আলতাফ পারভেজ
ভারতে ২৮টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির তুলনা করলে সর্বভারতীয় পটভূমিতে আসামের অবস্থান সহজে বোঝা যায়। ভারতের জনসংখ্যায় আসামের হিস্যা (২০১১-এর হিসাবে) ২.৫৮ শতাংশ। আয়তনে হিস্যা ২.৩৯ শতাংশ। কিন্তু জিডিপিতে হিস্যা মাত্র ১.৭০ শতাংশ। আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির হিস্যাগত এই তুলনায় আসামের অবস্থান ভারতের প্রথম ১৫টি রাজ্যের মধ্যেও নয়। ১৯৫০-৫১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে আসাম ভারতীয় গড়ের চেয়ে ৫০ রুপি ওপরে ছিল। সত্তর বছর পরে ২০১৮ সালে দৃশ্যটি ছিল—ভারতে যখন মাথাপিছু আয় গড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৭০ রুপি, আসামে তা ৬৭ হাজার ৬২০ রুপি। বৃহত্তর ভারতের পটভূমিতে আসামের পিছিয়ে পড়ার একটা বড় কারণ নিহিত দেশটির সংবিধানেই। বিশেষত, কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের মাঝে।
অনেক সময় বলা হয়, আসাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা বলেই দরিদ্র। এরূপ প্রচারণাও চলে মূলত আসামের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের রাজনৈতিক অর্থনীতি আড়াল করে। বাস্তবে ভারতে ২০১৮ সালের জুনে ৬৪০টি জেলায় শুমারির ভিত্তিতে যে ‘দুর্যোগ সূচক’ তৈরি হয়, তাতে সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ রাজ্য ছিল যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশ। আসামের অবস্থান ছিল সেখানে সপ্তম। সমস্যাটি কাঠামোগত, কিন্তু রাজনৈতিক পণ্য হলো ‘বিদেশি খেদাও’।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলোর হাতে করের উৎস সীমিত। যেমন কৃষি আয় ও কৃষিজ ভূসম্পদের ওপর কর, মদজাতীয় পানীয়র ওপর আবগারি শুল্ক, যানবাহনের মতো স্বল্প আয়ের ক্ষেত্রগুলো ছাড়া আয়কর থেকে করপোরেট কর পর্যন্ত করের প্রধান উৎসগুলো কেন্দ্রের হাতেই। এসব আয় থেকে যদিও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোতে নানাভাবে বরাদ্দ দেয়; কিন্তু কর প্রক্রিয়াটির আইনগত ভিত্তি ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-১৯৩৫’-এর মতোই রয়েছে বলা যায়। ভারতকে ‘ফেডারেল রাষ্ট্র’ বলা হলেও করারোপ আর তা থেকে রাজ্যপ্রতি বরাদ্দ এবং এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার ধরনে রয়েছে অতিকেন্দ্রীভূত বৈশিষ্ট্যের ছাপ। কেন্দ্রের হাতে করের প্রধান উৎসগুলো রেখে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনের মতো খাতগুলোর দায়িত্ব বর্তেছে রাজ্য সরকারের ওপর। এমন পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেই আসামের অনেক সংগঠন স্থানীয় তরুণদের তাদের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত করেছিল অতীতে। তবে একপর্যায়ে তারাও অর্থনৈতিক বঞ্চনা সংশোধনের প্রশ্ন বা প্রশাসনিক স্বশাসনের পরিবর্তে ‘বিদেশি খেদাও’ রাজনীতিতে আত্মসমর্পণ করে।
যে কারণে ‘বিদেশি’ প্রশ্ন সামনে
আসামের অর্থনীতির পিছিয়ে পড়া চরিত্রের সঙ্গে রাজ্যটির রাজনীতি ও রাজনৈতিক প্রশাসনের রয়েছে গভীর যোগ। আবার লোকসভায় মাত্র ১৪ জন সদস্য থাকায় আসাম ভারতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখতে পারে সামান্যই। ভারতের মধ্যে আসামের এই বিধিবদ্ধ সীমাবদ্ধতা রাজনীতির মঞ্চে আড়াল করে রাখা হয় সচেতনভাবে। তার বদলে নিয়মিতভাবে প্রধান প্রসঙ্গ করে রাখা হয়েছে জাতিগত বিবাদ এবং ‘অবৈধ অভিবাসন’ ইস্যুকে। বলা হয়, অবৈধ বিদেশিরাই আসামের অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করে রেখেছে। আসামের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার চেয়ে জরুরি হলো অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো।
অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব থেকে ‘বিদেশি’ প্রশ্নে রাজনৈতিক প্রচারণার মোড় ঘোরানোর ফল হয়েছে তাৎপর্যময়। এর মাধ্যমে আসামে তরুণদের সামনে থেকে ‘প্রতিপক্ষ’ পাল্টে দেওয়া গেছে। জনগণের প্রায় ৭৫ শতাংশ জীবনযাত্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিসংশ্লিষ্ট হলেও আসামের অবিকশিত এই খাত থেকে নবীন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছিল না। রাজ্যের জিডিপিতে কৃষি মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে। আবার সরকার বিকল্প খাত সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতেও ছিল অসমর্থ। রাজ্যটির জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অবদান ১০ শতাংশের মতো। ভারতের অন্যত্র গড়ে তা আসামের দ্বিগুণ। ভারতের একটি রাষ্ট্রীয় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আসামে বছরে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা দরকার। কিন্তু বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ভারতের জাতীয় হারের চেয়ে আসামে বেকারত্বের হার তিন গুণ বেশি। এ রকম তরুণদের সামনে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের একটা কারণ হাজির করা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসামের রাজ্য সরকারের জন্য জরুরি ছিল। ‘বিদেশি’ প্রসঙ্গের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টার্গেট করে সেটাই সৃষ্টি করা গিয়েছিল।
কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের যাওয়ার বাস্তব কারণ নেই লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত ‘অবৈধ অভিবাসন’ নিয়ে উচ্চকিত হলেও নেপাল সীমান্তে তাদের অবস্থান তদ্রূপ নয়। অথচ নেপাল সীমান্তটি প্রায় উন্মুক্ত। বাংলাদেশ-আসাম সীমান্ত ২৬২ কিলোমিটার মাত্র, সেখানে নেপাল-ভারত সীমান্ত প্রায় সাত গুণ দীর্ঘ—১ হাজার ৭৫৮ কিলোমিটার। এই সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্রচুর নেপালি ভারতে অবস্থানও করছে। কিন্তু তাদের ‘বিদেশি খেদাও’ধর্মী কোনো আন্দোলনের শিকার হতে হচ্ছে না।
উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বরাবরই অভিবাসীদের সস্তা শ্রমকে সহায়ক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অভিবাসন কোনো দেশের অর্থনীতিতে অভিশাপ না আশীর্বাদ, সে বিতর্ক আসামের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিকই মনে হয়। কারণ, আসামের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নই তোলা যায়, সেখানকার অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা আদৌ ব্যাপকভিত্তিক অভিবাসনের ধারণাকে সমর্থন করে কি? আরেকটি প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশিদের আসামে যাওয়ার কোনো অর্থনৈতিক বাস্তবতা আছে কি? এর সরাসরি উত্তর হলো, আসামের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক চিত্র বড় আকারে অভিবাসনের ধারণা সমর্থন করে না।
দরিদ্রদের জন্য আসাম কি প্রলুব্ধকর জায়গা
সাধারণভাবে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ও ভারত কাছাকাছি অবস্থানে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এইচডিআইয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ১৩০ এবং বাংলাদেশের ১৩৬। ২০২২ সালে একই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯১ দেশের মধ্যে ১২৯, ভারতের ১৩২।
তবে ভারত-বাংলাদেশ কাছাকাছি থাকলেও আসামের সঙ্গে তুলনা করলে অধিকাংশ মৌলিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। এইচডিআইয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলের মধ্যে আসামের অবস্থান কয়েক বছর আগেও ৩০তম ছিল। এই সূচকে আসামের অর্জন ০.৬০৫ এবং বাংলাদেশের ০.৬০৮। মাতৃমৃত্যুর হার আসামে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ, লাখে ৩২৮। নবজাতকের মৃত্যুহারও বাংলাদেশের চেয়ে আসামে প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে গড় আয়ুষ্কাল ৬২ বছর, বাংলাদেশে ৭২। মাথাপিছু আয়ে আসাম-বাংলাদেশ ব্যবধান বিপুল। এই লেখা তৈরির সময়ও আসামে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। এর মাঝে আবার মুসলমানপ্রধান এলাকাগুলো অধিক দরিদ্র। অন্যদিকে বাংলাদেশে ২০১৮-এর হিসাবে দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশ। এখন সেটা আরও কমেছে।
এসব তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে দলে দলে কাজের সন্ধানে আসাম যাওয়াকে সমর্থন করে না। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতার কারণেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে আসাম মোটেই আগ্রহোদ্দীপক স্থান নয়। আসামে অধিক বৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব নৈমিত্তিক ঘটনা। আসাম সরকারের হিসাবেই গত ৬০ বছরে সেখানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০৫০ সাল নাগাদ এটা ১ দশমিক ৭ থেকে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। একই সময়ে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ৩৮ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এ রকম একটা স্থান দরিদ্রদের বাড়তি আয়ের জন্য প্রলুব্ধ করে না। অন্তত বাংলাদেশের ‘দরিদ্র’দের ওদিকে যাওয়ার কোনো বাস্তব কারণ নেই। বাংলাদেশের শুমারি তথ্যেও জনসংখ্যার কোনো অস্বাভাবিক হ্রাস প্রমাণ করছে না।
জনসংখ্যাবিদ্যা কী বলছে
আসামের রাজনৈতিক সাহিত্যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ সম্পর্কে পুনঃপুন উল্লেখ করে বলা হয়, আসামে লাখ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গেছে পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ থেকে। সুদূর অতীত থেকেই এটা ঘটেছে, তবে অবিভক্ত পাকিস্তানের সময় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতিকালে এই অভিবাসন বাড়তি গতি পায়। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলের দুটি শুমারি দলিল এ ক্ষেত্রে তেমন ইঙ্গিত দেয় না। ১৯৫১ এবং ১৯৬১ সালের শুমারি দলিলে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল যথাক্রমে ৭৬১ ও ৯২২। আর ময়মনসিংহে এটা ছিল ৯৩১ ও ১ হাজার ১০৩।
ময়মনসিংহের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা এবং সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পূর্ব বাংলার গড় চিত্রের চেয়ে অনেক বেশি হারে অব্যাহত ছিল, যা পাকিস্তান শাসনামলে সেখান থেকে বিপুল জনসংখ্যার স্থানান্তরের সাক্ষ্য দেয় না। বিআইডিএসের এক গবেষণায় ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সময়ে জনসংখ্যার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে স্বাভাবিক গতিতে ৫ বছর পরপর ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্পষ্ট এবং নির্বিঘ্ন প্রবণতা দেখা যায়।
এ ছাড়া বিগত শতাব্দীতে ময়মনসিংহ ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকায় শুমারি দলিলগুলোকে দশকওয়ারি সাজালে এই বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতেও দেখা যায়, ময়মনসিংহসহ ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যার ঘনত্ব সব সময়ই জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক ওপরে ছিল।
এমন তথ্য-উপাত্ত হাতে থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে মানুষের আসামে যাওয়ার দাবিকে যৌক্তিক রাখতে আসামজুড়ে প্রচারণা চালানো হয় যে বাংলাদেশ খুব দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশে আসেননি, আসামের এমন অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, বাংলাদেশে গড় অর্থনৈতিক চিত্র অতি দারিদ্র্যময়। আসামে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবেশের কল্পিত কাহিনি নিয়মিত প্রচারের একটা সহায়ক তথ্য হিসেবে এটা শুরু হয়েছিল এবং তা অনেকাংশে সফল। বাংলাদেশে আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে গত তিন-চার দশকে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে, সে বিষয়ে আসামবাসী মোটেই অবহিত নয়। বৈধ-অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় নাগরিক যে বাংলাদেশে কাজ করছে, সে বিষয়েও আসামবাসীর কোনো ধারণা নেই। বরং সেখানে অনেকের কাছেই বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষময়, দুর্যোগপ্রবণ, সাম্প্রদায়িক এক জনপদ হিসেবে চিহ্নিত। এসব প্রচারণার সত্যাসত্য সম্পর্কে বাংলাদেশের উচিত নীরবতা ভাঙা। আসামবাসীর সামনে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা দরকার।
লেখক: গবেষক
ভারতে ২৮টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির তুলনা করলে সর্বভারতীয় পটভূমিতে আসামের অবস্থান সহজে বোঝা যায়। ভারতের জনসংখ্যায় আসামের হিস্যা (২০১১-এর হিসাবে) ২.৫৮ শতাংশ। আয়তনে হিস্যা ২.৩৯ শতাংশ। কিন্তু জিডিপিতে হিস্যা মাত্র ১.৭০ শতাংশ। আয়তন ও জনসংখ্যার সঙ্গে জিডিপির হিস্যাগত এই তুলনায় আসামের অবস্থান ভারতের প্রথম ১৫টি রাজ্যের মধ্যেও নয়। ১৯৫০-৫১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে আসাম ভারতীয় গড়ের চেয়ে ৫০ রুপি ওপরে ছিল। সত্তর বছর পরে ২০১৮ সালে দৃশ্যটি ছিল—ভারতে যখন মাথাপিছু আয় গড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৭০ রুপি, আসামে তা ৬৭ হাজার ৬২০ রুপি। বৃহত্তর ভারতের পটভূমিতে আসামের পিছিয়ে পড়ার একটা বড় কারণ নিহিত দেশটির সংবিধানেই। বিশেষত, কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের মাঝে।
অনেক সময় বলা হয়, আসাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা বলেই দরিদ্র। এরূপ প্রচারণাও চলে মূলত আসামের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের রাজনৈতিক অর্থনীতি আড়াল করে। বাস্তবে ভারতে ২০১৮ সালের জুনে ৬৪০টি জেলায় শুমারির ভিত্তিতে যে ‘দুর্যোগ সূচক’ তৈরি হয়, তাতে সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ রাজ্য ছিল যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশ। আসামের অবস্থান ছিল সেখানে সপ্তম। সমস্যাটি কাঠামোগত, কিন্তু রাজনৈতিক পণ্য হলো ‘বিদেশি খেদাও’।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলোর হাতে করের উৎস সীমিত। যেমন কৃষি আয় ও কৃষিজ ভূসম্পদের ওপর কর, মদজাতীয় পানীয়র ওপর আবগারি শুল্ক, যানবাহনের মতো স্বল্প আয়ের ক্ষেত্রগুলো ছাড়া আয়কর থেকে করপোরেট কর পর্যন্ত করের প্রধান উৎসগুলো কেন্দ্রের হাতেই। এসব আয় থেকে যদিও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোতে নানাভাবে বরাদ্দ দেয়; কিন্তু কর প্রক্রিয়াটির আইনগত ভিত্তি ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-১৯৩৫’-এর মতোই রয়েছে বলা যায়। ভারতকে ‘ফেডারেল রাষ্ট্র’ বলা হলেও করারোপ আর তা থেকে রাজ্যপ্রতি বরাদ্দ এবং এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার ধরনে রয়েছে অতিকেন্দ্রীভূত বৈশিষ্ট্যের ছাপ। কেন্দ্রের হাতে করের প্রধান উৎসগুলো রেখে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনের মতো খাতগুলোর দায়িত্ব বর্তেছে রাজ্য সরকারের ওপর। এমন পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেই আসামের অনেক সংগঠন স্থানীয় তরুণদের তাদের কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত করেছিল অতীতে। তবে একপর্যায়ে তারাও অর্থনৈতিক বঞ্চনা সংশোধনের প্রশ্ন বা প্রশাসনিক স্বশাসনের পরিবর্তে ‘বিদেশি খেদাও’ রাজনীতিতে আত্মসমর্পণ করে।
যে কারণে ‘বিদেশি’ প্রশ্ন সামনে
আসামের অর্থনীতির পিছিয়ে পড়া চরিত্রের সঙ্গে রাজ্যটির রাজনীতি ও রাজনৈতিক প্রশাসনের রয়েছে গভীর যোগ। আবার লোকসভায় মাত্র ১৪ জন সদস্য থাকায় আসাম ভারতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখতে পারে সামান্যই। ভারতের মধ্যে আসামের এই বিধিবদ্ধ সীমাবদ্ধতা রাজনীতির মঞ্চে আড়াল করে রাখা হয় সচেতনভাবে। তার বদলে নিয়মিতভাবে প্রধান প্রসঙ্গ করে রাখা হয়েছে জাতিগত বিবাদ এবং ‘অবৈধ অভিবাসন’ ইস্যুকে। বলা হয়, অবৈধ বিদেশিরাই আসামের অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি করে রেখেছে। আসামের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার চেয়ে জরুরি হলো অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো।
অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব থেকে ‘বিদেশি’ প্রশ্নে রাজনৈতিক প্রচারণার মোড় ঘোরানোর ফল হয়েছে তাৎপর্যময়। এর মাধ্যমে আসামে তরুণদের সামনে থেকে ‘প্রতিপক্ষ’ পাল্টে দেওয়া গেছে। জনগণের প্রায় ৭৫ শতাংশ জীবনযাত্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিসংশ্লিষ্ট হলেও আসামের অবিকশিত এই খাত থেকে নবীন প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছিল না। রাজ্যের জিডিপিতে কৃষি মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে। আবার সরকার বিকল্প খাত সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতেও ছিল অসমর্থ। রাজ্যটির জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের অবদান ১০ শতাংশের মতো। ভারতের অন্যত্র গড়ে তা আসামের দ্বিগুণ। ভারতের একটি রাষ্ট্রীয় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আসামে বছরে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করা দরকার। কিন্তু বাস্তবতা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ভারতের জাতীয় হারের চেয়ে আসামে বেকারত্বের হার তিন গুণ বেশি। এ রকম তরুণদের সামনে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের একটা কারণ হাজির করা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসামের রাজ্য সরকারের জন্য জরুরি ছিল। ‘বিদেশি’ প্রসঙ্গের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টার্গেট করে সেটাই সৃষ্টি করা গিয়েছিল।
কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের যাওয়ার বাস্তব কারণ নেই লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত ‘অবৈধ অভিবাসন’ নিয়ে উচ্চকিত হলেও নেপাল সীমান্তে তাদের অবস্থান তদ্রূপ নয়। অথচ নেপাল সীমান্তটি প্রায় উন্মুক্ত। বাংলাদেশ-আসাম সীমান্ত ২৬২ কিলোমিটার মাত্র, সেখানে নেপাল-ভারত সীমান্ত প্রায় সাত গুণ দীর্ঘ—১ হাজার ৭৫৮ কিলোমিটার। এই সীমান্ত পেরিয়ে এসে প্রচুর নেপালি ভারতে অবস্থানও করছে। কিন্তু তাদের ‘বিদেশি খেদাও’ধর্মী কোনো আন্দোলনের শিকার হতে হচ্ছে না।
উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বরাবরই অভিবাসীদের সস্তা শ্রমকে সহায়ক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অভিবাসন কোনো দেশের অর্থনীতিতে অভিশাপ না আশীর্বাদ, সে বিতর্ক আসামের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিকই মনে হয়। কারণ, আসামের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নই তোলা যায়, সেখানকার অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা আদৌ ব্যাপকভিত্তিক অভিবাসনের ধারণাকে সমর্থন করে কি? আরেকটি প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশিদের আসামে যাওয়ার কোনো অর্থনৈতিক বাস্তবতা আছে কি? এর সরাসরি উত্তর হলো, আসামের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক চিত্র বড় আকারে অভিবাসনের ধারণা সমর্থন করে না।
দরিদ্রদের জন্য আসাম কি প্রলুব্ধকর জায়গা
সাধারণভাবে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ও ভারত কাছাকাছি অবস্থানে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এইচডিআইয়ে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ছিল ১৩০ এবং বাংলাদেশের ১৩৬। ২০২২ সালে একই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯১ দেশের মধ্যে ১২৯, ভারতের ১৩২।
তবে ভারত-বাংলাদেশ কাছাকাছি থাকলেও আসামের সঙ্গে তুলনা করলে অধিকাংশ মৌলিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। এইচডিআইয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলের মধ্যে আসামের অবস্থান কয়েক বছর আগেও ৩০তম ছিল। এই সূচকে আসামের অর্জন ০.৬০৫ এবং বাংলাদেশের ০.৬০৮। মাতৃমৃত্যুর হার আসামে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ, লাখে ৩২৮। নবজাতকের মৃত্যুহারও বাংলাদেশের চেয়ে আসামে প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে গড় আয়ুষ্কাল ৬২ বছর, বাংলাদেশে ৭২। মাথাপিছু আয়ে আসাম-বাংলাদেশ ব্যবধান বিপুল। এই লেখা তৈরির সময়ও আসামে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। এর মাঝে আবার মুসলমানপ্রধান এলাকাগুলো অধিক দরিদ্র। অন্যদিকে বাংলাদেশে ২০১৮-এর হিসাবে দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশ। এখন সেটা আরও কমেছে।
এসব তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে দলে দলে কাজের সন্ধানে আসাম যাওয়াকে সমর্থন করে না। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতার কারণেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে আসাম মোটেই আগ্রহোদ্দীপক স্থান নয়। আসামে অধিক বৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব নৈমিত্তিক ঘটনা। আসাম সরকারের হিসাবেই গত ৬০ বছরে সেখানে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০৫০ সাল নাগাদ এটা ১ দশমিক ৭ থেকে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। একই সময়ে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ৩৮ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এ রকম একটা স্থান দরিদ্রদের বাড়তি আয়ের জন্য প্রলুব্ধ করে না। অন্তত বাংলাদেশের ‘দরিদ্র’দের ওদিকে যাওয়ার কোনো বাস্তব কারণ নেই। বাংলাদেশের শুমারি তথ্যেও জনসংখ্যার কোনো অস্বাভাবিক হ্রাস প্রমাণ করছে না।
জনসংখ্যাবিদ্যা কী বলছে
আসামের রাজনৈতিক সাহিত্যে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ সম্পর্কে পুনঃপুন উল্লেখ করে বলা হয়, আসামে লাখ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী গেছে পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ থেকে। সুদূর অতীত থেকেই এটা ঘটেছে, তবে অবিভক্ত পাকিস্তানের সময় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতিকালে এই অভিবাসন বাড়তি গতি পায়। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলের দুটি শুমারি দলিল এ ক্ষেত্রে তেমন ইঙ্গিত দেয় না। ১৯৫১ এবং ১৯৬১ সালের শুমারি দলিলে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল যথাক্রমে ৭৬১ ও ৯২২। আর ময়মনসিংহে এটা ছিল ৯৩১ ও ১ হাজার ১০৩।
ময়মনসিংহের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা এবং সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব পূর্ব বাংলার গড় চিত্রের চেয়ে অনেক বেশি হারে অব্যাহত ছিল, যা পাকিস্তান শাসনামলে সেখান থেকে বিপুল জনসংখ্যার স্থানান্তরের সাক্ষ্য দেয় না। বিআইডিএসের এক গবেষণায় ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সময়ে জনসংখ্যার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে স্বাভাবিক গতিতে ৫ বছর পরপর ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্পষ্ট এবং নির্বিঘ্ন প্রবণতা দেখা যায়।
এ ছাড়া বিগত শতাব্দীতে ময়মনসিংহ ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত থাকায় শুমারি দলিলগুলোকে দশকওয়ারি সাজালে এই বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতেও দেখা যায়, ময়মনসিংহসহ ঢাকা বিভাগের জনসংখ্যার ঘনত্ব সব সময়ই জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক ওপরে ছিল।
এমন তথ্য-উপাত্ত হাতে থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে মানুষের আসামে যাওয়ার দাবিকে যৌক্তিক রাখতে আসামজুড়ে প্রচারণা চালানো হয় যে বাংলাদেশ খুব দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশে আসেননি, আসামের এমন অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, বাংলাদেশে গড় অর্থনৈতিক চিত্র অতি দারিদ্র্যময়। আসামে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবেশের কল্পিত কাহিনি নিয়মিত প্রচারের একটা সহায়ক তথ্য হিসেবে এটা শুরু হয়েছিল এবং তা অনেকাংশে সফল। বাংলাদেশে আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে গত তিন-চার দশকে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে, সে বিষয়ে আসামবাসী মোটেই অবহিত নয়। বৈধ-অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় নাগরিক যে বাংলাদেশে কাজ করছে, সে বিষয়েও আসামবাসীর কোনো ধারণা নেই। বরং সেখানে অনেকের কাছেই বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষময়, দুর্যোগপ্রবণ, সাম্প্রদায়িক এক জনপদ হিসেবে চিহ্নিত। এসব প্রচারণার সত্যাসত্য সম্পর্কে বাংলাদেশের উচিত নীরবতা ভাঙা। আসামবাসীর সামনে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা দরকার।
লেখক: গবেষক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪