অনলাইন ডেস্ক
মূল্যস্ফীতি, সুদের হার ও শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির কৌতূহলোদ্দীপক বছর হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। গত কয়েক বছরে কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এটা স্থিতিশীল হার হলেও আশাপ্রদ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দিকে তাকালে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। বড়দিনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে লাখো আমেরিকান ঋণগ্রহীতারা এক উপহার পেয়েছিল, তা ছিল টানা তৃতীয়বার সুদের হার কমানো। কিন্তু মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের এক কথার কারণে সেই উপহার তেমন কাজে দেয়নি। তখন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে।
পাওয়েল সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, সুদের হার আরও কমানোর যে আশা জেগেছে, তা ২০২৫ সালে সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, মূল্যস্ফীতি ঠেকানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই নতুন বছরে সুদের হার কমানোর বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। এই মন্তব্য দ্রুতই বাজারে হতাশা ছড়িয়ে দেয়।
এদিকে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোজোন এবং যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। তাদের সবারই লক্ষ্য মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশে বেঁধে রাখা।
জেপি মরগান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের বিশ্ব অর্থনীতি গবেষণা শাখার প্রধান লুইস ওগানেস বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অনিশ্চয়তা। এর কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতি। বিশেষ করে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী ঘটতে পারে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।
গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার দেশ চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লুইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক বেশি “একলা চলো” অবস্থান নিয়েছে। শিল্প খাত রক্ষায় অতিরিক্ত রক্ষণশীল হচ্ছে, শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব নীতি স্বল্প মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর হবে।’
নতুন শুল্ক আরোপ মেক্সিকো ও কানাডার জন্য ভয়াবহ পরিণতি আনতে পারে বলে মনে করছেন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের মরিস অবস্টফেল্ড। তিনি আইএমএফের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই শুল্ক আরোপের কারণে কেবল মেক্সিকো ও কানাডা নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের কথা তুলে ধরেন মরিস। তিনি বলেন, গাড়ি শিল্পের বিস্তৃত সরবরাহ ব্যবস্থার অংশ এই তিন দেশ। শুল্ক আরোপসহ নানা বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের মুখে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এর ফলে গাড়ির বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
মরিস বলেন, নতুন শুল্ক আরোপ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে ভোক্তাদের চাহিদা কমে যেতে পারে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগও কমতে থাকবে।
তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় এ ধরনের শুল্ক আরোপ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য বেশ ক্ষতিকর। এর ফলে বিশ্ব মন্দার মধ্যে পড়তে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এরই মধ্যে এ দেশগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অন্যদিকে চীনও নিজেদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অধিকাংশ পণ্য বাণিজ্য শুল্কের আওতায় এনেছিলেন। এবারও নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা আগামী বছরগুলোতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। নতুন বছরের ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছেন। তবে দেশের অর্থনীতি ‘ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়’ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
চীনের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত সস্তা দামের পণ্য রপ্তানির ওপর দেশটির অর্থনীতি নির্ভরশীল। শুল্ক আরোপের কারণে দাম বেড়ে গেলে এসব পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। ফলে নতুন সমস্যার মুখে পড়বে চীন। এমনিতেই দেশটি দুর্বল ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগে ঘাটতির মধ্যে আছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চীনের প্রচেষ্টার ইতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরের পূর্বাভাসে ২০২৫ সালে চীনের প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ধরেছে বিশ্বব্যাংক। আগের পূর্বাভাসে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল। তবে বেইজিং এখনো নতুন বছরের প্রবৃদ্ধির নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেনি। গত বছর নির্ধারিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের চেষ্টা করছে এখনো।
বিশ্বব্যাংকের চীনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারা ওয়ারউইক মনে করেন, আবাসন খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় সরকারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন—এই তিনটি দিক দেশটির টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল হার্ট বলেন, অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যার সমাধানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং বাইডেন প্রশাসনের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চীন থেকে কারখানা অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করছে।
তবে মাইকেল হার্ট বলেন, কোম্পানিগুলো ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা হিসেবে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে ৩০-৪০ বছর সময় নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে চীন। আর কেউ এখনো বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি।
তবে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান অস্ত্রে পরিণত হয়েছে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) শিল্প। গত বছর এক কোটিরও বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেছে চীন। আর বাজারে এমন আধিপত্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চীনের ওপর কঠোর শুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে এর বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ করেছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, এই শুল্ক আরোপ অন্যায্য।
চীনকে ছাড়িয়ে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ঐতিহ্যগতভাবে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি দুই দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স। তবে, এই দুই দেশে গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে ইইউর সামগ্রিক অর্থনীতিতে। প্রবৃদ্ধির সামান্য উত্থান দেখা গেলেও ইউরোজোনের অর্থনীতি আগামী বছর গতি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ভোক্তাদের ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের এক জরিপে দেখা যায়, দেশটিতে কর ও মজুরি বাড়ার কারণে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার কমানোর চেষ্টা করে আসছে ইউরোজোন। কিন্তু এ প্রচেষ্টায় বড় বাধা মূল্যস্ফীতি, যা ৪ দশমিক ২ শতাংশে রয়েছে। এটিকে ২ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। মজুরি বৃদ্ধির চাপ বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি বাগে আনা আরও কঠিন হচ্ছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড গত মাসে বলেন, বাণিজ্যে বিধিনিষেধ এবং রক্ষণশীল নীতি প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। মূল্যস্ফীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও স্বল্প মেয়াদে এটি যে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি প্রায়ই একই রকম বলে মনে করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিয়োগ প্রতিষ্ঠান রানস্টাডের প্রধান নির্বাহী স্যান্ডার ভ্যানটি নুর্ডেন্ডে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের আশপাশেই থাকবে। পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশে এটি আরও বেশি।
তাঁর মতে, এর পেছনে দুটি কারণ আছে। একটি হলো দক্ষ কর্মীর ঘাটতি এবং অন্যটি হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কর্মীরাও বেশি বেতন দাবি করছে।
নুর্ডেন্ডে আরও বলেন, অনেক কোম্পানি বেতনের বাড়তি খরচ তাদের গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে।
রানস্টাডের প্রধান নির্বাহী মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে উদ্দীপনার অভাব বিশ্ব শ্রমবাজারে ধীর গতি নিয়ে আসছে। আর গতিশীল শ্রমবাজার তৈরির জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই মূল চাবিকাঠি।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি যদি ভালো থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়তে থাকে। তারা কর্মী নিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ কাজের নতুন সুযোগ পেতে শুরু করে। তখন শ্রমবাজারও গতিশীল হয়ে ওঠে।’
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েই একগুচ্ছ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তিনি। এর মধ্যে আছে—কর ছাঁটাই ও নিয়মনীতি শিথিলের পরিকল্পনা। আশা করা হচ্ছে, এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।
জেপি মরগানের লুইস ওগানেস বলেন, ‘সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া স্বভাব বজায় থাকবে, আর এর জন্য মূল্য দিতে হবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে।’
লুইসের আশা, এ বছর বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার কমতে পারে। তবে এর অনেকটাই নির্ভর করবে কী ধরনের নীতি প্রয়োগ করা হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কী করে তা ওপর।
মূল্যস্ফীতি, সুদের হার ও শুল্কের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির কৌতূহলোদ্দীপক বছর হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। গত কয়েক বছরে কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এটা স্থিতিশীল হার হলেও আশাপ্রদ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দিকে তাকালে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। বড়দিনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে লাখো আমেরিকান ঋণগ্রহীতারা এক উপহার পেয়েছিল, তা ছিল টানা তৃতীয়বার সুদের হার কমানো। কিন্তু মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের এক কথার কারণে সেই উপহার তেমন কাজে দেয়নি। তখন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে।
পাওয়েল সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, সুদের হার আরও কমানোর যে আশা জেগেছে, তা ২০২৫ সালে সম্ভব না-ও হতে পারে। কারণ, মূল্যস্ফীতি ঠেকানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই নতুন বছরে সুদের হার কমানোর বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। এই মন্তব্য দ্রুতই বাজারে হতাশা ছড়িয়ে দেয়।
এদিকে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোজোন এবং যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। তাদের সবারই লক্ষ্য মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশে বেঁধে রাখা।
জেপি মরগান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের বিশ্ব অর্থনীতি গবেষণা শাখার প্রধান লুইস ওগানেস বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অনিশ্চয়তা। এর কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতি। বিশেষ করে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী ঘটতে পারে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই।
গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার দেশ চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
লুইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক বেশি “একলা চলো” অবস্থান নিয়েছে। শিল্প খাত রক্ষায় অতিরিক্ত রক্ষণশীল হচ্ছে, শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব নীতি স্বল্প মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর হবে।’
নতুন শুল্ক আরোপ মেক্সিকো ও কানাডার জন্য ভয়াবহ পরিণতি আনতে পারে বলে মনে করছেন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের মরিস অবস্টফেল্ড। তিনি আইএমএফের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই শুল্ক আরোপের কারণে কেবল মেক্সিকো ও কানাডা নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের কথা তুলে ধরেন মরিস। তিনি বলেন, গাড়ি শিল্পের বিস্তৃত সরবরাহ ব্যবস্থার অংশ এই তিন দেশ। শুল্ক আরোপসহ নানা বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের মুখে এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এর ফলে গাড়ির বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
মরিস বলেন, নতুন শুল্ক আরোপ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে ভোক্তাদের চাহিদা কমে যেতে পারে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগও কমতে থাকবে।
তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় এ ধরনের শুল্ক আরোপ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য বেশ ক্ষতিকর। এর ফলে বিশ্ব মন্দার মধ্যে পড়তে পারে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এরই মধ্যে এ দেশগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অন্যদিকে চীনও নিজেদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অধিকাংশ পণ্য বাণিজ্য শুল্কের আওতায় এনেছিলেন। এবারও নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা আগামী বছরগুলোতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। নতুন বছরের ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছেন। তবে দেশের অর্থনীতি ‘ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়’ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
চীনের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত সস্তা দামের পণ্য রপ্তানির ওপর দেশটির অর্থনীতি নির্ভরশীল। শুল্ক আরোপের কারণে দাম বেড়ে গেলে এসব পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। ফলে নতুন সমস্যার মুখে পড়বে চীন। এমনিতেই দেশটি দুর্বল ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগে ঘাটতির মধ্যে আছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চীনের প্রচেষ্টার ইতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বরের পূর্বাভাসে ২০২৫ সালে চীনের প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ধরেছে বিশ্বব্যাংক। আগের পূর্বাভাসে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল। তবে বেইজিং এখনো নতুন বছরের প্রবৃদ্ধির নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেনি। গত বছর নির্ধারিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের চেষ্টা করছে এখনো।
বিশ্বব্যাংকের চীনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারা ওয়ারউইক মনে করেন, আবাসন খাতের সংকট কাটিয়ে ওঠা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় সরকারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন—এই তিনটি দিক দেশটির টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল হার্ট বলেন, অভ্যন্তরীণ এসব সমস্যার সমাধানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানতে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং বাইডেন প্রশাসনের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চীন থেকে কারখানা অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করছে।
তবে মাইকেল হার্ট বলেন, কোম্পানিগুলো ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা হিসেবে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে ৩০-৪০ বছর সময় নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে চীন। আর কেউ এখনো বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি।
তবে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান অস্ত্রে পরিণত হয়েছে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) শিল্প। গত বছর এক কোটিরও বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেছে চীন। আর বাজারে এমন আধিপত্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চীনের ওপর কঠোর শুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে এর বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ করেছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, এই শুল্ক আরোপ অন্যায্য।
চীনকে ছাড়িয়ে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ঐতিহ্যগতভাবে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি দুই দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স। তবে, এই দুই দেশে গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে ইইউর সামগ্রিক অর্থনীতিতে। প্রবৃদ্ধির সামান্য উত্থান দেখা গেলেও ইউরোজোনের অর্থনীতি আগামী বছর গতি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে ভোক্তাদের ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের এক জরিপে দেখা যায়, দেশটিতে কর ও মজুরি বাড়ার কারণে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার কমানোর চেষ্টা করে আসছে ইউরোজোন। কিন্তু এ প্রচেষ্টায় বড় বাধা মূল্যস্ফীতি, যা ৪ দশমিক ২ শতাংশে রয়েছে। এটিকে ২ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। মজুরি বৃদ্ধির চাপ বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি বাগে আনা আরও কঠিন হচ্ছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড গত মাসে বলেন, বাণিজ্যে বিধিনিষেধ এবং রক্ষণশীল নীতি প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। মূল্যস্ফীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও স্বল্প মেয়াদে এটি যে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি প্রায়ই একই রকম বলে মনে করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিয়োগ প্রতিষ্ঠান রানস্টাডের প্রধান নির্বাহী স্যান্ডার ভ্যানটি নুর্ডেন্ডে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের আশপাশেই থাকবে। পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশে এটি আরও বেশি।
তাঁর মতে, এর পেছনে দুটি কারণ আছে। একটি হলো দক্ষ কর্মীর ঘাটতি এবং অন্যটি হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কর্মীরাও বেশি বেতন দাবি করছে।
নুর্ডেন্ডে আরও বলেন, অনেক কোম্পানি বেতনের বাড়তি খরচ তাদের গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে।
রানস্টাডের প্রধান নির্বাহী মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে উদ্দীপনার অভাব বিশ্ব শ্রমবাজারে ধীর গতি নিয়ে আসছে। আর গতিশীল শ্রমবাজার তৈরির জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই মূল চাবিকাঠি।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি যদি ভালো থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়তে থাকে। তারা কর্মী নিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ কাজের নতুন সুযোগ পেতে শুরু করে। তখন শ্রমবাজারও গতিশীল হয়ে ওঠে।’
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েই একগুচ্ছ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তিনি। এর মধ্যে আছে—কর ছাঁটাই ও নিয়মনীতি শিথিলের পরিকল্পনা। আশা করা হচ্ছে, এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।
জেপি মরগানের লুইস ওগানেস বলেন, ‘সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া স্বভাব বজায় থাকবে, আর এর জন্য মূল্য দিতে হবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে।’
লুইসের আশা, এ বছর বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার কমতে পারে। তবে এর অনেকটাই নির্ভর করবে কী ধরনের নীতি প্রয়োগ করা হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কী করে তা ওপর।
ঋণের বোঝায় জর্জরিত ছিল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, এর মূল কারণ ছিল মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অযৌক্তিক প্রকল্প গ্রহণ। সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের দেশি-বিদেশি মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণা
৭ ঘণ্টা আগেচাহিদা বাড়ায় গত কয়েক মাসে এয়ারলাইনসগুলোর টিকিটের মূল্য বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বাড়তি এ ব্যয়ের পুরো বোঝা বহন করতে হচ্ছে প্রবাসী কর্মীসহ সাধারণ যাত্রীদের। এ অবস্থায় টিকিটের দাম সহনীয় রাখতে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী...
১৩ ঘণ্টা আগেনতুন বাজেট আসার বেশ আগেই চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মাঝপথে অর্ধশত পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। ফলে এসব পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে। তাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরও বেড়ে যেতে
১৫ ঘণ্টা আগেআগামী অর্থবছর আসতে বাকি এখনো প্রায় ৬ মাস। কিন্তু তার আগেই অধ্যাদেশ জারি করে প্রায় অর্ধশত পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। আর ভ্যাট বাড়ায় বাড়তে যাচ্ছে
১৫ ঘণ্টা আগে