুল হক রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নিতে চাইলেও তাতে সুধীর গ্রুপের লোকজনের সম্মতি ছিল না বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এদিকে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শুভ্র গোপ। তাতে প্রশাসনের সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলা হয়।
রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রভ গোপ বলেন, জমি কিনে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কখনো বলা হয়নি যে উনি (জহুরুল হক) টাকার বিনিময়ে জায়গা নিবেন। বারবার বলা হয়েছে যে উনি আড়াই শ থেকে তিন শ বছর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছে, সে হিসেবে এইটা ওনার অধিকার। গত ১৭ মার্চ যে হামলার ঘটনা বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন এইটা ওনার (জহুরুল হক) স্বাধীনতা। চেয়ারম্যান এই স্বাধীনতা তাঁদের (জহুরুল) দিয়ে দিছেন।’
এ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন শুভ্র গোপ।
অন্যদিকে জহুরুল হক জানান, গত ৩ জুন (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের সময় সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিরোধপূর্ণ রাস্তাটি পুনরায় কেটে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জুম্মার নামাজ শেষে তিনি ও শওকত আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সংঘাত হয়। এ সময় তাঁর পক্ষের সৈয়দুন নেছা (৫০), রুপজান বিবি (৪৫), শাবানা বেগম গুরুতর আহত হন বলে জানান তিনি।
এ হামলায় সুধীর গোপের পক্ষের গুরুতর আহত হন সীতা রানী গোপ (৫০), সুধীর চন্দ্র গোপ (৬৫) ও শুভ্র গোপ (২৭)। উভয় পক্ষ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ ঘটনায় গত রোববার (৫ জুন) নবীগঞ্জ থানায় জহুরুল হক মামলা দায়ের করেন। এতে প্রতিপক্ষের সাতজনকে আসামি করা হয়। একইদিন সুধীর গোপের ছেলে সুচিত্র গোপ বাদী হয়ে জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় পাল্টা একটি মামলা করেন। উভয়ের মামলা রুজু করে পুলিশ।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক শংকর পাল, হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কৌশিক আচার্য্য পায়েলসহ একটি প্রতিনিধি দল নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
উভয়ের প্রতিবেশী টনু মিয়া বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী তাদের দু-পক্ষের বিরোধ মীমাংসায় একাধিক বার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা শোনেনি, আমরা অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে সুধীর গোপের ছেলে শুভ্র গোপ বলেন, ‘জহুরুল ও তাঁর লোকজন গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকুলের মদদে আমাদের জায়গার ওপর দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এতে তাঁরা আমাদের ওপর একাধিকবার হামলা করে এবং মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা দ্রুত আমাদের জায়গা উদ্ধার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে জহুরুল হক বলেন, ‘এই রাস্তা প্রায় দু শ বছরের পুরোনো রাস্তা। আমরা প্রায় তিন যুগ ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। আমাদের কেউ মারা গেলে এই একমাত্র রাস্তা দিয়েই বের হতে হয়। রাস্তার উভয় পাশে সুধীর গোপের জায়গা থাকায় উক্ত রাস্তা সুধীর গোপের জায়গায় বলে দাবি করে বারবার পুরোনো এই রাস্তাটি কেটে ফেলেন। একাধিক বার উপজেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যান, সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দসহ সালিস-বৈঠক করা হলেও সুধীর গোপ ও তাঁর ছেলেরা সালিস-বৈঠকে রায় না মেনে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে। সুধীর গোপের অত্যাচারে আমরা সংখ্যালঘুদের মতো বসবাস করছি। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
এ বিষয়ে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখানে কেউ জায়গা দখল করেনি। ওই রাস্তা দিয়ে যুগ যুগ ধরে জহুরুল হকসহ কয়েকটি পরিবার চলাচল করে আসছে। তবে রাস্তাটি রেকর্ডীয়ভাবে রাস্তা না। আমরা এ বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য একাধিক বার প্রশাসনসহ বসেছি। কিন্তু সমাধান আসেনি। আমিও চাই ওই বিষয়টি মীমাংসা হউক।’
তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে জড়িয়ে তারা ফেসবুকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখালেখি করতেছে, যা দুঃখজনক।’
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ‘মূলত রাস্তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই তাঁদের মধ্যে সমস্যা হয়। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সমাধান করা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষই থানায় দুটি মারামারি মামলা করেছে। আমরা মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার তাড়ালিয়া গ্রামে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয় পক্ষ। কেটে ফেলা হয় চলাচলের রাস্তাও। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করেও হয়নি কোনো সুরাহা। বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় গ্রামবাসীর সঙ্গে। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। তবে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন যুগ পূর্বে তাড়ালিয়া গ্রামের ৪৫ শতাংশ জমি কিনে বসবাস শুরু করেন জহুরুল হক ও শওকত আলী নামে দুই ভাই। একই মালিকের কাছ থেকে বেশ কিছু জায়গা ক্রয় করেন ওই গ্রামের সুধীর গোপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যেন্দ্র গোপ। ওই সময় থেকে জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবারসহ কয়েকটি পরিবার বাড়ির উত্তর অংশে বিরোধপূর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন।
২০২০ সালে জহুরুল হক ও শওকত আলীর বসবাসকৃত বাড়ির অংশে সুধীর গোপের জায়গা রয়েছে বলে দাবি করেন। সুধীর গোপের দাবির প্রেক্ষিতে ওই বছর সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলও উপস্থিত ছিলেন। সালিস-বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুধীর গোপের দাবি করা জায়গা ছেড়ে দেন জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবার। ওই সময় জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য বিরোধপূর্ণ রাস্তা সংস্কারে সম্মতি দেন সুধীর গোপ ও সত্যেন্দ্র গোপের পরিবার। অনুষ্ঠিত সালিস-বৈঠকে উভয় পক্ষের মনোনীত দুজন করে মোট চারজন ব্যক্তিকে রাস্তা সংস্কারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন সুধীর গোপের মনোনীত শুকুর গোপ, ইরেশ গোপকে এবং জহুরুল হক পক্ষের মনোনীত টনু মিয়া, মুসলিম মিয়া। উভয় পক্ষের মনোনীত চারজন ব্যক্তি ওই রাস্তা সংস্কারকালে জহুরুল হক ও সুধীর গ্রুপের কোনো লোকজন উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। উভয় পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
২০২০ সালের ২০ মে রাস্তা সংস্কার করতে যান জহুরুল হক ও সুধীর গোপ মনোনীত চারজন ব্যক্তি। এ সময় জহুরুল হক ও সুধীর গোপ সালিস-বিচারের নির্দেশ অমান্য করে উক্ত রাস্তা সংস্কারের স্থানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে রাস্তা সংস্কারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষ হয়। এতে দু-পক্ষের ৮-১০ জন আহত হন। এরপর বারবার জহুরুল হকের লোকজন রাস্তা সংস্কার করলে সুধীর গোপের লোকজন রাস্তা কেটে ফেলেন। ফলে কয়েক দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একই ঘটনা নিয়ে ফৌজদারি তিনটি ও দেওয়ানি দুটি মামলা রয়েছে।
এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীর কার্যালয়ে ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু মেলেনি সমাধান। মামলা চলমান অবস্থায় সম্প্রতি উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানাকে জানানো হলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের সমঝোতার চেষ্টা করেন।
গত ২১ মে উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রে সালিস-বৈঠক হয়। সভায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও সার্বিক দিক বিবেচনায় রাস্তাটি বহাল থাকার ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সালিস-বৈঠকেই সুধীর গোপের লোকজন ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের। পরে উভয় পক্ষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না ঘটিয়ে আইনিভাবে মোকাবিলা করার জন্য বলা হয়। জহুরুল হক রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নিতে চাইলেও তাতে সুধীর গ্রুপের লোকজনের সম্মতি ছিল না বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এদিকে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শুভ্র গোপ। তাতে প্রশাসনের সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলা হয়।
রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রভ গোপ বলেন, জমি কিনে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কখনো বলা হয়নি যে উনি (জহুরুল হক) টাকার বিনিময়ে জায়গা নিবেন। বারবার বলা হয়েছে যে উনি আড়াই শ থেকে তিন শ বছর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছে, সে হিসেবে এইটা ওনার অধিকার। গত ১৭ মার্চ যে হামলার ঘটনা বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন এইটা ওনার (জহুরুল হক) স্বাধীনতা। চেয়ারম্যান এই স্বাধীনতা তাঁদের (জহুরুল) দিয়ে দিছেন।’
এ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন শুভ্র গোপ।
অন্যদিকে জহুরুল হক জানান, গত ৩ জুন (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের সময় সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিরোধপূর্ণ রাস্তাটি পুনরায় কেটে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জুম্মার নামাজ শেষে তিনি ও শওকত আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সংঘাত হয়। এ সময় তাঁর পক্ষের সৈয়দুন নেছা (৫০), রুপজান বিবি (৪৫), শাবানা বেগম গুরুতর আহত হন বলে জানান তিনি।
এ হামলায় সুধীর গোপের পক্ষের গুরুতর আহত হন সীতা রানী গোপ (৫০), সুধীর চন্দ্র গোপ (৬৫) ও শুভ্র গোপ (২৭)। উভয় পক্ষ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ ঘটনায় গত রোববার (৫ জুন) নবীগঞ্জ থানায় জহুরুল হক মামলা দায়ের করেন। এতে প্রতিপক্ষের সাতজনকে আসামি করা হয়। একইদিন সুধীর গোপের ছেলে সুচিত্র গোপ বাদী হয়ে জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় পাল্টা একটি মামলা করেন। উভয়ের মামলা রুজু করে পুলিশ।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক শংকর পাল, হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কৌশিক আচার্য্য পায়েলসহ একটি প্রতিনিধি দল নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
উভয়ের প্রতিবেশী টনু মিয়া বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী তাদের দু-পক্ষের বিরোধ মীমাংসায় একাধিক বার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা শোনেনি, আমরা অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে সুধীর গোপের ছেলে শুভ্র গোপ বলেন, ‘জহুরুল ও তাঁর লোকজন গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকুলের মদদে আমাদের জায়গার ওপর দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এতে তাঁরা আমাদের ওপর একাধিকবার হামলা করে এবং মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা দ্রুত আমাদের জায়গা উদ্ধার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে জহুরুল হক বলেন, ‘এই রাস্তা প্রায় দু শ বছরের পুরোনো রাস্তা। আমরা প্রায় তিন যুগ ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। আমাদের কেউ মারা গেলে এই একমাত্র রাস্তা দিয়েই বের হতে হয়। রাস্তার উভয় পাশে সুধীর গোপের জায়গা থাকায় উক্ত রাস্তা সুধীর গোপের জায়গায় বলে দাবি করে বারবার পুরোনো এই রাস্তাটি কেটে ফেলেন। একাধিক বার উপজেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যান, সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দসহ সালিস-বৈঠক করা হলেও সুধীর গোপ ও তাঁর ছেলেরা সালিস-বৈঠকে রায় না মেনে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে। সুধীর গোপের অত্যাচারে আমরা সংখ্যালঘুদের মতো বসবাস করছি। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
এ বিষয়ে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখানে কেউ জায়গা দখল করেনি। ওই রাস্তা দিয়ে যুগ যুগ ধরে জহুরুল হকসহ কয়েকটি পরিবার চলাচল করে আসছে। তবে রাস্তাটি রেকর্ডীয়ভাবে রাস্তা না। আমরা এ বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য একাধিক বার প্রশাসনসহ বসেছি। কিন্তু সমাধান আসেনি। আমিও চাই ওই বিষয়টি মীমাংসা হউক।’
তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে জড়িয়ে তারা ফেসবুকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখালেখি করতেছে, যা দুঃখজনক।’
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ‘মূলত রাস্তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই তাঁদের মধ্যে সমস্যা হয়। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সমাধান করা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষই থানায় দুটি মারামারি মামলা করেছে। আমরা মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
গাজীপুরের টঙ্গীতে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার রাত দশটার দিকে টঙ্গীর আউচপাড়ার মোল্লাবাড়ী সড়কের একটি চারতলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে । এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের বাড়িগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে।
১৫ মিনিট আগেগাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার চক্রবর্তী এলাকায় আজ সোমবার আবারও চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করেছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ৭ দিন চন্দ্রা -নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পর রোববারে বেতন দেওয়া হবে এমন আশ্বাসে শ্রমিকেরা গত বৃহস্পতিবার রাতে অবরোধ তুলে ন
৪৪ মিনিট আগেনোয়াখালী হাতিয়ায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ ১৪ জন ডাকাতকে আটক করেছে কোস্টগার্ড । এ বিষয়ে হাতিয়া থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টার সময় তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ৩টার সময় উপজেলার হরণী ইউনিয়নের চর ঘাসিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে বনভোজনে যাওয়া দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায় রয়েছে মন্তব্য করেছে বুয়েটের স্বাধীন কমিটি। আজ সোমবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) গঠিত তদন্ত কমি
১ ঘণ্টা আগে