তামান্না-ই-জাহান
মনে করেন, বেড়াতে গেছেন বিশ্ব বিনোদনের রাজধানী খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানকার কোনো স্টেশনে বসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ একজন আপনার কাছে এসে বলল, ‘কুহসডাক বালু য়া!’ আপনি হতবাক হয়ে ভাবলেন, এ আবার কোন এলিয়েন! কিন্তু না, ভীনগ্রহের নয়, এমন ভাষার অস্তিত্ব পৃথিবীতেই রয়েছে। আর এই শব্দগুচ্ছের নির্দিষ্ট অর্থও আছে। যেমন, ‘quSDaq ba’lu’’a’ অর্থ হলো—‘এই আসন কি খালি আছে?’
গল্পের প্রয়োজনে সৃষ্টি করা এই ভাষার নাম ক্লিনগন। যা শিখতে শিক্ষক ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এমনকি হয়েছে বর্ণান্তকরণ এবং অনুবাদও। সাহিত্য এবং সিনেমার প্রয়োজনে নির্মিত এমন কয়েকটি কৃত্রিম ভাষা নিয়ে চলুন জানা যাক—
ক্লিনগন: স্টার ট্রেক
শুরুতেই উল্লেখ করা এই ফিকশনাল ভাষাটি কৃত্রিম ভাষার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে ধরা হয়। ভাষাবিজ্ঞানী মার্ক ওকরান্ড বিখ্যাত টেলিভিশন সিরিজ স্টার ট্রেক–এ ‘ক্লিনগন’ জাতির বিশেষ ধরনের ভাষাকে সামনে আনেন। ভক্তরা পরবর্তীতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং গান লেখাতে এই ভাষার ব্যবহার করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, শেক্সপিয়ারের নাটক হ্যামলেট পর্যন্ত অনুদিত হয় ক্লিনগনে। প্রায়ই ভাষাটি ইংরেজিতে বর্ণান্তকরণ ও অনুবাদ করে লেখা হয়। এই ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো—‘bortaS bIr jablu'DI' reH QaQqu' nay. ’—‘প্রতিশোধ এমন একটি খাবারের পদ, যা ঠান্ডা পরিবেশন উত্তম।’
নিউজপিক: ১৯৮৪
জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসের মূল চরিত্র উইনস্টন স্মিথ, একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সদস্য। সমস্যা হলো, পার্টির প্রধান ‘বিগ ব্রাদার’ সব সময় তাঁর ওপর নজর রাখেন। রাজনৈতিক বিদ্রোহকে দমন করতে যোগাযোগে গোপনীয়তার জন্য একটি ভাষা তৈরি করেন স্মিথ। গল্পের প্রয়োজনেই ‘নিউজপিক’ নামের ভাষাটি তখন সৃষ্টি করেন জর্জ অরওয়েল। তবে তিনি হয়তো তখন ভাবেননি যে পরবর্তীতে এই উপন্যাস থেকে সিনেমা হবে এবং ‘নিউজপিক’ ভাষাটিও কাজে লাগবে।
নিউজপিক মূলত ইংরেজিরই একটি রূপ, যার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এটিকে একটি ভাষা হিসেবে যথেষ্ট সহজ শোনালেও এটি তৈরিতে অরওয়েলকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। একবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি তৈরি করা অনেকটা জটিল ছিল। একজন পাঠক কিংবা দর্শকের জন্য যাতে জটিল না হয় তা মাথায় রাখতে হয়েছিল।’
না’ভি: অ্যাভাটার
অস্কারজয়ী নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের সৃষ্টিশীলতার গল্প আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। টাইটানিকের পর এই চলচ্চিত্র পরিচালক ২০০৯ সালে ‘অ্যাভাটার’ দিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন। সিনেমাটিতে প্যান্ডোরা গ্রহের বাসিন্দা না’ভি জাতিগোষ্ঠীকে যথেষ্ট বাস্তব করে ফুটিয়ে তুলতে একটি স্বতন্ত্র ভাষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতে তাঁকে সাহায্য করেন ভাষাবিজ্ঞানী বন্ধু পল ফ্রমার। তিনি বিস্তৃত শব্দভান্ডার, আর ব্যাকরণের মধ্য দিয়ে উদ্ভাবন করেন নতুন এক প্রকাশভঙ্গির। দর্শকেরাও দারুণভাবে এটি গ্রহণ করেছেন।
অ্যাভাটারের সিক্যুয়েল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর। এই সিনেমাও বিপুল সাড়া ফেলেছে। ২০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করে সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার তকমা জিতে নিয়েছে এটি। অ্যাভাটারে ব্যবহৃত না’ভি ভাষার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—‘Oel ngati kameie. ’—‘আমি তোমাকে দেখছি।’
নাদসাত: অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ
অ্যান্থনি বার্গেসের উপন্যাস ‘অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছেন প্রখ্যাত নির্মাতা স্ট্যানলি কুব্রিক। এই ছবিতে ‘নাদসাত’ ভাষার সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করান নির্মাতা। ‘নাদসাত’ মূলত রুশ-প্রভাবিত ইংরেজি ভাষা, নামটিও রুশ ভাষার উপসর্গ থেকে নেওয়া। এটিতে কিছু রুশ শব্দ এবং বাক্যাংশ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু ইংরেজি স্ল্যাং যেমন, ‘সড অফ’ (ভাগো বা দূর হও) এবং শিশুদের মতো করে উচ্চারিত শব্দ রয়েছে—‘অ্যাপি পোলি লজি’ অর্থাৎ অ্যাপোলজি। বার্গেস নিজেই উপন্যাসটি লেখার সময় এটি তৈরি করেছিলেন, কারণ তিনি একজন ভাষাবিদও।
নাদসাত ভাষার উদাহরণ: ‘black toast dipped in jammiwam and eggiweg’। এর অর্থ দাঁড়ায়—‘জ্যাম ও ডিমে চুবানো কালো টোস্ট।’
ডথরাকি: গেম অব থ্রোনস
জর্জ আর আর মার্টিনের বেস্টসেলার ‘অ্যা সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ারস’ উপন্যাসে অশ্বারোহী যাযাবর গোষ্ঠী ডথরাকির বিবরণ রয়েছে। এতে ডথরাকিদের ব্যবহৃত ভাষার অল্প কিছু শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। পরে টেলিভিশন সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এ ডেভিড পিটারসন কয়েকটি শব্দ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা নির্মাণ করেন। সিরিজটিতে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের উচ্চারণ ছিল প্রশংসনীয়। আর এ কারণেই দর্শক-ভক্তদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ভাষা। ‘গেম অব থ্রোনস’ ভক্তরা শিখে ফেলেন—‘YER SHEKH MA SHIERAKI ANNI’ বা ‘তুমি আমার সূর্য-তারা।’ কিংবা ‘YER JALAN ATTHIRARI ANNI’—‘তুমি আমার জীবনের চন্দ্র।’
পার্সেলটাং: হ্যারি পটার
বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজে অনেকগুলো চিত্তাকর্ষক কৃত্রিম ভাষা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ‘পার্সেলটাং’ সবচেয়ে আলাদা। গল্পে সাপেদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ‘পার্সেলটাং’ ভাষা ব্যবহৃত হয়। এই ভাষা আবার সবার বোঝার ক্ষমতা নেই। কিছু প্রতিভাধর জাদুকরই কেবল এটি বুঝতে পারেন। আর ‘হ্যারি পটার’ সিরিজে তাঁদের পরিচিতি পার্সেলমাউথ হিসেবে।
পার্সেলটাং ভাষা প্রথম শোনা যায়, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস’ সিনেমায়। সিরিজের শেষ সিনেমা ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস: পার্ট টু’তে কেন্দ্রীয় চরিত্র হ্যারির এই ভাষা বোঝার ক্ষমতা থাকে। ‘পার্সেলটাং’ যখন উচ্চারিত হয়, সাপের মতো হিস হিস শব্দ হয়। যেমন, এই ভাষায় হ্যালো–এর অনুবাদ হলো—‘সীতাআ-সসে-হাতেহহ-হাতেহহ-আয়াইহ’।
হাটিজ: স্টার ওয়ারস
স্টার ওয়ারস সাউন্ড ডিজাইনার বেন বার্ট ১৯৮৩ সালে ‘রিটার্ন অব দ্য জেডাই’-এর জন্য হাটিজ ভাষা তৈরি করেন। আন্দিজ পবর্তমালায় পেরু এলাকায় প্রচলিত কুয়েচুয়া নামক একটি প্রাচীন উপভাষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাষাটি তৈরি করেন তিনি। এটি একটি কাল্পনিক ভাষা, যা মূলত স্টার ওয়ার্সের ফিকশনাল চরিত্র ‘জাব্বা দ্য হাট’ ও তার প্রজাতি তাতুইনের ভাষা। তবে পরবর্তীতে অন্যান্য অনেক চরিত্রকেও হাটিজ ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। এই ভাষা এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, তা শেখার জন্য ইউটিউবে টিউটোরিয়াল পর্যন্ত রয়েছে। উদাহরণ: ‘Hi chuba na daga?’ —‘তুমি কী চাও?’
মিনিয়নিজ: ডেসপিকেবল মি
অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘ডেসপিকেবল মি’-এর সহনির্মাতা পিয়েরে কফিন ছবির প্রয়োজনে মিনিয়নিজ তৈরি করেন। যদিও ভাষাটির কোনো অর্থ নেই, শুনতে অনেকটা শিশুর অর্থহীন বোলের মতো জড়ানো শব্দ। পিয়েরে কফিন স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইংরেজিসহ কয়েকটি ভাষা থেকে মিনিয়নিজ ধার নিয়েছেন। এসব ভাষার এমন সংমিশ্রণ পিয়েরে করেছেন, যার কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। উদাহরণ: ‘Le jori e’ tu’—‘ভালো কিংবা খারাপের জন্য।’
রাতে শহিদ মিনারে ধাক্কাধাক্কি, দুপুরে মারামারি করে দুই মহিলা লীগ নেত্রী হাসপাতালে
এলভিশ: হবিট এবং লর্ড অব দ্য রিংস
উপন্যাসিক জে আর আর টলকিন ছিলেন বিচক্ষণ ভাষাতাত্ত্বিক। কোনো বিখ্যাত লেখা শুরুর আগেই তিনি একটি ভাষা সৃষ্টির প্রাণান্ত চেষ্টা চালাতেন। ‘হবিট’ এবং ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ রচনার সময় ব্যবহৃত হয় নতুন এক ভাষা; পরিচিতি পায় এলভিশ নামে। এটি পরে পিটার জ্যাকসন পরিচালিত চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। ভক্তদের কাছে এই ভাষা দুটি গঠনের কারণেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রথমত, কুয়েনইয়া, আর দ্বিতীয়ত সিনডারিন। উভয় ভাষাই গড়ে উঠেছে ফিনিশ এবং ওয়েলশের ভাষার ওপর ভিত্তি করে। সেই সঙ্গে রয়েছে কিছুটা গ্রিক ও লাতিনের সংমিশ্রণ। উদাহরণ: ‘Êl síla erin lû e-govaned vîn. ’—‘আমাদের মিলন মুহূর্তে আলো দেয় একটি নক্ষত্র।’
আটলান্টিন: আটলান্টিস: দ্য লস্ট এম্পায়ার
ডিজনির সিনেমা বর্তমান বিশ্বকে কিছু স্মরণীয় নতুন ভাষা উপহার দিয়েছে। তবে ডিজনির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা আটলান্টিন। ‘আটলান্টিস: দ্য লস্ট এম্পায়ার’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয় এই কৃত্রিম ভাষা। এটি প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের ভাষার ওপর ভিত্তি করে এবং বাইবেলের হিব্রু, লাতিন, গ্রিক ও চীনা ভাষার সংমিশ্রণ।
ডিজনি ভাষা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিল মার্ক ওকরান্ডকে। তিনি ক্লিনগন ভাষা তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন। ডিজনি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সিনেমাটি যখন নির্মিত হয়, তখন আটলান্টিনকে শুধু ধ্বনিগতভাবে লেখা হয়েছিল। ২০০১ সালে সিনেমা মুক্তির আগ পর্যন্ত এর লেখ্যরীতি অর্থাৎ বর্ণমালা ছিল না।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দখলে যাচ্ছে। আসন্ন সময়কে ধরা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বর্ণযুগ হিসেবে। এর মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে ‘চ্যাটজিপিটি’ নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট। ‘চ্যাটজিপিটি’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রোগ্রামিং কোড লেখার পাশাপাশি কয়েক সেকেন্ডে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এমনকি নিজ থেকে বিভিন্ন বার্তা, নিবন্ধ বা কবিতাও লিখতে পারে। প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ে তাই সিনেমা-সিরিজে গুরুত্ব পাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে ভবিষ্যতে পর্দায় কৃত্রিম ভাষার ব্যবহারও যে বাড়বে তা অনুমেয়। এখন দেখার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রায় কৃত্রিম ভাষা ঠিক কতখানি প্রভাব ফেলে।
মনে করেন, বেড়াতে গেছেন বিশ্ব বিনোদনের রাজধানী খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানকার কোনো স্টেশনে বসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ একজন আপনার কাছে এসে বলল, ‘কুহসডাক বালু য়া!’ আপনি হতবাক হয়ে ভাবলেন, এ আবার কোন এলিয়েন! কিন্তু না, ভীনগ্রহের নয়, এমন ভাষার অস্তিত্ব পৃথিবীতেই রয়েছে। আর এই শব্দগুচ্ছের নির্দিষ্ট অর্থও আছে। যেমন, ‘quSDaq ba’lu’’a’ অর্থ হলো—‘এই আসন কি খালি আছে?’
গল্পের প্রয়োজনে সৃষ্টি করা এই ভাষার নাম ক্লিনগন। যা শিখতে শিক্ষক ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এমনকি হয়েছে বর্ণান্তকরণ এবং অনুবাদও। সাহিত্য এবং সিনেমার প্রয়োজনে নির্মিত এমন কয়েকটি কৃত্রিম ভাষা নিয়ে চলুন জানা যাক—
ক্লিনগন: স্টার ট্রেক
শুরুতেই উল্লেখ করা এই ফিকশনাল ভাষাটি কৃত্রিম ভাষার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে ধরা হয়। ভাষাবিজ্ঞানী মার্ক ওকরান্ড বিখ্যাত টেলিভিশন সিরিজ স্টার ট্রেক–এ ‘ক্লিনগন’ জাতির বিশেষ ধরনের ভাষাকে সামনে আনেন। ভক্তরা পরবর্তীতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং গান লেখাতে এই ভাষার ব্যবহার করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, শেক্সপিয়ারের নাটক হ্যামলেট পর্যন্ত অনুদিত হয় ক্লিনগনে। প্রায়ই ভাষাটি ইংরেজিতে বর্ণান্তকরণ ও অনুবাদ করে লেখা হয়। এই ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো—‘bortaS bIr jablu'DI' reH QaQqu' nay. ’—‘প্রতিশোধ এমন একটি খাবারের পদ, যা ঠান্ডা পরিবেশন উত্তম।’
নিউজপিক: ১৯৮৪
জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসের মূল চরিত্র উইনস্টন স্মিথ, একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সদস্য। সমস্যা হলো, পার্টির প্রধান ‘বিগ ব্রাদার’ সব সময় তাঁর ওপর নজর রাখেন। রাজনৈতিক বিদ্রোহকে দমন করতে যোগাযোগে গোপনীয়তার জন্য একটি ভাষা তৈরি করেন স্মিথ। গল্পের প্রয়োজনেই ‘নিউজপিক’ নামের ভাষাটি তখন সৃষ্টি করেন জর্জ অরওয়েল। তবে তিনি হয়তো তখন ভাবেননি যে পরবর্তীতে এই উপন্যাস থেকে সিনেমা হবে এবং ‘নিউজপিক’ ভাষাটিও কাজে লাগবে।
নিউজপিক মূলত ইংরেজিরই একটি রূপ, যার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এটিকে একটি ভাষা হিসেবে যথেষ্ট সহজ শোনালেও এটি তৈরিতে অরওয়েলকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। একবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি তৈরি করা অনেকটা জটিল ছিল। একজন পাঠক কিংবা দর্শকের জন্য যাতে জটিল না হয় তা মাথায় রাখতে হয়েছিল।’
না’ভি: অ্যাভাটার
অস্কারজয়ী নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের সৃষ্টিশীলতার গল্প আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। টাইটানিকের পর এই চলচ্চিত্র পরিচালক ২০০৯ সালে ‘অ্যাভাটার’ দিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন। সিনেমাটিতে প্যান্ডোরা গ্রহের বাসিন্দা না’ভি জাতিগোষ্ঠীকে যথেষ্ট বাস্তব করে ফুটিয়ে তুলতে একটি স্বতন্ত্র ভাষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতে তাঁকে সাহায্য করেন ভাষাবিজ্ঞানী বন্ধু পল ফ্রমার। তিনি বিস্তৃত শব্দভান্ডার, আর ব্যাকরণের মধ্য দিয়ে উদ্ভাবন করেন নতুন এক প্রকাশভঙ্গির। দর্শকেরাও দারুণভাবে এটি গ্রহণ করেছেন।
অ্যাভাটারের সিক্যুয়েল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমা বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর। এই সিনেমাও বিপুল সাড়া ফেলেছে। ২০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করে সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার তকমা জিতে নিয়েছে এটি। অ্যাভাটারে ব্যবহৃত না’ভি ভাষার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—‘Oel ngati kameie. ’—‘আমি তোমাকে দেখছি।’
নাদসাত: অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ
অ্যান্থনি বার্গেসের উপন্যাস ‘অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছেন প্রখ্যাত নির্মাতা স্ট্যানলি কুব্রিক। এই ছবিতে ‘নাদসাত’ ভাষার সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করান নির্মাতা। ‘নাদসাত’ মূলত রুশ-প্রভাবিত ইংরেজি ভাষা, নামটিও রুশ ভাষার উপসর্গ থেকে নেওয়া। এটিতে কিছু রুশ শব্দ এবং বাক্যাংশ রয়েছে। এ ছাড়া কিছু ইংরেজি স্ল্যাং যেমন, ‘সড অফ’ (ভাগো বা দূর হও) এবং শিশুদের মতো করে উচ্চারিত শব্দ রয়েছে—‘অ্যাপি পোলি লজি’ অর্থাৎ অ্যাপোলজি। বার্গেস নিজেই উপন্যাসটি লেখার সময় এটি তৈরি করেছিলেন, কারণ তিনি একজন ভাষাবিদও।
নাদসাত ভাষার উদাহরণ: ‘black toast dipped in jammiwam and eggiweg’। এর অর্থ দাঁড়ায়—‘জ্যাম ও ডিমে চুবানো কালো টোস্ট।’
ডথরাকি: গেম অব থ্রোনস
জর্জ আর আর মার্টিনের বেস্টসেলার ‘অ্যা সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ারস’ উপন্যাসে অশ্বারোহী যাযাবর গোষ্ঠী ডথরাকির বিবরণ রয়েছে। এতে ডথরাকিদের ব্যবহৃত ভাষার অল্প কিছু শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। পরে টেলিভিশন সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এ ডেভিড পিটারসন কয়েকটি শব্দ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা নির্মাণ করেন। সিরিজটিতে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের উচ্চারণ ছিল প্রশংসনীয়। আর এ কারণেই দর্শক-ভক্তদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ভাষা। ‘গেম অব থ্রোনস’ ভক্তরা শিখে ফেলেন—‘YER SHEKH MA SHIERAKI ANNI’ বা ‘তুমি আমার সূর্য-তারা।’ কিংবা ‘YER JALAN ATTHIRARI ANNI’—‘তুমি আমার জীবনের চন্দ্র।’
পার্সেলটাং: হ্যারি পটার
বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজে অনেকগুলো চিত্তাকর্ষক কৃত্রিম ভাষা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ‘পার্সেলটাং’ সবচেয়ে আলাদা। গল্পে সাপেদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ‘পার্সেলটাং’ ভাষা ব্যবহৃত হয়। এই ভাষা আবার সবার বোঝার ক্ষমতা নেই। কিছু প্রতিভাধর জাদুকরই কেবল এটি বুঝতে পারেন। আর ‘হ্যারি পটার’ সিরিজে তাঁদের পরিচিতি পার্সেলমাউথ হিসেবে।
পার্সেলটাং ভাষা প্রথম শোনা যায়, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস’ সিনেমায়। সিরিজের শেষ সিনেমা ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস: পার্ট টু’তে কেন্দ্রীয় চরিত্র হ্যারির এই ভাষা বোঝার ক্ষমতা থাকে। ‘পার্সেলটাং’ যখন উচ্চারিত হয়, সাপের মতো হিস হিস শব্দ হয়। যেমন, এই ভাষায় হ্যালো–এর অনুবাদ হলো—‘সীতাআ-সসে-হাতেহহ-হাতেহহ-আয়াইহ’।
হাটিজ: স্টার ওয়ারস
স্টার ওয়ারস সাউন্ড ডিজাইনার বেন বার্ট ১৯৮৩ সালে ‘রিটার্ন অব দ্য জেডাই’-এর জন্য হাটিজ ভাষা তৈরি করেন। আন্দিজ পবর্তমালায় পেরু এলাকায় প্রচলিত কুয়েচুয়া নামক একটি প্রাচীন উপভাষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাষাটি তৈরি করেন তিনি। এটি একটি কাল্পনিক ভাষা, যা মূলত স্টার ওয়ার্সের ফিকশনাল চরিত্র ‘জাব্বা দ্য হাট’ ও তার প্রজাতি তাতুইনের ভাষা। তবে পরবর্তীতে অন্যান্য অনেক চরিত্রকেও হাটিজ ভাষায় কথা বলতে দেখা যায়। এই ভাষা এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, তা শেখার জন্য ইউটিউবে টিউটোরিয়াল পর্যন্ত রয়েছে। উদাহরণ: ‘Hi chuba na daga?’ —‘তুমি কী চাও?’
মিনিয়নিজ: ডেসপিকেবল মি
অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘ডেসপিকেবল মি’-এর সহনির্মাতা পিয়েরে কফিন ছবির প্রয়োজনে মিনিয়নিজ তৈরি করেন। যদিও ভাষাটির কোনো অর্থ নেই, শুনতে অনেকটা শিশুর অর্থহীন বোলের মতো জড়ানো শব্দ। পিয়েরে কফিন স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইংরেজিসহ কয়েকটি ভাষা থেকে মিনিয়নিজ ধার নিয়েছেন। এসব ভাষার এমন সংমিশ্রণ পিয়েরে করেছেন, যার কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। উদাহরণ: ‘Le jori e’ tu’—‘ভালো কিংবা খারাপের জন্য।’
রাতে শহিদ মিনারে ধাক্কাধাক্কি, দুপুরে মারামারি করে দুই মহিলা লীগ নেত্রী হাসপাতালে
এলভিশ: হবিট এবং লর্ড অব দ্য রিংস
উপন্যাসিক জে আর আর টলকিন ছিলেন বিচক্ষণ ভাষাতাত্ত্বিক। কোনো বিখ্যাত লেখা শুরুর আগেই তিনি একটি ভাষা সৃষ্টির প্রাণান্ত চেষ্টা চালাতেন। ‘হবিট’ এবং ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ রচনার সময় ব্যবহৃত হয় নতুন এক ভাষা; পরিচিতি পায় এলভিশ নামে। এটি পরে পিটার জ্যাকসন পরিচালিত চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। ভক্তদের কাছে এই ভাষা দুটি গঠনের কারণেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রথমত, কুয়েনইয়া, আর দ্বিতীয়ত সিনডারিন। উভয় ভাষাই গড়ে উঠেছে ফিনিশ এবং ওয়েলশের ভাষার ওপর ভিত্তি করে। সেই সঙ্গে রয়েছে কিছুটা গ্রিক ও লাতিনের সংমিশ্রণ। উদাহরণ: ‘Êl síla erin lû e-govaned vîn. ’—‘আমাদের মিলন মুহূর্তে আলো দেয় একটি নক্ষত্র।’
আটলান্টিন: আটলান্টিস: দ্য লস্ট এম্পায়ার
ডিজনির সিনেমা বর্তমান বিশ্বকে কিছু স্মরণীয় নতুন ভাষা উপহার দিয়েছে। তবে ডিজনির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা আটলান্টিন। ‘আটলান্টিস: দ্য লস্ট এম্পায়ার’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয় এই কৃত্রিম ভাষা। এটি প্রাচীন ব্যাবিলনীয়দের ভাষার ওপর ভিত্তি করে এবং বাইবেলের হিব্রু, লাতিন, গ্রিক ও চীনা ভাষার সংমিশ্রণ।
ডিজনি ভাষা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিল মার্ক ওকরান্ডকে। তিনি ক্লিনগন ভাষা তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন। ডিজনি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সিনেমাটি যখন নির্মিত হয়, তখন আটলান্টিনকে শুধু ধ্বনিগতভাবে লেখা হয়েছিল। ২০০১ সালে সিনেমা মুক্তির আগ পর্যন্ত এর লেখ্যরীতি অর্থাৎ বর্ণমালা ছিল না।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দখলে যাচ্ছে। আসন্ন সময়কে ধরা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বর্ণযুগ হিসেবে। এর মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে ‘চ্যাটজিপিটি’ নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট। ‘চ্যাটজিপিটি’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রোগ্রামিং কোড লেখার পাশাপাশি কয়েক সেকেন্ডে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এমনকি নিজ থেকে বিভিন্ন বার্তা, নিবন্ধ বা কবিতাও লিখতে পারে। প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ে তাই সিনেমা-সিরিজে গুরুত্ব পাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে ভবিষ্যতে পর্দায় কৃত্রিম ভাষার ব্যবহারও যে বাড়বে তা অনুমেয়। এখন দেখার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রায় কৃত্রিম ভাষা ঠিক কতখানি প্রভাব ফেলে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪