শাহপরাণ মাজারে মধ্য রাতে সংঘর্ষ, আহত ৩৫ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
Thumbnail image

সিলেটের শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে গভীর রাতে আলেম-জনতার ওপর ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩ দিন থেকে শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস চলছিল। এর আগে সিলেটের আলেম-সমাজ, এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মাজারের খাদিম পরিবার ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি ওরসের নামে অসামাজিক-অনৈসলামিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। 

ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম-সমাজের একটি প্রতিনিধি দল প্রথম দিন থেকেই মাজার এলাকায় অবস্থান করেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতেও তারা মাজারের মসজিদের সিঁড়িতে বসে কোরআন তিলাওয়াত ও গজল পরিবেশন করছিলেন। এ সময় ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাঁধা দু-তিনজন ব্যক্তি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করে। 

একপর্যায়ে তাঁদের ওপর হামলা করে। হামলার শিকার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। খবর পেয়ে আশপাশের এলাকার লোকজন ও বিভিন্ন মাদ্রাসার লোকজন এসে হামলাকারীদের ধাওয়া দেন। মসজিদে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র-শিক্ষককে উদ্ধার করেন। হামলাকারীরা পুলিশের উপস্থিতিতে ওরসে আসা লোকজনের তাবু, মাজারের সিসি ক্যামেরা, অফিস কক্ষ ভাঙচুর করে। এতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দেয় সাদই ও তার ছেলে সুফিয়ান সহ মাজার বিরোধী চক্রের সদস্যরা। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হন। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

আলেম-সমাজের অভিযোগ, শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উত্তেজনা শুরু হওয়ামাত্র তারা সেখান থেকে চলে যায়। শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তাঁরা ওরসে আসা মাদকসেবী ও মাথায় লাল কাপড় বাঁধা কিছু লোককে (পাগল) পরিস্থিতি অশান্ত করতে উসকানি দিয়েছে। পরে তারা অতর্কিত আমাদের ওপর হামলা চালায়। 

সিলেটের শাহপরাণ (রাহ.) মাজার। ছবি: আজকের পত্রিকাশাহপরাণ (রাহ.) মাজারের খাদেম সৈয়দ কাবুল আহমদ বলেন, ‘সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০-৩৫ জন আহত হয়েছে। রাত সাড়ে ৪টায় সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু শুরু থেকে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা সার্বিক তথ্য-প্রমাণ নিয়ে সকলের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইনি পদক্ষেপ নেব।’ 

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন (নাদিম) আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি চক্র মাজার ভাঙচুর করে এলাকাবাসী ও হুজুরদের ওপর দায় দিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করতে চেয়েছিল। এলাকাবাসী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ মিলে আমরা তা প্রতিহত করেছি। মাজারের কোনো ধরনে ক্ষতি হতে দিইনি। সাদই ও তার ছেলে সুফিয়ানসহ মাজার বিরোধী চক্রের সদস্যদের উসকানি ও নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটেছে। 

সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে কিছু পাগল উচ্ছৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। পাগলের সঙ্গে ছাত্রদের মুখোমুখি হয়। একটা বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে মারামারির সৃষ্টি হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত