সংস্কার কাজে কিনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ দুই মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৯: ৩৬

অর্থ বরাদ্দের দুই বছরের বেশি সময় পর সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সংস্কারের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দুই মাস এই সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জানানো হয়, সংস্কার কাজের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিনব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়েছেন সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত। 

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মেরামতের জন্য সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেব। তবে মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের এই সেতুটি বন্ধ হলে নগরবাসীর দুর্ভোগ হবে। নগরের যানজট চরম আকার ধারণ করবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সংশ্লিষ্টরা যেন দ্রুত কাজটি শেষ করেন।’ 

অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার দুই বছরেরও বেশি সময় পরে কাজ শুরু হচ্ছে, সেই কাজে কত দিন লাগবে জনমনে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মার্চে যোগ দিয়েছি। এরপরই কাজটির উদ্যোগ নিয়েছি। নগরবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করব।’ 

নোটিশে বলা হয়, সিলেটের ঐতিহাসিক এই সেতুতে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং, স্টিল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয় হয়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকায় জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিনব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় জনসাধারণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল কিনব্রিজ মেরামতের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠিতে জানানো হয়েছে সংস্কার কাজের জন্য দুই মাস বন্ধ থাকবে কিনব্রিজ।’ 

প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর বলেন, ‘কিনব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামতকাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে। সেতুর কাঠামো যাতে যথাযথ থাকে, এ জন্য রেলওয়েকে সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে।’ 

সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠা কিনব্রিজ নির্মাণ হয় ব্রিটিশ আমলে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে সেতুর নামকরণ হয় ‘কিনব্রিজ’। প্রায় নয় দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। 

অনেক দিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কিনব্রিজ। যান চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে গেছে। তবু ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। কয়েক দফা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) থেকে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন জটিলতায় আটকে যায় সংস্কার কাজ। 

সিলেট নগরীর মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত কিনব্রিজ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কাঠামো। তবে এর দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি ঐতিহ্য। সিলেটের পরিচয় বহনকারী স্থাপত্য এটি। তাই এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যানচলাচল বন্ধ করে ফুটওভার ব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তরের প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকদের দাবির মুখে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত