Ajker Patrika

ফ্যাসিজমের দোসরদের জামিন দুঃখজনক, বললেন সিলেট বিএনপির নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
সিলেটের একটি হোটেলে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিলেটের একটি হোটেলে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফ্যাসিজমের দোসররা যেভাবে একের পর এক জামিন পাচ্ছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। এতে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেটের বিএনপির নেতারা।

তাঁরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিজমের দোসররা যেভাবে একের পর এক জামিন পাচ্ছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে যে গণহত্যাকারী এবং তাদের দোসরদের যথাযথ বিচার হবে কি?

আজ সোমবার নগরীর কুমারপাড়া এলাকার একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে বিএনপি। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা হতবাক হয়েছি, গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ৫টি মামলায় সাবেক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ এবং তাঁর ভাই কামরান আহমদকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সিলেটের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না; যা নিয়ে সিলেটের সচেতন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হাসান কয়েস লোদী বলেন, আপনারা জানেন, জিআর মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকে পুলিশ, আসামি জামিন চাওয়ার আগপর্যন্ত বিষয়টি আদালতের পিপির জানার কোনো সুযোগ থাকে না। ওই দিনেও রেজওয়ান এবং তাঁর ভাই ৫টি মামলায় জামিন চাওয়ার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের পিপিরা জামিনের আপত্তি করেন এবং বিএনপির কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি।

পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় আদালতে থাকা বিএনপির নেতৃবৃন্দ জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে তাঁরা যদি সে সময় জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন, তাহলে আদালত প্রাঙ্গণে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারত। সেটা হলে আদালতের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হতো।

তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে পাঁচটি মামলায় জামিন পাওয়া নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গে দেখা করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে পিপি অফিসে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ফ্যাসিজমের দোসরদের পাওয়া জামিন আইনিভাবে বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন।

অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জুলাই বিপ্লবে, বিশেষ করে গত ৪ আগস্ট নগরীতে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া প্রত্যক্ষ করা গেলেও সেসব অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। উপরন্তু এসব অবৈধ অস্ত্র চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সারা দেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে এসব অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে বিএনপি জিরো টলারেন্সে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর এসব অভিযোগে সিলেট বিএনপি ১০ জনকে বহিষ্কার করেছে। সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ভাঙচুরের সঙ্গে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী জড়িত নেই। এই সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতিকে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ সময় আইনজীবী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলেন, সিলেট জেলা বারে দলীয় নির্বাচন হয় না। এখানে ব্যক্তির ইমেজের ওপর নির্বাচন হয়। মূলত এ কারণেই জাতীয়তাবাদী ফোরামের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি।

এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কতিপয় চিনি-কাণ্ডসহ নানা ঘটনায় সমালোচনার বিষয়ে নেতারা বলেন, কেউ অপরাধ করলে কিংবা দলের নাম ভাঙিয়ে কোনো অপকর্ম করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিগত দিনে এর নজির রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, ডা. আশরাফ আলী, রহিম মল্লিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আনোয়ার হোসেন মানিক, মামুনুর রশীদ মামুন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল, নাদির খান, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত